একুশের কবিতা (Akusher Kobita) প্রশ্ন উত্তর | Class 7 | WBBSE
একুশের কবিতা
১। এই কবিতায় কিছু চন্দ্রবিন্দু- যুক্ত শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। 'কাঁপলো' এবং 'দাঁড়িয়েছেন'। প্রসঙ্গত দুটি শব্দই ক্রিয়া। চন্দ্রবিন্দু দিয়ে শুরু এমন পাঁচটি অন্য ক্রিয়া ব্যবহার করে পাঁচটি বাক্য লেখো। একটি করে দেওয়া হলো, 'হাঁটা'।
উত্তর -
ক্রিয়া |
বাক্যরচনা |
হাঁটা |
পড়ন্ত বিকেলে হাঁটাহাঁটির মজাটাই আলাদা। |
খোঁজা |
সকাল থেকে তাকে খোঁজা হচ্ছে। |
বাঁধলো |
সে তো আমার দড়ি দিয়েই ছাগলটা বাঁধলো। |
বাঁচালো |
আজ ফটিক আমাকে স্যারের হাত থেকে বাঁচালো। |
কাঁদানো |
একটি বাচ্চা কে লোভ দেখিয়ে কাঁদানো উচিত নয়। |
২। গুঙ্গুনঃ মৌমাছি যেভাবে ডানার একটানা আওয়াজ করে, তাকে গুনগুন বলে। বাস্তব ধ্বনির অনুকরণে তৈরি হওয়া এই ধরনের শব্দকে বলে অনুকারী বা ধ্বন্যাত্মক শব্দ। নীচে কয়েকটি ধ্বন্যাত্মক শব্দ শিখে নিতে পারবে।
ক |
খ |
পাখা |
বন বন করে ঘুরছে। |
মাছিটা |
ভন ভন করে উড়ছিলো। |
হাওয়া |
সন সন করে বইছে। |
নদী |
চলছে কল কল করে। |
কাচের |
বাসনগুলো ঝন ঝন করে ভেঙে গেল। |
বাজ |
পড়ল কড় কড় শব্দ করে । |
পটকা |
ফাটছিল দুম দাম করে । |
বৃষ্টি |
পড়ছিল ঝর ঝর করে। |
কাগজটা |
ফর ফর করে ছিঁড়ে গেল |
কয়েকটা তাল |
পড়ল ধুপ ধাপ করে। |
৩। 'আমার মায়ের গাওয়া কত না গানের কলি' - এখানে 'মায়ের গাওয়া' শব্দবন্ধটি একটি বিশেষণের কাজ করছে। এরকম আরো অন্তত পাঁচটি তৈরি করো। একটি করে দেওয়া হলো, 'মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়'
উত্তর - স্যারের লেখা বই, বাবার করা শাসন, মায়ের গাওয়া গান, দাদুর লেখা বই, বোনের পড়া কবিতা, ভাইয়ের আঁকা ছবি।
৪। নীচের বিশেষ্যগুলিকে বিশেষণে ও বিশেষণগুলিকে বিশেষ্যে পরিবর্তন করে বাক্য রচনা করোঃ
সুর, দেশ, মাঠ, বন, মিষ্টি, মুখর, ইতিহাস, ফুল।
উত্তর -
বিশেষ্য |
বিশেষণ |
বাক্যরচনা |
সুর |
সুরেলা |
রিমার সুরেলা গান শুনে আমরা সবাই মুগ্ধ। |
দেশ |
দেশি |
আজ আমাদের দেশি মুরগির রান্না হচ্ছে। |
মাঠ |
মেঠো |
আজ আমরা মেঠো পথের ভ্রমনে বেড়িয়েছি। |
বন |
বুনো |
বুনো হাঁসের দল উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে উড়ে চলেছে। |
মিষ্টতা |
মিষ্টি |
মেয়েটির মুখের মিষ্টতা সকলকে আকর্ষিত করছে। |
মুখর |
মুখরতা |
মেয়েটির মুখরতা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। |
ইতিহাস |
ঐতিহাসিক |
মুর্শিদাবাদে এখনও অনেক ঐতিহাসিক স্থান আছে। |
ফুল |
ফুলেল |
আমার বোন ফুলেল তেল পছন্দ করে। |
