সপ্তম শ্রেণী ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | Class 7th History chapter 3 Questions Answers

সপ্তম শ্রেণী ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | Class 7th History chapter 3 Questions Answers

 

{tocify} $title={Table of Contents}

 

দু-এককথায় উত্তর দাও 

 

  চোলরাজ্যেকোন্ধাতুরহস্তশিল্পবিখ্যাতছিল? চোলরাজ্যেরপ্রদেশকেকীবলাহত? চোলবণিকদেরকীবলাহত?

 উত্তর চোলরাজ্যে ব্রোঞ্জ ধাতুর হস্তশিল্প বিখ্যাতছিল উত্তর চোলরাজ্যের প্রদেশকে মণ্ডলম বলা হত উত্তর চোলবণিকদের শেট্টি বলা হত

 

চর্যাপদগুলিকখনরচিতহয়?

 উত্তর চর্যাপদগুলিঅষ্টম থেকে দ্বাদশ শতকেরমধ্যে রচিত হয়

 

উর' নাড়ুএইসভাদুটিকীদায়িত্বপালনকরত?

উত্তর স্বায়ত্তশাসন, বিচার রাজস্ব সংগ্রহেরদায়িত্ব

 

দক্ষিণভারতেব্রাহ্মণদেরনিষ্করজমিদানেরব্যবস্থাকীনামেপরিচিতছিল?

 উত্তর ব্রহ্মদেয়ব্যবস্থা

 

চক্রপাণিদত্তেরলেখাবইটিরনামলেখো

 উত্তর চিকিৎসাসংগ্রহ

 

সন্ধ্যাকরনন্দীরচিত'রামচরিত' কাব্যেকোন্পালরাজারকাহিনিবর্ণিতআছে?

উত্তর পালরাজা রামপালের কাহিনি

 

পালযুগেরবিখ্যাতচিকিৎসাবিজ্ঞানীরনামকীছিল? তাঁরবাড়িকোথায়?

উত্তর পালযুগেরবিখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানীর নাম চক্রপাণি দত্ত তাঁরবাড়ি ছিল বীরভূম জেলায়


 ১০ সিদ্ধাচার্যকারা? কয়েকজনসিদ্ধাচার্যেরনামলেখো

 উত্তর বজ্রযানবা তন্ত্রযান বা তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মমতের প্রচারকরাই সিদ্ধাচার্য নামে পরিচিতকয়েকজন সিদ্ধাচার্য ছিলেনলুইপাদ, সরহপাদ, কাহ্নপদ, ভুসুকুপাদ প্রমুখ

 

 ১১ চর্যাপদ-এরপুঁথিকে, কোথাথেকেউদ্ধারকরেন?

 উত্তর চর্যাপদেরপুঁথি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপাল থেকে উদ্ধারকরেন

 

 ১২ পালযুগেরবৌদ্ধজ্ঞানচর্চারকেন্দ্রহিসেবেকয়েকটিবৌদ্ধবিহারেরনামলেখো

 উত্তর নালন্দা, ওদন্তপুরী, বিক্রমশীল, সোমপুরী, জগদ্দল, বিক্রমপুরী ইত্যাদি

 

 ১৩ হিউয়েনসাঙকতখ্রিস্টাব্দেনালন্দামহাবিহারেবৌদ্ধশিক্ষালাভেরজন্যএসেছিলেন?

 উত্তর খ্রিস্টীয়সপ্তম শতকে

 

 ১৪ বিক্রমশীলমহাবিহারটিকেকতখ্রিস্টাব্দেপ্রতিষ্ঠাকরেন?

 উত্তর পালসম্রাট ধর্মপাল খ্রিস্টীয় অস্টম শতকে বিক্রমশীলমহাবিহারটি প্রতিষ্ঠা করেন

 সপ্তম শ্রেণী ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর


অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন 

 

বাংলারইতিহাসেসেনযুগেরগুরুত্বকীছিল?

