সপ্তম শ্রেণী ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | Class 7th History Chapter 2 Questions Answers
{tocify} $title={Table of Contents}
দু-এককথায় লেখো
১। কোন্কোন্উপাদানেবঙ্গনামটিরউল্লেখপাওয়াযায়?
উত্তর -‘মহাভারত’, কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্র’ ও কালিদাসের 'রঘুবংশম্' কাব্যে বঙ্গ নামটির উল্লেখআছে।
২। মিনহাজ-উস-সিরাজকোন্সময়কালেরঐতিহাসিক?
উত্তর -ত্রয়োদশ শতকের।
৪। আবুলফজলেরআইন-ই-আকবরি' গ্রন্থেবঙ্গকেকীনামেউল্লেখকরাহয়েছে?
উত্তর - ‘সুবা বাংলা' নামে।
৩।আবুলফজলেরগ্রন্থেরনামকী?
উত্তর - ‘আইন-ই-আকবরি'।
৫। ‘সুবা' কথাটিরঅর্থকী?
উত্তর - ‘সুবা' কথাটির অর্থহল – প্রদেশ বা রাজ্য।
৬। শশাঙ্ককাদেরঅধীনেমহাসামন্তছিল?
উত্তর -গুপ্তরাজাদের অধীনে।
৭। শশাঙ্কেররাজধানীকোথায়ছিল?
উত্তর - কর্ণসুবর্ণ।
৮। শশাঙ্কেরসমকালীনউত্তরভারতেরকয়েকটিআঞ্চলিকশক্তিরনামলেখো।
উত্তর -মালব, কনৌজ, থানেশ্বর, কামরূপ, গৌড়, প্রভৃতি।
৯। শশাঙ্কেরসমকালীনএকজনচিনাপর্যটকেরনামলেখো
উত্তর - হিউয়েন সাঙ ।
১০। কোন্সময়কালকেবাংলায়মাৎস্যন্যায়েরযুগবলে?
উত্তর - শশাঙ্কের মৃত্যুর পরে সপ্তম শতকেরমধ্যভাগ থেকে অষ্টম শতকেরমধ্যভাগ পর্যন্ত এই একশো বছরবাংলায় মাৎস্যন্যায়ের যুগ।
১১। বাক্পতিরাজকারসভাকবিছিল?
উত্তর - কনৌজের শাসক যশোবর্মাবা যশোবর্মনের সভাকবি ছিল।
১২। কোন্সময়কালেকারআমলেকৈবর্তবিদ্রোহসংগঠিতহয়ওএইবিদ্রোহেরপ্রথমকেনেতৃত্বদেন?
উত্তর -একাদশ শতকের দ্বিতীয়ভাগে দ্বিতীয়মহীপালের আমলে সংগঠিত কৈবর্তবিদ্রোহে প্রথম নেতৃত্ব দৈনকৈবর্ত নেতা দিব্য বাদিব্বোক।
১৩। রাষ্ট্রকূটবংশেরপ্রতিষ্ঠাতাকে?
উত্তর - দন্তিদুর্গ।
১৪। গুর্জর-প্রতিহারকোথায়শাসনকরতেন?
উত্তর - রাজস্থান ও গুজরাট অঞ্চলে।
১৫। চোলরাজ্যেরপ্রতিষ্ঠাতাকে?
উত্তর -বিজয়ালয়।
১৬।কোন্চোলরাজা‘গঙ্গাইকোণ্ডচোল' উপাধিনিয়েছিলেন?
উত্তর - প্রথম রাজেন্দ্ৰ চোল।
১৭। চোলবংশেরশ্রেষ্ঠরাজাকেছিলেন?
উত্তর - রাজেন্দ্র চোল।
১৮। অর্থশাস্ত্রেররচিয়তাকেছিলেন?
উত্তর - কৌটিল্য।
১৯। 'হর্ষচরিত' কেরচনাকরেন?
উত্তর - বানভট্ট ‘হর্ষচরিত' রচনা করেন।
২০। শ্রেষ্ঠীকাদেরবলাহত?