৫। 'রব' শব্দটিকে একবার বিশেষ্য এবং একবার ক্রিয়া হিসেবে দুটি আলাদা বাক্যে ব্যবহার করে দেখাও ।
উত্তর -
রব |
বিশেষ্য হিসেবে |
রাতের বেলা ঝিঁঝিঁ পোকার রব শোনা যায়। |
ক্রিয়া হিসেবে |
তুমি রবে নিরবে হৃদয়ে মম। |
৬। 'কলি', 'সুর', 'পাল' - শব্দগুলিকে দুটি করে ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করে আলাদা বাক্যে লেখো।
উত্তর -
কলি |
কুঁড়ি |
আজ ফুলগাছে নতুন কুঁড়ি এসেছে। |
কবিতা বা গানের চরণ |
চৈতি, আজ দু কলি গান শোনা। |
|
সুর |
গানের স্বর |
রিমার গলার সুর খুব মিষ্টি। |
দেবতা |
সর্বশেষে অসুরের হার সুরের জয় হয়। |
|
পাল |
নৌকার মাস্তুলের কাপড় |
ঝড়ের কবলে পড়ে নৌকার পাল টা ছিঁড়ে যাওয়ার অবস্থা। |
দল |
ভেড়ার পালটা এদিকেই এগিয়ে আসছে। |
৭। 'মুখ' শব্দটিকে পাঁচটি আলাদা অর্থে ব্যবহার করে পাঁচটি আলাদা বাক্য লেখো।
উত্তর -
মুখ |
মুখমণ্ডল অর্থে |
মেয়েটির মুখ ভারী মিষ্টি। |
তর্ককরা অর্থে |
মুখে মুখে কথা বলা বন্ধ করো। |
|
গৌরবলান্বিত করা |
তুই বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবি। |
|
বলা অর্থে |
একথা মুখেও আনাও পাপ। |
|
তিরস্কার অর্থে |
লোকের কাছে মুখ ঝামটা খাওয়া ওর স্বভাব। |
৮. প্রত্যয় নির্ণয় করো :
কথকতা, মুর্শিদি, মুখর,
কথকতা - কথক + তা প্রত্যয়
মুর্শিদি - মুর্শিদ + ই প্রত্যয়
মুখর - মুখ + র প্রত্যয়
৯. নিম্নরেখ অংশগুলির কারক-বিভক্তি নির্ণয় করো :
৯.১ পাখি সব করে রব।
উত্তর - কর্তৃকারকে 'শূন্য' বিভক্তি।
৯.২ কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিল।
উত্তর - অধিকরণকারকে 'এ' বিভক্তি।
৯.৩ তাই তো সহস্র পাখির কলতানে আজ দিগন্ত মুখর।
উত্তর - কর্তৃকারকে 'শূন্য' বিভক্তি।
৯.৪ তিনি বাংলাভাষায় কথা বলতে বড়ো ভালোবাসেন।
উত্তর - কর্মকারকে 'শূন্য' বিভক্তি।
৯.৫ রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে।
উত্তর - কর্তৃকারকে 'শূন্য' বিভক্তি।
১০.১। "পাখি সব করে রব" - উদ্ধৃতাংশটি কার লেখা কোন কবিতার অংশ? কবিতাটি তাঁর লেখা কোন বইতে রয়েছে?
উত্তর - “পাখি সব করে রব” উদ্ধৃতাংশ টি মদনমোহন তর্কালঙ্কার এর লেখা ‘প্রভাতবর্ণন’ কবিতার অংশ। কবিতাটি তাঁর লেখা ‘শিশুশিক্ষা’(প্রথম ভাগ) থেকে গৃহীত।
১০.২। এই পঙক্তিটি পাঠের সুরকে 'মন্ত্রের মতো' বলা হয়েছে কেন?
উত্তর - এই পঙক্তিটি পাঠে মনের মধ্যে মন্ত্র পাঠের মতোই স্বর্গীয় অনুভূতির সৃষ্টি হয়। তাই একে মন্ত্রের মতো বলা হয়েছে।
১০.৩। এই সুরকে কেন 'স্মৃতির মধুভান্ডার' বলা হয়েছে? তা কবির মনে কোন স্মৃতি জাগিয়ে তোলে?