 উত্তর বাংলারইতিহাসে সেন যুগের প্রধানগুরুত্ব হল :

(i) পালবংশের অবক্ষয়ের যুগে বাংলাদেশে যেরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সূচনা হয়, তারঅবসান

(ii) পালরাজাদের মতোই উত্তর-পূর্বভারতে একটি বড়ো সাম্রাজ্যেরপ্রতিষ্ঠা এবং

(iii) সংস্কৃতভাষা সাহিত্যের উন্নতি

 

সামন্ততন্ত্রকী?

 উত্তর মধ্যযুগীয়ইউরোপে প্রভু তারঅনুচরদের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক লেনদেনের যে বিশেষ সম্পর্কগড়ে উঠেছিল, তাকে সামন্ততন্ত্র বলাহয় শাসকতাঁর সেবকদের মধ্যে যে ভূসম্পত্তিদান করতেন তাকে মধ্যযুগেলাতিন ভাষায় ‘Feodum' বলা হতএই ‘Feodum' শব্দটি থেকে যেইংরেজি 'Feudalism' (ফিউডালিজম্) শব্দের উৎপত্তি হয়তারই বাংলা অনুবাদ সামন্ততন্ত্র তবেভারতীয় সামন্ততন্ত্রের সাথে ইউরোপীয় সামন্ততন্ত্রেরপুরোপুরি সামঞ্জস্য ছিল নাভারতীয় সামন্ততন্ত্রে ছিল একদিকে রাজা সামন্তপ্রভুদের পারস্পরিক লেনদেনের সম্পর্ক অন্যদিকেছিল সামন্তপ্রভুদের সাথে কৃষকদের আর্থিকআদানপ্রদানের বোঝাপড়া

 

পালসেনযুগেবাংলারখাওয়া-দাওয়ারপরিচয়দাও

উত্তর কৃষিনির্ভর বাংলায় পাল সেনযুগে ধানই ছিল প্রধানফসল তাইভাত ছিল বাঙালির প্রধানখাদ্য এরসাথে ঘি, দুধ, পাটশাক, বিভিন্ন ধরনের মাছ (রুই, পুঁটি, মৌরলা ইত্যাদি) ছিলদৈনন্দিনের খাবার গরিবলোকেদের খাদ্য তালিকায় ছিলবিভিন্ন সবজি, যেমনবেগুন, লাউ, কুমড়ো, ঝিঙে ইত্যাদিএই সময় হরিণ, ছাগল, ভেড়া, নানা রকম পাখি কচ্ছপের মাংস ইত্যাদি খাওয়ারচল ছিল মহুয়া আখ থেকে তৈরিপানীয়ও বাঙালি সমাজে চালুছিল

 

  চক্রপাণিদত্তকেছিলেন?

 উত্তর চক্রপাণিদত্ত ছিলেন পালযুগের সর্বশ্রেষ্ঠচিকিৎসা বিজ্ঞানী তিনিসম্ভবত পালরাজা নয়নপালের সমসাময়িক ছিলেন তারবাড়ি ছিল বীরভূম জেলায় তারলেখা সর্বশ্রেষ্ঠ বই হলচিকিৎসাসংগ্রহ' চরক সুশ্রুতের রচনার ওপর তিনিটীকা লিখেছিলেন এছাড়াভেষজ গাছ-গাছড়া, ঔষধেরউপাদান, পথ্য নিয়েও তিনিবই লিখেছিলেন

 

দীপঙ্করশ্রীজ্ঞানকেছিলেন?

 উত্তর দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান ছিলেন পালযুগের বিখ্যাতবাঙালি পণ্ডিত দার্শনিক তিনিবঙ্গাল অঞ্চলের বিক্রমমণিপুরের বজ্রযোগিনী গ্রামে জন্ম গ্রহণকরেন তিনিওদন্তপুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেনএই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শীলরক্ষিতের কাছে দিক্ষা নিয়েতিনিদীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান' উপাধিতে ভূষিত হনদীপঙ্কর বিক্রমশীল বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাচার্য ছিলেন তিব্বতঅঞ্চলে তিনি মহাযান বৌদ্ধধর্মপ্রচার করেন তিব্বত, কোরিয়া চিনের মানুষেরমধ্যে তিনি 'বুদ্ধের অবতার' রূপে পূজিত হন

 

চর্যাপদকী?