উত্তর -ধনী বণিকদের শ্রেষ্ঠী বলা হত।
সপ্তম শ্রেণী ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
সংক্ষেপে উত্তর লেখো
(ক) এখনকারপশ্চিমবঙ্গেরএকটামানচিত্রদেখো।তাতেআদিমধ্যযুগেরবাংলায়কোন-কোন্নদীদেখতেপাবে?
উত্তর - এখনকার পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রঅনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের আদি-মধ্যযুগের নদ-নদী হল গঙ্গানদী, এর শাখানদী ভাগীরথীতথা হুগলী নদী।পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের নদীগুলি হল – মহানন্দা, পুনর্ভবা, তিস্তা, করতোয়া, আত্রাই। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের উত্তর রাঢ় অঞ্চলেরনদীগুলি হল—ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামোদর, রূপনারায়ণ, কাঁসাই এবং সুবর্ণরেখা।
(খ) শশাঙ্কেরআমলেবাংলারআর্থিকঅবস্থাকেমনছিলতাভেবেলেখো।
উত্তর - ৬০৬-০৭ খ্রিঃ-এর কিছুকাল আগেশশাঙ্ক মগধের গুপ্ত রাজামহাসেন গুপ্তের কাছ থেকে গৌড়দেশকেমুক্ত। করেএক স্বাধীন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। শশাঙ্ককেইবাংলার রাজাদের মধ্যে সর্বপ্রথম সার্বভৌমনরপতি হিসাবে চিহ্নিত করাহয়। শশাঙ্কেররাজত্বকালে অর্থনীতির ক্ষেত্রে সমূহ উন্নতি ঘটেছিলযা হিউয়েন সাঙ্ এর বিবরণীথেকে জানা যায়।শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র। কর্ণসুবর্ণরসাথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ারবাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় ছিল।শশাঙ্কের আমলে অর্থনীতির অন্যতমনিদর্শন হল সোনার মুদ্রারপ্রচলন। তবেএর মান অনেক পড়েগিয়েছিল। তাররাজত্বের শেষের দিকে ব্যবসাবাণিজ্য কিছুটা স্তিমিত হয়েপড়লেও অভাবনীয় উন্নতি পরিলক্ষিত হয়কৃষিকার্যে। ফলেসমাজে জমির চাহিদা উত্তরোত্তরবৃদ্ধি পায়। অর্থনীতিহয়ে পড়ে কৃষি নির্ভর। কৃষিরগুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় সমাজক্রমশ গ্রামকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছিল।তবে শশাঙ্কের শাসনকালকে অর্থনীতির সামাগ্রিক উন্নতির পর্ব বলা চলে।
(গ) মাৎস্যন্যায় কী?
উত্তর - ধর্মপালের খালিমপুরের তাম্র শাসন থেকেজানা যায় ৬৩৭ সালেশশাঙ্কের মৃত্যু হয়।সেই সময় থেকে আনুমানিকখ্রিস্টীয় ৭৫০ অব্দ নাগাদ‘পাল’ বংশের উত্থানের মধ্যবর্তীপর্বকে মাৎস্যন্যায়ের যুগ রূপে চিহ্নিতকরা হয়। মাৎস্যন্যায়বলতে দেশে অরাজকতা বাস্থায়ী রাজার অভাবকে বোঝানোহয়। পুকুর, সমুদ্রে বড়ো মাছ যেমনছোটো মাছকে খেয়ে ফেলে, তেমনি যে সামাজিক পরিস্থিতিতেধনী ও ক্ষমতাবান লোকইচ্ছেমতো দুর্বল ও দরিদ্রদেরশোষণ ও লুণ্ঠনের মাধ্যমেএক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, তাকেইঐতিহাসিকরা মাৎস্যন্যায় বলে অভিহিত করেছেন। ঐযুগে প্রত্যেক ক্ষত্রিয়, সম্ভ্রান্ত লোক, ব্রাক্ষ্মণ, ওবণিক ইচ্ছেমতো নিজের নিজের এলাকাশাসন করত। বাংলারকোনো কেন্দ্রীয় শাসক ছিল না।
(ঘ) খ্রিস্টীয়সপ্তমওঅষ্টমশতকেরআঞ্চলিকরাজ্যগুলিকেমনভাবেগড়েউঠেছিল?