উত্তর - শৈশব কালে পাঠশালায় কবিতাটি পাঠ করার স্মৃতি জড়িয়ে থাকার জন্য এই সুরকে কবি ‘স্মৃতির মধুভাণ্ডার’ বলেছেন।
এই শৈশব স্মৃতি কবির মনে বাংলার এক সুন্দর ছবি জাগিয়ে তুলেছে। বাংলার মাঠ-ঘাট-বাট-হাট-বন, পাখির কলতান, লোকগান এসবের মধ্য দিয়ে বাংলা মায়ের মুখ কবির মনের ভেতর স্মৃতি জাগিয়ে তোলে।
১০.৪। "সেই আমার দেশ - মাঠ - বন - নদী" - দুই বঙ্গ মিলিয়ে তিনটি অরণ্য ও পাঁচটি নদীর নাম লেখো।
উত্তর - অরণ্যঃ – সুন্দরবন অভয়ারণ্য (পশ্চিমবঙ্গ), গোরুমারা অভয়ারণ্য (পশ্চিমবঙ্গ),রামসাগর জাতীয় উদ্যান (বাংলাদেশ), ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান(বাংলাদেশ), মধুপুর
জাতীয় উদ্যান(বাংলাদেশ)।
নদীঃ – পদ্মা (বাংলাদেশ),যমুনা (বাংলাদেশ), মেঘনা (বাংলাদেশ), ব্রহ্মপুত্র (বাংলাদেশ),গঙ্গা (পশ্চিমবঙ্গ), দামোদর (পশ্চিমবঙ্গ)।
১০.৫। টীকা লেখোঃ জারি, সারি, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, বিন্নি ধান, কথকতা, রুপকথা।
উত্তর -
জারি - জারি হল বাংলার মুসলমানি পল্লীসংগীত বিশেষ। ফার্সি জারি শব্দের অর্থ শোক। মুহাররম মাসে কারবালার বিয়োগান্তক কাহিনীর স্মরণে মূলত এই গানের উদ্ভব। ১৭শ শতক থেকে বাংলায় এই গানের ধারা শুরু হয়।
সারি - সারি গান আবহমান বাংলার লোকসঙ্গীত। শ্রমিক ও কর্মজীবীদের মাঝে বিশেষ জনপ্রিয় হওয়ায় সারি গান 'শ্রম-সঙ্গীত' বা 'কর্ম-সঙ্গীত' নামেও পরিচিত। ছাদ পেটানোর সময় এ গান গাওয়া হয় বলে এঁকে ছাদ পেটানোর গান ও বলা হয়। সারি গান নৌকার মাঝি-মাল্লাদের মধ্যেই বেশি প্রচলিত।
ভাটিয়ালি - ভাটিয়ালী বাংলাদেশ এবং ভারতের ভাটি অঞ্চলের জনপ্রিয় গান। বাংলাদেশে বিশেষকরে নদ-নদী পূর্ণ ময়মনসিংহ অঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তর-পূর্ব দিকের অঞ্চলগুলোতে ভাটিয়ালী গানের মূল সৃষ্টি, চর্চাস্থল এবং সেখানেই এই লোকসঙ্গীতের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। বাউলদের মতে ভাটিয়ালী গান হলো তাদের প্রকৃতিতত্ত্ব ভাগের গান।ভাটিয়ালী গানের মূল বৈশিষ্টা হলো এ গানগুলো রচিত হয় মূলত মাঝি, নৌকা, দাড়, গুন ইত্যাদি বিষয়ে। সাথে থাকে গ্রামীণ জীবন, গ্রামীণ নারীর প্রেমপ্রীতি, ভালবাসা, বিরহ, আকুলতা ইত্যাদির সম্মিলন।
মুর্শিদি - মুর্শিদি হল পিরের গান। মুসলমান সাধু ও মহাপুরুষকে পির বলা হয়। যথা, 'সত্যপির'। এটি বাস্তববিষয়ক একধরনের দেহতত্ত্বের গানও বটে।
বিন্নিধান - বিন্নিধান একধরনের আউশ ধান। নীচু জলা জমিতে এর চাষ। বিশেষত, পূর্ববঙ্গে এই ধানের খই খুব ভালো হয়।
কথকতা - রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ ইত্যাদি গ্রন্থের পাঠ ব্যাখ্যা করার যে কাজ তাকে বলা হয় কথকতা। এই কথকতার কাজটি যিনি করেন, তাঁকে বলে, 'কথক' বা 'কথকঠাকুর'।
রূপকথা - ছেলেভোলানো অবাস্তব কল্পনামূলক কাহিনিকে বলা হয় 'রূপকথা'। এই কাহিনিতে রাক্ষস-রাক্ষসীরা থাকে। থাকে ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী পাখি। আর থাকে রাজকুমারী এবং অবশ্যই রাজকুমার। এরা কেউই বাস্তবে নয়, সবাই কাল্পনিক।
১০.৬। তোমার জানা দুটি পৃথক লোকসংগীতের ধারার নাম লেখো।
উত্তর - ভাদু গান, টুসু গান, ঝুমুর, ভাওয়াইয়া, সারি গান, কীর্তন
১০.৭ ‘ইতিহাস থমকে দাঁড়িয়ে লিখে নিলো সব”–‘সব' বলতে এখানে কী কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর - কবি এখানে ‘সব’ বলতে ভাষা আন্দোলনে প্রাণদানকারী শহিদদের কথা
বোঝানো হয়েছে।
১০.৮ ‘তাই তো সহস্র পাখির কলতানে আজ দিগন্ত মুখর’—‘সহস্র পাখি' কাদের বলা হয়েছে?