 উত্তর পালযুগেমাগধী-প্রাকৃত শৌরসেনী অপভ্রংশেরমিশ্রণে বাংলা ভাষার আদিরূপের উদ্ভব হয়এই আদি রূপকে চর্যাপদবলে এটিছিল খ্রিস্টীয় অষ্টম থেকে দ্বাদশশতকে লেখা বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদেরকবিতা গানের সংকলন, লুইপাদ, কাহ্নপাদ প্রমুখ বৌদ্ধধর্মাচার্যের রচিতচর্যাপদগুলি বাংলা ভাষার প্রাচীনতমনমুনা পণ্ডিতহরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপাল থেকে এইচর্যাপদের পুঁথি উদ্ধার করেন

 সপ্তম শ্রেণী ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর


সংক্ষেপেউত্তর দাও

 

() দক্ষিণভারতেখ্রিস্টীয়নবমথেকেএকাদশশতকেরমধ্যেবাণিজ্যেরউন্নতিকেনঘটেছিল?

উত্তর খ্রিস্টীয়নবম থেকে একাদশ শতকেরমধ্যে দক্ষিণ ভারতে বাণিজ্যেরউন্নতিসাধনে বাণিজ্য ব্যবস্থার সাথে নিযুক্ত অনেকগুলিবণিক সংগঠন সমবায়েরকথা জানা যায়আর দক্ষিণ ভারতের সাথেযুক্ত বাণিজ্য পথটিকে নিয়ন্ত্রণ করতদক্ষিণ ভারতের শক্তিশালী চোলশাসকরা তারাব্যবসায়ীদের স্বার্থ বিভিন্ন সমস্যারমোকাবিলার জন্য 'নগরম' নামেরএকটি পরিষদ গড়ে তুলেছিলেন নবমশতক থেকে আরব বণিকদেরযাতায়াত বেড়ে যাওয়ায় বহির্বাণিজ্যেরউন্নতি হয়েছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্নদেশে চোলদের ক্ষমতা বাড়ায়সেখানকার বাণিজ্যের ওপর ভারতীয় বণিকদেরপ্রভাব আস্তে আস্তে বেড়েছিল দক্ষিণভারতের তাম্রলেখগুলি থেকে জানা যায়যে, শেট্টি বা বণিকরাপণ্য সাজিয়ে যাতায়াত করতেন এমনকিমন্দিরগুলিকে বণিক সংগঠনগুলি জমিদান করত

 

() পালসেনযুগেবাংলায়কীকীফসলউৎপন্নহত? সেইফসলগুলিকোন্কোন্টিএখনওচাষকরাহয়?

উত্তর পাল-সেন যুগে অর্থনীতিরক্ষেত্রে কৃষি, শিল্প বাণিজ্যের অবদান থাকলেও কৃষিইছিল অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি আমলের বিভিন্ন লেখগুলিথেকে কৃষিনির্ভর সমাজে উৎপাদিত শস্যেরএকটি বিস্তৃত তালিকা পাওয়া যায়

ধান, সরষে, পাট, আখ, নীল তুলা এইযুগের বাংলার প্রধান কৃষিজাতশষ্য ছিল ছাড়া নানারকমের ফল, যেমনআম, কাঁঠাল, কলা, ডালিম, খেজুর, নারকেল ইত্যাদি ফুলের রীতিমতোচাষ হত তবে, সে যুগের শস্যের মধ্যেডালের কোনো উল্লেখ পাওয়াযায় না ছাড়া পান, সুপুরি, এলাচ, মহুয়া ইত্যাদিও প্রচুর পরিমাণে উৎপন্নহতো পাল সেন যুগে বাংলায়উৎপন্ন ফসলের সবকটিই এখনওচাষ করা হয়