উত্তর - খ্রিস্টীয় সপ্তম ও অষ্টমশতকে বাংলার বাইরে উত্তরও দক্ষিণ ভারতে বেশকিছু নতুন আঞ্চলিক রাজ্যেরউদ্ভব ঘটে। যাদেরমধ্যে অন্যতম ছিল উত্তরভারতের পাল, গুর্জর-প্রতিহারএবং দক্ষিণ ভারতের রাষ্ট্রকূটবংশ। এইসকল আঞ্চলিক রাজ্যগুলি নিজেদের শাসন ব্যবস্থা গড়েতুলতে স্থানীয় শক্তিশালী ব্যক্তিদের অস্তিত্ব মেনে নিয়েছিল।এমন কি বহু ক্ষেত্রেবড়ো বড়ো জমির মালিকও যোধানেতাদের সামন্ত, মহাসমস্ত বা মহামণ্ডলেশ্বর উপাধিতেভূষিত করে গুরুত্বপূর্ণ সামরিকও প্রসাশনিক দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন।পরিবর্তে এরা উক্ত সামন্তমহাসামন্ত, থেকে খাজনা ওউপঢৌকন পেত। এমনকিযুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সামন্ত, মহাসামন্তরা ঐসকল আঞ্চলিক রাজাদেরসৈন্য দিয়ে সাহায্য করত। এইভাবেই খ্রিস্টীয় সপ্তম ও অষ্টমশতকে গড়ে ওঠা আঞ্চলিকরাজ্যগুলি নিজেদের শাসনতান্ত্রিক অস্তিত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে সম্ভবপর হয়েছিল।
(গ) সেন রাজাদেরআদিনিবাসকোথায়ছিল? কীভাবেতারাবাংলায়শাসনকায়েমকরেছিলেন?
উত্তর - সেন রাজাদের আদিবাসস্থান ছিল দক্ষিণ ভারতেরকর্ণাট অঞ্চল, অর্থাৎ মহীশূরও তার আশেপাশের এলাকায়। একাদশশতকের কোনো এক সময়সামন্তসেন কণটি থেকে রাঢ়অঞ্চলে চলে এসে সেনবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। সামন্তসেনের পুত্র হেমন্ত সেনপালরাজাদের দুর্বলতার সুযোগে রাঢ় অঞ্চলেএকটি স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করেনএবং 'মহারাজাধিরাজ' উপাধি ধারণ করেন। কবিউমাপতি ধর রচিত দেওপাড়ালিপি থেকে জানা যায়, হেমন্তসেনের পুত্র বিজয় সেন(আনুমানিক ১০৯৬-১১৫৯ খ্রি:) রাঢ়, গৌড়, পূর্ববঙ্গ ওমিথিলা জয় করে সেনরাজ্যের বিস্তার ঘটান। তিনিস্বাধীন সেনবংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা রূপেপরিচিত। পরবর্তীশাসক বল্লালসেন পাল রাজা গোবিন্দপালকে পরাস্ত করে পালরাজ্যেরকিছু অংশ কায়েম করেছিলেন। সেনবংশের শেষ শক্তিশালী শাসকলক্ষ্মণ সেন (১১৭৯-১২০৪/৫ খ্রিঃ) প্রয়াগ, বারাণসী, ও পুরীতে তাঁরক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনিপূর্ববঙ্গের বিক্রমপুরে রাজধানী স্থাপন করেন।
(চ) সুলতানমাহমুদভারতথেকেলুঠকরাধনসম্পদকীভাবেব্যবহারকরেছিলেন?