উত্তর - ‘সহস্র পাখি' বলতে কবি
এখানে মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শহিদদের বুঝিয়েছেন।
11. ব্যাখ্যা
করো :
11.১ ‘কয়েকটি পাখি.....পড়ে
গেল মাটিতে।
উত্তর - কবি আশরাফ সিদ্দিকী তাঁর ‘একুশের কবিতা' শীর্ষক কবিতায়
উপরোক্ত পক্তিটিতে বলছেন, বিন্নি ধানের খেতে পাখিরা গুনগুন করে উড়ে বেড়াচ্ছিল। হঠাৎ
বন্দুকের গুলির আওয়াজে পাখির রব বন্ধ হয়ে তারা মৃত্যুর মুখে পতিত হল। কবি তাঁর ওই
ব্যঞ্জনাময় উক্তির মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে বলতে চেয়েছেন যে, বাংলাদেশে মাতৃভাষার অধিকার
নিয়ে দেশের সংগ্রামী বীর যুবক শাসকের বিরুদেধ প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিলেন তাঁদের ওপর
কাকভোরে নেমে এসেছে নিষ্ঠুর পাকিস্তানি শাসকের গুলির মর্মান্তিক আঘাত। মাতৃভাষার মর্যাদা
রাখতে গিয়ে তাঁরা শহিদ হয়ে গেলেন।
11.২ ‘সেই শোকে কালবৈশাখীর
ঝড় উঠলো আকাশে।’
উত্তর - ওপরের পঙক্তিটি গৃহীত হয়েছে কবি আশরাফ সিদ্দিকীর
লেখা ‘একুশের কবিতা' থেকে। শাসকদের হঠাৎ গুলিতে পাখিদের মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল হয়ে
মধ্যগগনের সূর্যকে কালো মেঘে ঢেকে অন্ধকার করে কালবৈশাখীর আগমন ঘটে। কালবৈশাখীর ক্ষণিকের
আগমনে মাঠ, ঘাট, বাট, হাট, বন, মন সবকিছুই কেঁপে ওঠে। বাস্তবে এই কথাগুলির মাধ্যমে
কবি স্পষ্ট বলেছেন, বাংলাদেশে মাতৃভাষা মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যেভাবে ছাত্র ও
বুদ্ধিজীবী যোগ দিয়েছিলেন তাদের ওপর নিষ্ঠুর শাসকের নির্বিচারে অত্যাচার নেমে আসে।
তারই প্রতিবাদে বাংলাদেশের ব্যাপক জনগণ যে শোকমিছিল আয়োজন করেছিলেন তা যেন প্রকৃতির
বুকে কালবৈশাখীর ঝড়ের পূর্বাভাস রূপে প্রতিভাত হয়েছিল।
11.৩ ‘কথায় কথায় কথকতা
কতো রূপকথা'।
উত্তর - কবি আশরাফ সিদ্দিকী লিখিত
'একুশের কবিতা' শীর্ষক আমাদের পাঠ্যাংশ থেকে ওপরোদ্ধৃত কথাগুলি নেওয়া হয়েছে। রূপকথার
গল্প ছোটোবড়ো সকলেই ভালোবাসে। সেই গল্প যদি নিজের মায়ের মুখে শোনা যায় তাহলে তো
আনন্দের আর শেষ নেই। আসলে এই রূপকথার মধ্যেই আছে আমাদের ভাষা আন্দোলনে শহিদ হওয়ার
গৌরবময় ইতিহাস। তা আজ রূপকথার ঢঙে মায়েদের মুখে মুখে প্রচলিত। মাতৃভাষা আমাদের মায়ের সমান। শৈশবে এই মাতৃভাষার কথকতা, রুপকথার গল্প আজও কবির স্মৃতির মধুভাণ্ডারে উজ্জ্বল হয়ে আছে।
11.৪ ‘তাই তো আজ দ্যাখো এ মিছিলে এসে দাঁড়িয়েছেন আমার মা।'
উত্তর - বাংলার জনপ্রিয় কবি আশরাফ সিদ্দিকীর লেখা 'একুশের কবিতা' শীর্ষক পাঠ্যাংশ থেকে ওপরের পক্তিটি নেওয়া হয়েছে। কবির কথায় দেশমাতার অপর নাম হল মাতৃভাষা। ভাষা আমাদের মায়ের সমান। ভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে যে আন্দোলন হয় তার মিছিলে স্বয়ং মাতৃভাষার উপস্থিতি কবি অনুভব করেছেন আলোচ্য কবিতাটির মধ্য দিয়ে। এই মিছিল হল বাংলাভাষাকে উপযুক্ত মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার মিছিল। এ মিছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের মিছিল। মাতৃভাষা ভুলে গিয়ে বিদেশি ভাষা শেখানোর যে বাধ্যতামূলক চাপ তার বিরুদেধ চরম ধিক্কারের মিছিল। কবি তাঁর কবিতায় এই মিছিলের মধ্যে যোগদানকারী বাংলার সমস্ত মায়েদেরকে রূপকল্প হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