 

() রাজালক্ষ্মণসেনেররাজসভারসাহিত্যচর্চারপরিচয়দাও

উত্তর সেনযুগছিল বাংলার শিক্ষা সংস্কৃতির অগ্রগতির যুগ যুগকে বাংলার সংস্কৃত কাব্যেরস্বর্ণযুগ বলা হয়ে থাকে রাজালক্ষ্মণসেন নিজেই ছিলেন সুকবি তাররচিত কয়েকটি শ্লোক পাওয়া গেছে

যাঁরালক্ষ্মণসেনের রাজসভা অলংকৃত করেছিলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেনধোয়ী, উমাপতি ধর, জয়দেব ধোয়ীরলেখাপবনদূত’, উমাপতি ধরের লেখাচন্দ্রচূড় চরিত' প্রভৃতি গ্রন্থগুলিসেযুগের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি লক্ষ্মণসেনেরসভাকবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিলেনজয়দেব তাররচিতগীত গোবিন্দমবাংলাসাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ সংস্কৃতভাষায় রচিত এই কাব্যেরাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলার এক মনোরম বর্ণনাআছে এসময়েআরও দুজন কবি হলেনগোবর্ধন শরণ

এই পাঁচজন কবি একসঙ্গেলক্ষ্মণসেনের রাজসভায় 'পঞ্চরত্ন' নামে পরিচিত ছিলেন

 

() পালশাসনেরতুলনায়সেনশাসনকেনবাংলায়কমদিনস্থায়ীহয়েছিল?

উত্তর শশাঙ্কেরমৃত্যুর পর বাংলার ইতিহাসেযে অরাজকতা, বিদেশি শত্রুর ক্রমাগতআক্রমণ চলছিল, তা কঠোরহাতে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পালশাসকদের সম্পর্কে স্থানীয় জনসাধারণের মনে এক অনন্যপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিলসেই দিক থেকে সেনরাজারা বিদেশি আক্রমণকে প্রতিরোধকরতে ততটা সফল ছিলেননা এমনকিসামরিক প্রতিভার দিক থেকে সেনরাজাদের থেকে পাল শাসকরাঅনেক এগিয়ে ছিলেনসেন রাজাদের আমলে স্থানীয় গ্রামীণশাসনব্যবস্থার অবনতি ঘটেছিল ফলেস্থানীয় জনসাধারণের সাথে রাষ্ট্রের যোগাযোগশিথিল হয়ে এসেছিলরাষ্ট্র অসংখ্য ছোটো ছোটোখণ্ডে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল কিন্তুসমগ্র পাল শাসনকালে কেন্দ্রীয়শাসনব্যবস্থা অনেকটা শক্তিশালী ছিল পালযুগেরতুলনায় সেন যুগে অর্থনৈতিকঅবস্থার অবনতি পরিলক্ষিত হয়

পাল শাসনের তুলনায় সেনশাসন বাংলায় কম দিন স্থায়ীথাকার আরেকটি কারণ ছিলধর্মীয় পালযুগের মতো সেন যুগেবৌদ্ধধর্মের প্রচার প্রসারঘটেনি সেনরাজারা ব্রাহ্মণ্য ধর্মকেই প্রাধান্য দিতেন অন্যদিকেপাল আমলের তুলনায় সেনআমলে বর্ণব্যবস্থা কঠোর, অনমনীয় হয়েপড়েছিল যা সাম্রাজ্যের শাসনব্যবস্থায় চিড় ধরিয়েছিল

 

বিশদেউত্তর দাও 

 

() ভারতেরসামন্তব্যবস্থারছবিআঁকতেগেলেকেনতাএকখানাত্রিভুজেরমতোদেখায়? এইব্যবথায়সামন্তরাকীভাবেজীবিকানির্বাহকরত?