উত্তর - গজনির সুলতান মাহমুদ১০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০২৭ খ্রিস্টাব্দপর্যন্ত ভারত আক্রমণ করেছিলেন। তারভারত আক্রমণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলভারতের মন্দিরগুলি থেকে ধনসম্পদ লুঠকরা। তিনিভারত থেকে যে সম্পদলুঠ করেছিলেন। তানিজের দেশের ভালো কাজেব্যয় করেছিলেন। যেমন— (১) তিনি রাজধানী গজনিও অন্যান্য শহরকে সুন্দর করে। সাজিয়েছিলেন। (২) তিনি অনেক প্রাসাদ, মসজিদ, গ্রন্থাগার, বাগিচা, খাল, জলাধার এবংআমু দরিয়ার ওপর বাঁধ নির্মাণকরেছিলেন। (৩) একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষকদের বেতনও ছাত্রদের বৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থাকরেছিলেন।
বিশদে উত্তর লেখো
(ক) প্রাচীনবাংলাররাঢ়, সুক্ষ্মএবংগৌঢ়অঞ্চলেরভৌগোলিকপরিচয়দাও।
উত্তর - প্রাচীন বাংলার জনপদগুলির মধ্যেঅন্যতম জনপদ হল রাঢ়, সুক্ষ্ম ও গোঁড়।এই জন পদগুলির প্রকৃতঅবস্থান অনুধাবনে প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক ভূসংস্থানগতপরিবেশের ওপর আলোকপাত করাপ্রয়োজন।
রাঢ়-সুক্ষ্ম : লেখগত ও সাহিত্যগতপ্রমাণাদি থেকে প্রাচীন রাঢ়বা লাঢ় অঞ্চলের দুটোবিভাগের কথা জানা যায়— উত্তর রাঢ় ও দক্ষিণরাঢ়। জৈনসাহিত্য আচারঙ্গ সূত্র অনুযায়ী উত্তররাঢ় ছিল বজ্রভূমি (বজ্রভূমি) ও দক্ষিণ রাঢ় ছিলসুবৃত্তভূমি (সুষ্মভূমি) এলাকা।
উত্তরও দক্ষিণ রাঢ়ের মধ্যেসীমা রেখা তৈরি করেছেঅজয় নদ। বিভিন্নঐতিহাসিক প্রমাণাদির ভিত্তিতে বলা যায় যে, বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলার পশ্চিমভাগ, সমগ্রবীরভূম জেলা, সাঁওতাল পরগনারকিছু অংশ, এবং বর্ধমানজেলার কাটোয়া মহাকুমার উত্তরভাগ নিয়ে উত্তর রাঢ়জনপদটি গঠিত হয়েছিল।দক্ষিণ রাঢ় বলতে আজকেরহাওড়া, হুগলি ও বর্ধমানজেলার বাকি অংশকে বোঝায়।
“মহাভারত” মহাকাব্য কালিদাসের কাব্য থেকে জানাযায় যে, এই অঞ্চলটিভাগীরথী ও কাঁসাই (কংসাবতী) নদীর মাঝে সমুদ্র পর্যন্তবিরাট এলাকা এর অন্তর্গতছিল। গৌড়: প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় বাংলারএকটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক একক ছিল গৌড়। বরাহমিহিরের'বৃহৎসংহিতা' (খ্রিঃ ষষ্ঠ শতকে) রচনার বর্ণনানুসারে গৌড় বলতে মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও বর্ধমান জেলারপশ্চিম ভাগ নিয়ে গঠিতএলাকাকে বোঝানো হয়েছে।