১2. আট-দশটি বাক্যে উত্তর দাও :
12.১ এই কবিতায় ‘পাখি’-শব্দের ব্যবহার কতখানি সার্থক হয়েছে তা কবিতার বিভিন্ন পক্তি উদ্ধৃত করে আলোচনা করো ।
উত্তর - আশরাফ সিদ্দিকী 'একুশ
কবিতা' লিখতে গিয়ে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের লেখা 'প্রভাতবর্ণন' কবিতার প্রথম দুটি লাইন
উল্লেখ করেছেন, যেটি তিনি ছোটবেলায় স্কুলে প্রথম পড়েছিলেন। প্রতিদিন রাতের আঁধার
দূর হয় পাখির গান আর ভোরের আলোয়। আমরা পাখিদের গানে জেগে উঠলাম। বিন্নি ধানের ধারে
আবারও গুলির শব্দে পাখির গান শেষ হয়। আর হাজার হাজার পাখি সর্বত্র গান গাইছিল। আমরা
দেখতে পাই দিন শেষে পাখিরা ঘরে ছুটে আসছে। এই মুহুর্তে, পাখির গানের সাথে সূর্য অস্ত
যাওয়ার সাথে সাথে রাতের অন্ধকার নেমে আসে।
12.২ কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
উত্তর - শৈশবে স্কুলে পড়া কবিতার
কথা স্মরণ করে কবি আশরাফ সিদ্দিকী বলেছেন: আমরা বাংলাদেশে (আগের পূর্ব বাংলা বা বর্তমান
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ) বাস করি। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। এই মাতৃভাষা আমাদের জন্মভূমি।
আমরা আমাদের মাতৃভাষাকে মায়ের মতো ভালোবাসি। মদনমোহন তর্কালঙ্কার শিশুশিক্ষার 'প্রভাতবর্ণন'
(প্রথম খণ্ড) কবিতার প্রথম দুটি স্তবকের ('পাখি সব করে রব......') উল্লেখ করে কবি আশরাফ
সিদ্দিকী ২১ ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্মরণ করেন এবং তার
জন্য উদ্দেশ্য' একুশটি কবিতা রচনা করেছেন। এই দিক দিয়ে বিচার করলে বলা যায়, কবিতাটির
নামটি সঠিক ও অর্থবহ। প্রসঙ্গত, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি খাজা নাজিমউদ্দিন সরকারি
পুলিশ পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করে।
১3. শুধু মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়বদ্ধতার প্রকাশ নয়, এই কবিতায় রয়েছে আবহমানের ও অমরতার প্রতি বিশ্বাস’—পাঠ্য কবিতাটি অবলম্বনে ওপরের উদ্ধৃতিটি আলোচনা করো।
উত্তর : আমরা 'একুশ কবিতা' নামে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করি। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী তৎকালীন পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তান যখন মাতৃভাষার প্রতি ভালবাসা ও দায়িত্ববোধে আলোড়ন তুলেছিল, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে খাজা নাজিমুদ্দিন সরকারী পুলিশ বাহিনী গুলি চালালে বহু মানুষ শহীদ হন। এবং মেডিসিন অনুষদ. পরবর্তীতে শহীদদের স্মরণে রক্তক্ষয়ী গণআন্দোলন হয় এবং সেই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে ১৯৭১ সালে স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে। কবিতা লেখার শুরুতেই কবি অমরত্বে বিশ্বাস নিয়ে মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এবং অমরত্ব।