উত্তর ভারতেরআদি মধ্যযুগের সময়কালে গড়ে ওঠা সামন্ততান্ত্রিকশাসনব্যবস্থা তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল আমরাযদি সামন্ততন্ত্রের একটি ছবি আঁকিতাহলে তা অনেকটা ত্রিভুজেরআকার নেয় কেননাএই সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিম্ন শ্রেণির / শোষকশ্রেণির ওপর শোষণকারী ব্যক্তিরসংখ্যা উপরের দিকে ক্রমপর্যায়েকমতে কমতে প্রধান একজনশাসক বা রাজার ওপরদাঁড়াত ফলেতা স্বাভাবিকভাবে অনেকটা ত্রিভুজের মতোদেখাত

আদি-মধ্যযুগে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসেগড়ে ওঠা এই সামন্ততান্ত্রিকব্যবস্থায় সামন্ত শাসকদের মধ্যেক্ষমতার দখল নিয়ে তীব্রমতোবিরোধ থাকলেও এরা প্রত্যেকেইএক জায়গায় ছিল সমকক্ষএই সকল সামন্ত শাসকরাকেউই পরিশ্রম করে উৎপাদন করতনা প্রত্যেকেইনিম্ন শ্রেণির থেকে আদায়কৃত দ্রব্যবা রাজস্ব থেকে নিজেরাজীবিকা নির্বাহ করত এরাযে সকল জমি পেততাতে সাধারণ কৃষক শ্রেণিকেখাটিয়ে খাবৎ হিসাবে বানগদ অর্থে রাজস্ব আদায়করত এইরাজস্বের একটা অংশ মহাসামন্ত রাজাদের কাছেই যেতএই রাজস্ব আদায়ের জন্যসামন্তরা বিভিন্ন ভাবে কৃষকশ্রেণিকে শোষণকরত জমিতে বেগারখাটাত এইভাবেইসামন্ত শাসকরা নিম্নশ্রেণিকে শোষণকরে যতটা সম্ভব বেশিপরিমাণ - রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমেনিজেদের বিসালবহুল জীবন যাপন করতেন

 

() পালসেনযুগেরবাংলারবাণিজ্যকৃষিরমধ্যেতুলনাকরো

উত্তর পাল সেন যুগের বাংলারঅর্থনীতির প্রধান ভিত্তিই ছিলবাণিজ্য কৃষিতবে এই আমলে বাংলায়বাণিজ্য কৃষির মধ্যেঅগ্রগতির দিক থেকে বিস্তরফারাক দেখা দিয়েছিলবাণিজ্য কৃষি অর্থনৈতিকক্ষেত্রে সমপর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি

পাল সেন যুগেস্থল জলপথেই বাণিজ্যেরআদানপ্রদান চলত প্রাচীননগরগুলি বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র ছিল বাংলারতাম্রলিপ্ত বা তমলুক বন্দরটিছিল আন্তর্জাতিক বন্দর ছাড়া হুগলির সপ্তগ্রাম ছিলঅপর প্রসিদ্ধ বন্দর বাংলারমসলিন বস্ত্র নানাধরনের গাছ গাছড়া বিদেশেচালান যেত ছাড়া বাংলার চিনি, গুড়, মশলা, চন্দনকাঠের জিনিস, হাতির দাঁতেরজিনিস এবং সোনা, রুপা মুক্তোর অলংকারের বিশেষ খ্যাতি ছিল তবেঅষ্টম শতক থেকে ভারতেরবৈদেশিক বাণিজ্যে আরব বণিকদের দাপটেরফলে, ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেরমতো বাংলার বৈদেশিক বাণিজ্যেওভাটা পড়ে ফলেবাংলার অর্থনীতি কৃষি নির্ভর হয়েপড়েছিল

পাল সেন যুগেকৃষি ছিল বাংলার অর্থনীতিরঅন্যতম ভিত্তি অধিকাংশমানুষের জীবিকা বৈদেশিকবাণিজ্যে বাংলার বণিকদের গুরুত্বকমে যাওয়ায় বাংলার অর্থনীতি কৃষিনির্ভর হয়ে পড়েছিলপ্রতি গ্রামে বাস্তুভূমি ছাড়াওকৃষি গোচারণ ভূমিছিল ধান, পাট, আখ, তুলাছিল বাংলার প্রধান কৃষিজাতফসল ছাড়া নানা ফল ফুলের চাষ হতোজমির ওপর চাষীর স্বত্ত্বকেমন ছিল তা জানাযায় না তবেরাজারা উৎপন্ন ফসলের / ভাগ কৃষকদেরকাছ থেকে কর হিসাবেনিতেন পালরাজারা ব্রাক্ষ্মণ, বৌদ্ধবিহার এবং সামন্তদের জমিদান করতেন এরাচাষ করার জন্য সেইজমি কৃষকদের দিতেন সেনযুগেও ব্রাহ্মণদের ভূমিদান করা হত

 

() পালআমলেরবাংলারশিল্পস্থাপত্যেরকীপরিচয়পাওয়াযায়তালেখো

উত্তর পালশাসনকালে শিল্প স্থাপত্যেরক্ষেত্রে বাংলার ইতিহাস একগৌরবজ্জ্বল অধ্যায় পালযুগে কারুশিল্পে, কাচশিল্পে, মৃৎশিল্পে ধাতুশিল্পে বাঙালিরাযথেষ্ট পারদর্শিতা লাভ করেছিলপালযুগের শিল্পরীতিকে প্রাচ্য শিল্পরীতি বলা হয় যুগে পাথর ধাতুশিল্পের যেসব নিদর্শন পাওয়াগেছে, সেগুলির বেশিরভাগ হল দেব-দেবীরমূর্তিপালযুগেপোড়ামাটির শিল্প জনপ্রিয় ছিল পাহাড়পুরেরমন্দিরের গায়ে যে খোদাইকরা পাথর পোড়ামাটিরফলক আছে তা পালযুগেরভাস্কর্য শিল্পের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন যুগে ধীমান বিভপালছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী তাদেরচেষ্টায় বাংলায় একটি শিল্পীসংঘ গড়েউঠেছিল

পাল আমলের স্থাপত্যের মধ্যেছিল স্তূপ, বিহার মন্দির পালরাজত্বকালে তৈরি স্তূপগুলি শিখরেরমতো দেখতে ছিলবর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা জেলার আসরফপুরগ্রামে, রাজশাহীর পাহাড়পুরে, চট্টগ্রামে, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার ভরতপুর গ্রামেবৌদ্ধ স্তূপ পাওয়া গেছে তবেস্তূপ নির্মাণে ওই আমলে বাংলায়কোনো মৌলিক ভাবনার বিকাশলক্ষ করা যায়নি

এযুগেস্থাপত্য-শিল্পকলার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হিসেবে বিক্রমশীল মহাবিহার সোমপুরী বিহারগুলি ছিল বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরবাসস্থান বৌদ্ধ জ্ঞানচর্চারকেন্দ্র পালসম্রাট ধর্মপাল খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে মগধেরউত্তর ভাগে গঙ্গার তীরেআধুনিক ভাগলপুর শহরের কাছে বিক্রমশীলমহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন উল্লেখযোগ্যসোমপুরী বিহারের ধ্বংসাবশেষ রাজশাহী জেলার অন্তর্গত পাহাড়পুরেপাওয়া গেছে এইবিহারের আঙ্গিনাটি চতুষ্কোণ উঁচু প্রাচীরদিয়ে ঘেরা মন্দিরেরমধ্যে সোমপুরী বিহারের মন্দিরই ছিল উল্লেখযোগ্যচারকোণা এই মন্দিরে গর্ভগৃহ, প্রদক্ষিণ পথ, মণ্ডপ, সুউচ্চস্তম্ভ ইত্যাদি ছিল