তবে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে রাজাশশাঙ্কের আমলে গৌড়ের সীমাবেড়ে গিয়েছিল। সমকালীনহিউয়েন সাঙের বিবরণ অনুযায়ীশশাঙ্কের আমলে গৌড়ের রাজধানীছিল কর্ণসুবর্ণ। ভাগীরথীরপশ্চিম তটস্থ আজকের মুর্শিদাবাদইছিল সেকালের গৌড়ের প্রধান এলাকা। শশাঙ্কেরআমলে গৌড়ের ভৌগোলিক বিস্তারপুণ্ড্রবর্ধন (উত্তরবঙ্গ) থেকে ওড়িশার উপকূলপর্যন্ত হয়েছিল। খ্রিস্টীয়অষ্টম-নবম শতকে কখনোকখনো গৌড় বলতে সমগ্রপাল সাম্রাজ্যকেও বোঝানো হত।
(খ) শশাঙ্কেরসঙ্গেবৌদ্ধদেরসম্পর্ককেমনছিল, সেবিষয়েতোমারমতামতদাও।
উত্তর - বাংলাদেশের প্রথম সর্বভারতীয় পর্যায়েরউল্লেখযোগ্য নরপতি শশাঙ্ক ছিলেনমনে প্রাণে শৈব ধর্মবা শিবের। উপাসক। 'আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল' নামক বৌদ্ধ গ্রন্থে ওহিউয়েন সাঙ তার 'ফো-কিউ-কিং' নামকভ্রমণবিবরণীতে শশাঙ্ককে ‘বৌদ্ধবিদ্বেষী' বলে বর্ণনা করেছেন। শশাঙ্কেরবিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়যে তিনি বৌদ্ধ ভিক্ষুকদেরহত্যা করেছিলেন। এমনকিবৌদ্ধদের পবিত্র ধর্মীয় স্মারকধ্বংস করেছিলেন। হর্ষবর্ধনেরসভাকবি বাণভট্টের হর্ষচরিত'-এ শশাঙ্ককে এইকারণে নিন্দা করা হয়েছে।
অন্যদিকেশশাঙ্কের শাসনকালের কয়েক বছর পরেহিউয়েন সাঙ শশাঙ্কের রাজধানীকর্ণসুবর্ণতে এসে এখানে বৌদ্ধদেরযথেষ্ট প্রতিপত্তি ও কর্নসুবর্ণ নগরেরউপকণ্ঠে রক্তমৃত্তিকা বৌদ্ধবিহারের সমৃদ্ধি লক্ষ করেছিলেন।আবার চৈনিক পর্যটক ই-ৎসি ও শশাঙ্কেরমৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পরবাংলায় বৌদ্ধ ধর্মের যথেষ্টউন্নতি লক্ষ করেছিলেন।তাই এই সকল তথ্যপ্রমাণাদির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সহজেই বলতেপারি শশাঙ্ককে কোনো রূপেই বৌদ্ধধর্মবিদ্বেষী বলা যায় না। কেননাশশাঙ্ক নির্বিচারে বৌদ্ধ বিদ্বেষী হলেতার শাসনকালে বৌদ্ধধর্মের এরূপ প্রতিপত্তি বজায়থাকত না।
তাই স্বাভাবিকভাবে বলা যায় যে, শশাঙ্কের মতো একজন মহানশাসকের চরিত্রে কলঙ্ক লেপনের উদ্দেশ্যেইবিভিন্ন রচনায় তার বিরুদ্ধেএই সব বক্তব্য জারিকরা হয়েছে।
(গ) ত্রিশক্তিসংগ্রামকাদেরমধ্যেহয়েছিল? এইসংগ্রামেরমূলকারণকীছিল?