14. মনে করো তুমি এমন কোনো জায়গায় দীর্ঘদিনের জন্য যেতে বাধ্য হয়েছ যেখানে কেউ তোমার মাতৃভাষা বোঝেন না। নিজের ভাষায় কথা বলতে না পারার যন্ত্রণা জানিয়ে বন্ধুকে একটি চিঠি লেখো ।
উত্তর -
প্রিয় অতীশ,
আশা করি তুমি ভালো আছো। অনেকদিন হল তোমার সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ করতে পারিনি। তুমি জানো আমার বাবা রাজ্য সরকারের অধীনস্থ একটি সমবায় ব্যাংকে কর্মরত। বাবার চাকুরিসূত্রে আমরা বর্তমানে কটকে শহরের ভিতরে একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করছি। এখানকার বিদ্যালয়ে আমি সপ্তম শ্রেণিতে ভরতি হয়েছি। এখানকার মানুষজন খুবই সরল প্রকৃতির, তবে সকলেই ওড়িয়া ভাষায় অভ্যস্ত। এখানকার মাতৃভাষা ওড়িয়া। সেই কারণে আমি কারও সঙ্গেই নিজের ভাষায় কথা বলতে পারছি না। যাক, কিছু করার নেই। ধীরে ধীরে কয়েকটি ওড়িয়া শব্দের ব্যবহার শিখছি। তোমাকে গিয়ে শোনাব। তোমার ও তোমার বাড়ির সংবাদ জানিয়ে আমাকে পত্র দিয়ো। মাতৃভাষায় পত্র পড়ে আমি নিশ্চয় আনন্দ পাব। তুমি আমার ভালোবাসা জানবে। গুরুজনদের আমার প্রণাম জানাবে।
ইতি
অসীম
১৩. তোমার বিদ্যালয়ে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' কীভাবে পালিত হয়ে থাকে, তা জানিয়ে প্রিয় বন্ধুকে চিঠি লেখো।
উত্তর -
প্রিয় সুকুমার,
মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের অর্থে উদ্দ্যেশ্যে 10 ফেব্রুয়ারি 2020 দিনটিতে আমাদের বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহশিক্ষকদের সহায়তায় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' পালিত হল। অনুষ্ঠানটি আমাদের বিদ্যালয়ের আঙিনায় অনুষ্ঠিত হয়। একাদশ
ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এই আয়োজনে বিশেষভাবে উৎসাহী ছিল। আমরা দর্শক হিসেবে
অনুষ্ঠানটি দেখে আনন্দ পাই। প্রথমে পরিচালক আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন
ও ভাষা শহীদ দিবস সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।তারপর মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্ক বাংলা বিভাগের শিক্ষক মহাশয় তাঁর বক্তব্য রাখলেন। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্ররা রবীন্দ্রনাথ রচিত দুটি গান সমবেত কণ্ঠে গাইল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আমরা প্রত্যেকে উপলব্ধি করলাম মাতৃভাষা আমাদের কাছে মায়ের মতো, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার একটি অমূল্য সম্পদ। আজ এখানেই শেষ করলাম। তোমার পত্রের আশায় আছি। ভালোবাসা নিয়ো, গুরুজনদের আমার প্রণাম জানিয়ো।
ইতি
বরুণ
<< Read More >>