() পালসেনযুগেরসমাজধর্মেরপরিচয়দাও

উত্তর বাংলায়পালযুগে বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণির উল্লেখ পাওয়া যায় যথা- ব্রাক্ষ্মণ, করণ-কায়স্থ, বৈদ্য, গন্ধবণিক, মালাকার, তন্তুবায় ইত্যাদি তবেকায়স্থ, বৈদ্য অন্যান্যসংকর বর্ণ সবই ছিলশূদ্রবর্ণের অন্তর্ভুক্ত পালযুগেবর্ণবিন্যাস সুস্পষ্টভাবে গড়ে ওঠেনিতবে সমাজে ব্রাহ্মণদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল যথেষ্টপ্রকৃতপক্ষে পালযুগের সামাজিক আদর্শ ছিল বৃহত্তরসামাজিক সমন্বয় স্বাঙ্গীকরণসমাজে ব্রাহ্মণদের পরেই ছিল কায়স্থদেরস্থান বৈদ্যশ্রেণিক আত্মপ্রকাশ ঘটে একেবারে পালরাজত্বের শেষে সমাজেএদের যথেষ্ট মর্যাদা ছিল

সেন যুগে ব্রাহ্মণ্য সংস্কারেরফলে বর্ণভিত্তিক সমাজ গড়ে ওঠে ব্রাহ্মণ্যভিত্তিক সমাজে স্বভাবতই ব্রাহ্মণদেরস্থান ছিল সবার উপরে বাংলারহিন্দুসমাজে ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈশ্য এই তিনশ্রেণির মধ্যে কৌলিন্য প্রথারপ্রচলন হয় অনেকেরমতে রাজা বল্লালসেন কৌলিন্যপ্রথার প্রবর্তক

পাল সেনযুগে সমাজেনারীর তেমন উল্লেখযোগ্য ভূমিকাছিল না একটিমাত্রস্ত্রী গ্রহণ করাই ছিলস্বাভাবিক প্রথা তবেরাজারাজরা অভিজাতদের মধ্যেএকাধিক স্ত্রী গ্রহণ করাররেওয়াজও ছিল সেযুগে সতীদাহ প্রথা প্রচলিতছিল নাচগানেনারীদের অংশগ্রহণের উল্লেখ আছে

পাল রাজারা ব্রাহ্মণ ছিলেননা, এরা ছিলেন বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষক বৌদ্ধসংস্কৃতির প্রসারের উদ্দেশ্যে পালরাজারা অনেক বৌদ্ধ মঠ শিক্ষায়তনের প্রতিষ্ঠা করেন পালযুগেমহাযান বৌদ্ধধর্মের সাথে অন্যান্য দার্শনিকচিন্তাধারা মিলে গিয়ে বজ্রযানবা তান্ত্রিক বৌদ্ধমতের জন্ম হয়এই মতের নেতাদের বলাহত সিদ্ধাচার্য তবেপালরাজারা বৌদ্ধধর্মের অনুগামী হলেও অন্যান্য ধর্মেরপ্রতি সমব্যবহার উদারতা দেখাতেন

সেনযুগেপৌরাণিক ব্রাহ্মণ্য ধর্ম প্রবল হয়েওঠায় বাংলার বৌদ্ধধর্ম কোণঠাসাহয়ে পড়ে সেনযুগে বিষ্ণু, শিব, পার্বতী প্রভৃতিদেব-দেবীর পূজা রীতিমতশুরু হয় এবং বহুমন্দির নির্মিত হয় সেনযুগেশিবপূজার বিশেষ প্রচলন দেখাযায় বিষ্ণু, শিব শক্তি ছাড়াওঅনান্য পৌরাণিক দেব-দেবীর পূজাওবাংলায় প্রচলিত ছিল অবশ্যএদের সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানাযায় না

সপ্তম শ্রেণী ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post