উত্তর - হর্ষবর্ধনের পরবর্তীযুগে আর্যাবর্তের রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু কনৌজের ওপর আধিপত্যস্থাপনের উদ্দেশ্যে মালবের গুর্জর-প্রতিহার, দক্ষিণ ভারতের রাষ্ট্রকূট ওবাংলার পালবংশের মধ্যে এক প্রবলত্রি-শক্তি সংগ্রাম হয়েছিল। এইসংগ্রাম প্রায় ২০০ বছরধরে চলেছিল।
কারণ : সম্রাট হর্ষবর্ধনের সময়থেকে কনৌজ ভারতের রাজনৈতিকআধিপত্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল।মূলত এই কনৌজের ওপরকর্তৃত্ব দখলের আকাঙ্ক্ষাই পরমশক্তিশালী তিন শক্তি গুর্জর-প্রতিহার, রাষ্ট্রকূট ও পালদের মধ্যেত্রিশক্তি সংগ্রামের সূচনা করে।এই শক্তিগুলির কাছে কনৌজের ওপরঅধিকার স্থাপন ছিল মর্যাদারপ্রতীক। একইভাবেকনৌজের অর্থনৈতিক গুরুত্বও ভারতীয় রাজাদের কনৌজ দখলে প্ররোচিতকরেছিল। যেকনৌজ নিয়ন্ত্রণ করবে সেই গাঙ্গেয়উপত্যকা দখলে রাখতে পারবে। এই অঞ্চলেরনদী ভিত্তিক বাণিজ্য ও খনিজ দ্রব্যছিল আর্থিক দিক থেকেলোভনীয়। এইরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্বেরকথা মাথায় রেখে কনৌজশেষ পর্যন্ত কে দখলে রাখতেপারবে, এই নিয়ে অষ্টমশতাব্দী থেকে পাল, গুর্জর-প্রতিহার ও দাক্ষিণাত্যের রাষ্ট্রকূটবংশের মধ্যে টানা লড়াইচলেছিল, যা ইতিহাসে ত্রি-শক্তি সংগ্রাম নামেপরিচিত। দীর্ঘদুশো বছর ধরে চলাএই দ্বন্দ্বে তিনটি বংশেরই শক্তিশেষ হয়ে যায়।
কল্পনাকরে লেখো
(ক) মনেকরোতুমিরাজাশশাঙ্কেরআমলেএকজনপর্যটক।তুমিতাম্রলিপ্তথেকেকর্ণসুবর্ণযাচ্ছ।পথেতুমিকোনকোনঅঞ্চলওনদীদেখতেপাবে? 'কর্ণসুবর্ণে' গিয়েইবাতুমিকীদেখবে?
উত্তর - গৌড় অধিপতি শশাঙ্কেরআমলে একজন পর্যটক হিসেবেআমি তাম্রলিপ্ত থেকে কর্ণসুবর্ণ যাত্রাকালেযে সমস্ত অঞ্চলগুলি দেখতেপাব সেগুলি হল— দক্ষিণরাঢ়, উত্তর রাঢ়, বঙ্গ, গৌড়, মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি। এছাড়া যে সমস্ত নদীও নদ দেখা যাবেতা হল—ভাগীরথী, রূপনারায়ণ, দামোদর, অজয়, ময়ূরাক্ষী প্রভৃতি।
শশাঙ্কেরশাসনকালের একজন পর্যটক হয়েআমি তার রাজধানী কর্ণসুবর্ণতেগিয়ে যা দেখতে পারতার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণআমার দৃষ্টিভঙ্গিতে তুলে ধরলাম।কর্ণসুবর্ণ অবস্থানগতভাবে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় অবস্থিত।এটি ছিল বাংলার সমৃদ্ধশালীনগর। এইখানেরাজবাড়িডাঙায় 'রক্তমৃত্তিকা বৌদ্ধবিহার' অবস্থিত ছিল, যেটি রাজধানীনগরটিকে বিদেশিদের কাছে আকর্ষণীয় করেতুলেছে।
শশাঙ্কেররাজধানী কর্ণসুবর্ণ ছিল জনবহুল একটিঅঞ্চল। এখানেবৌদ্ধ ও শৈব উভয়ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষের বসবাসই লক্ষ করতেপারি। কর্ণসুবর্ণেরমানুষজন ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী। এখানকারজমি নীচু ও আর্দ্রএবং জলবায়ু নাতিশীতোয় হওয়ায় তা কৃষির উপযোগীছিল। কৃষিছিল মানুষের একটি অন্যতম পেশা। এইঅঞ্চলের মানুষজন ছিল শিক্ষাদীক্ষায়।উন্নত ও চরিত্রের দিকথেকে উদার।
এই সময়ে প্রশাসনিক ওবাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে কর্ণসুবর্ণ একটিগুরুত্বপূর্ণ অবস্থান লাভ করে।পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চল থেকে এখানকার নাগরিকদেরজন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আসত। এইঅঞ্চলের সাথে দঃ পূর্বএশিয়ার বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল। রক্তমৃত্তিকাথেকে অনেক বণিককে জাহাজনিয়ে দঃ পূর্ব এশিয়ারমালয় অঞ্চলের উদ্দেশ্যে যেতে দেখেছি।যা কর্ণসুবর্ণের বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির পরিচায়ক।
(খ) মনেকরোদেশেমাৎস্যন্যায়চলছে।তুমিওতোমারশ্রেণিরবন্ধুরাদেশেররাজানির্বাচনকরতেচাও।তোমাদেরবন্ধুদেরমধ্যেএকটিকাল্পনিকসংলাপরচনাকরো।
উত্তর - জলাশয়ের বড়ো মাছ যেমনছোটো মাছকে গিলে ফেলে, তেমনটি বাহুবলের দ্বারা অভিজাত শ্রেণিদুর্বলের ওপর অত্যাচার, নৈরাজ্যচালিয়ে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিরসৃষ্টি করে সেটাই 'মাৎস্যন্যায়' নামে পরিচিত। ইতিহাসবইতে পাল শাসনের পূর্বেএই রকম 'মাৎস্যন্যায়ের' কথাআমরা পড়েছি। এইমাৎস্যন্যায়-এর অবসান ঘটিয়েদেশের রাজা নির্বাচনের মাধ্যমেআমি ও আমার বন্ধুরাশান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চাই।আমরা যা করব তারইএকটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নীচে মেলেধরলাম।
আমি : কিরে শুভম আমাদেরবাংলাদেশে যে অরাজক বিশৃঙ্খলপরিস্থিতি চলছে তার থেকেপরিত্রাণে কী করা যায়বলে তোর মনে হয়?
শুভম : আমার তো মনেহয় একজন যোগ্য শাসকবা রাজার প্রয়োজন।
আমি : হ্যাঁ। তুইঠিকই বলেছিস কিন্তু আমরাযে রাজাকে ক্ষমতায় বসাবোতাঁকে অবশ্যই ক্ষমতাশালী হতেহবে, যাতে তিনি সিংহাসনেবসেই সমস্ত কিছু কঠোরহাতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
শুভম : আমার তো মনেহয় এর পাশাপাশি তাঁকেঅসীম প্রতিভার অধিকারী হতে হবে, যিনিরাজ্যকে একটি দৃঢ় শাসনেরওপর দাঁড় করাতে পারবেন।
আমি : আমাদের এমন একজনকেরাজা রূপে নির্বাচন করতেহবে যিনি নিজের স্বার্থত্যাগ করে, সমস্ত সমস্যারমোকাবিলা করে রাজ্যে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারবেন।এমনকি রাজ্যের প্রজাকল্যাণে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিতকরবেন। এবংবাংলায় একটি দীর্ঘকালীন শাসনব্যবস্থার ভিত গড়ে দেবেন।
শুভম : আমাদের এমন রাজানির্বাচন করতে হবে যিনিক্ষমতা লোভী নন।অর্থাৎ রাজ্যপরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁকে বিশেষ প্রশাসকগোষ্ঠী গড়ে তুলতে হবে। যাদেরমতামত তিনি শাসন পরিচালনারক্ষেত্রে গ্রহণ করবেন।
(গ) মনেকরোতুমিকৈবর্তনেতাদিব্য।পালরাজাদেরবিরুদ্ধেতোমারঅভিযোগগুলিকীকীথাকবে? কীভাবেইবাতুমিতোমারবিদ্রোহীসৈন্যদলগঠনওপরিচালনাকরবেতালেখো।
উত্তর - দ্বিতীয় মহীপালের (১০৭০-১০৭৫ খ্রিঃ) রাজত্বকালে বরেন্দ্র অঞ্চলে সংগঠিত কৈবর্তবিদ্রোহের নেতা দিব্য হিসেবেবিদ্রোহের কারণ স্বরূপ পালরাজাদের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগগুলি হল– পাল শাসনকালে কৈবর্তদের নীচু জাতি হিসেবেগণ্য করা হত যামেনে নেওয়া যায় না। পালরাজা দ্বিতীয় মহীপাল ছিল একজনদুর্বল ও অত্যাচারী শাসক। এছাড়া পাল রাজারা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী হওয়ায় মৎস্য ভক্ষণকারী মানুষদেরবৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ নিষিদ্ধকরে দেন, ফলে জেলে, কৈবর্তদের জীবিকার সংকট সৃষ্টি হয়। এছাড়া পাল রাজারা বৌদ্ধভিক্ষুকদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কৈবর্তদের ভূমিসত্ত্বকেড়ে নেন। পালরাজাদের এই সমস্ত সিদ্ধান্তকোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়না, ফলে কৈবর্তরা বিদ্রোহীহয়ে ওঠে।
একটি বিদ্রোহী সৈন্যদল গঠন ও পরিচালনাকরার ক্ষেত্রে প্রথমেই নেতাকে যার ওপরগুরুত্ব আরোপ করতে হবে, তা হল একটি দৃঢ়সংগঠন গড়ে তোলা হবে। যাসৈন্যবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়াকেগুরুত্ব দেবে। যুদ্ধপরিচালনার সুবিধার্থে পুরো সৈন্যবাহিনীকে কয়েকটিছোটো ছোটো দলে বিভক্তকরতে হবে এবং প্রতিটিদলের দায়িত্বে থাকবেন একজন দক্ষসেনানায়ক, যে দলটিকে যুদ্ধক্ষেত্রে সুষ্ঠভাবে নিয়ন্ত্রণ ও চালিত করতেপারবে। কোনোশক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করারজন্য অবশ্য সৈন্যবাহিনীর চাতুরতারওপর জোর দিতে হবেএবং সেনাদলগুলিকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ওসাজসরঞ্জামে সুসজ্জিত করতে হবে।এ ছাড়া শাসকের দক্ষতা, নিপুণতা ও সমরকুশলতা বিদ্রোহীসৈন্যদলকে উৎসাহ যোগাবে।
(ঘ) মনেকরোতুমিবাংলায়তুর্কিআক্রমণেরদিনদুপুরবেলায়নদিয়াশহরেররাজপথদিয়েযাচ্ছিলে।সেইসময়কীদেখলে?
উত্তর - আনুমানিক ১২০৪ খ্রিস্টাব্দের শেষেবা ১২০৫ খ্রিস্টাব্দের শুরুরদিকে তুর্কি নেতা ইখতিয়ারউদ্দিন মহম্মদ বখতিয়ার খলজিরনেতৃত্বে বাংলায় তুর্কি আক্রমণের দিনযদি আমি নদিয়ার রাজপথদিয়ে যাই এবং এইতুর্কি বাহিনীকে দেখি। বখতিয়ারেরসাথে কেবলমাত্র ১৭ জন সৈন্যথাকায় তাদের ভ্রমণকারী বাপর্যটক বলেই মনে হচ্ছিল। আবারএদের ঘোড়া-ব্যবসায়ীও মনেহতে পারে। কিন্তুকিছুক্ষণ পরই দেখা গেলবখতিয়ারের তুর্কি বাহিনী রুদ্রমূর্তিধারণ করে লক্ষণ সেনেররাজ্যের নদিয়া শহরের ওপরআক্রমণ চালাতে শুরু করে। আরতখন লক্ষণ সেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়হয়ে যান এবং তাদেরকাছে পরাজিত হন।এর ফলে বখতিয়ারের রাজাহীনসাম্রাজ্য নদিয়া দখলে সমর্থহয়।
সপ্তম শ্রেণী ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর