ভারতর্তীথ প্রশ্ন উত্তর | Class 7 | WBBSE
ভারতর্তীথ প্রশ্ন উত্তর
(১) কবিতায় ভারতভূমিকে 'পূণ্যতীর্থ' বলা হয়েছে কেন?
উত্তর - কবিতায় ভারতভূমিকে 'পূণ্যতীর্থ' বলার কারণ হল - এই ভারতের পুণ্যভূমিতে সুপ্রাচীনকাল থেকে আর্য-অনার্য, দ্রাবিড়, চিন, শক, হুন, পাঠান, মোঘল এক দেহে লীন হয়ে গিয়েছে। সব বিভেদ ভুলে ভারতবাসী এক বিরাট হৃদয়ের অধিকারী হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া যুগে যুগে ভারতবর্ষের বুকে জন্ম নিয়েছেন গৌতম বুদ্ধ, মহাবীর জৈন, নানাক, চৈতন্যদেব প্রমুখ মহামানব। সবার কেবল মহান ভারতভূমিতেই সম্ভব। তাই এই ভারতভূমি পুণ্যতীর্থ।
(২) মহামানবের সাগরতীরে বলতে কবি কীবুঝিয়েছেন?
উত্তর - ভারতবর্ষের মাটিতে নানা জাতি-উপজাতির বসবাস। এ ছাড়া যুগ যুগ ধরে এখানে আর্য, অনার্য, শক, হুনদল, পাঠান, মোগল ইত্যাদি জাতিরও আগমন ঘটেছে। ফলে দেশের বুকে সহস্র জাতির এই যে মিলন হয়েছে তাকেই কবি বলেছেন 'মহামানবের সাগরতীরে'।
(৩) ভারতের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ধরা পড়েছে, কবিতা থেকে এমন একটি পঙক্তি উদ্ধৃত করো।
উত্তর - ভারতের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ধরা পড়েছে, এমন একটি পঙক্তিটি হল;
"ধ্যানগম্ভীর এই যে ভূধর, নদী-জপমালা-ধৃত প্রাম্ভর,
হেথায় নিত্য হেরো পবিত্র ধরিত্রীরে
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।"
(৪) ভারতবর্ষকে পদানত করতে কোন্ কোন্ বিদেশি শক্তি অতীতে এদেশে এসেছিল? তাদের পরিণতি কী ঘটল?
উত্তর - ভারতবর্ষকে পদানত করতে যুগ যুগ ধরে বহু বিদেশি শক্তি এদেশে এসেছিল। তাদের মধ্যে ছিল শক, হুন, পাঠান, মোঘল ও সর্বোপরি ইংরেজ।
মহাকালের স্রোতের অমোঘ নিয়মে তাদের সকলকেই এদেশ থেকে চলে যেতে হয়েছে। তাদের সাম্রাজ্য চিরস্থায়ী হয়নি। সাময়িকভাবে প্রভুত্ব বিস্তার করলেও অনতিবিলম্বে তাদের এই দেশ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।
(৫) 'পশ্চিমে আজি খুলিয়াছে দ্বার' - উদ্ধৃতাংশে কোন্ পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে? এমন পরিস্থিতিতে কবির অন্বিষ্ট কী?
উত্তর - 'পশ্চিম' বলতে ইউরোপীয় সভ্যতা-সংস্কৃতির কথা বলা হয়েছে। ভারতে ইংরেজ শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হলে তার সূত্র ধরে ইউরোপের জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিল্প-প্রযুক্তির সাগনার সঙ্গে এদেশের মানুষ পরিচিত হবার সুযোগ পায়। এই পরিস্থিতির কথাই কবি বলতে চেয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে কবির অভিপ্রায় হল, পশ্চিমি সভ্যতা-সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের ভাবের-ভাবনায় মিলন ঘটাতে হবে। দুই দেশের কৃষ্টি-সম্পদ দেওয়া-নেওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের জ্ঞানের প্রসারতা বাড়াতে সক্ষম হব।
(৬) 'আমার শোণীতে রয়েছে ধ্বনিতে তার বিচিত্র সুর।' - কোন্ সুরের কথা বলা হয়েছে? তাকে বিচিত্র বলার কারণ কী? কেনই বাসে-সুর কবির রক্তে ধ্বনিত হয়?
উত্তর - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'ভারততীর্থ' কবিতা থেকে উদ্ধৃতা আশে ভারতবর্ষের মূল সংস্কৃতি যেসব বিভিন্ন সংস্কৃতির মিলনে গড়ে উঠেছে, সেগুলিকেই বিচিত্র সুর বলা হয়েছে।
ভারতবর্ষে অসংখ্য রাজ্য। প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই নানান জাতি ও উপজাতির বসবাস। অর্থাৎ, এদেশের বুকে কত যে ভিন্ন ভিন্ন জাতি ও উপজাতির মানুষের বসবাস তার কোনো ইয়ত্তা নেই। এসব জাতির আবার প্রতেকের নিজস্ব ভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। এ ছাড়া যুগ যুগ ধরে এই ভারতের মাটিত অজস্র বিদেশি জাতির আগমন ঘটেছে এবং তারা অনেকেই এ দেশের মাটির আকর্ষণে, এখানকার মানুষের ভালোবাসার টানে আর তাদের দেশে ফিরে যেতে পারেনি। তারা এদেশের ঐক্যমন্ত্রের সুরে কণ্ঠ মিলিয়ে এখানে স্থায়ী বাসস্থান গড়ে তুলেছে। তারাও তাদের নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রচার ঘটিয়ে এক মতা বৈচিত্র্যময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। একেই কবি বিচিত্র বলেছেন।
যুগের পর যুগ যত কেটে যায় ততই এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে তাদের ভাষা, শিল্প, সংস্কৃতি ইত্যাদি সঞ্চালিত হয়। কবি তাই বলতে চেয়েছেন, তাঁর পূর্বপুরুষদের সেই বৈচিত্র্যময় সুর তাঁরও রক্তে স্বাভাবিক নিয়মে
আজও বয়ে চলেছে।
(৭) "হেরুদ্রবীণা, বাজো বাজো বাজো ..." - রুদ্রবীণা কী? কবি তার বেজে ওঠার প্রত্যাশী কেন?
উত্তর - 'রুদ্রবীণা' হল মহাদেবের বীণা। যে-বাদ্যযন্ত্রের সুর সমস্ত কিছুকে সংহার করে দেয়, তাকে কবি বেজে উঠতে বলেছেন।
বীণাধ্বনির ভিতরে রয়েছে মহামিলনের সুর - যা প্রকৃতপক্ষে ভারতবর্ষের মূল সুর। কবি জানেন, অনেক মানুষ এখনও সংকীর্ণ মানসিকতার গন্ডিতে বন্দি হয়ে ভারতবর্ষের একতার সঙ্গে, সংস্কৃতির মূল স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়নি। কিন্তু কবি মনে করেন, সবার অংশগ্রহণ ছাড়া ভারতের ঐক্যের সুর সম্পূর্ণ হবে না। তাই কবি ওই সব মানুষকে একত্রে গ্রথিত করার জন্যে রুদ্রবীণার মঙ্গল সুরের বেজে ওঠার প্রত্যার্শী হয়েছেন।
(৮) 'আছে সে ভাগ্য লিখা।' - ভাগ্যে কী লেখা আছে? সেলিখন পাঠ করে কবি তাঁর মনে কোন্ শপথ গ্রহণ করলেন?
উত্তর - ভারতবর্ষ বিভিন্ন ধর্মের মানুষের এক মহামিলনক্ষেত্র। বহু জাতি, বহু বর্ণের মানুষ এদেশে এসে অত্যাচারের রথচক্র চালিয়েছে। অনেক দুঃখকষ্ট সহ্য করেও এদেশের মানুষ ওইসব অত্যাচারী বিদেশি মানুষদের আপন করে নিয়েছে। এই দুঃখকষ্টই এদেশের মানুষের ভাগ্যে লেখা আছে।
সেই বিধিলিপি পাঠ করে কবি মনে মনে শপথ নিয়েছেন যে, দুঃখকে তিনি মনের মধ্যে বহন করেই চলবেন। তার সঙ্গে সমস্ত লাজলজ্জা, অপমান দূরে সরিয়ে দুঃসহ ব্যথার অবসান ঘটাবেন। তাঁর স্থির বিশ্বাস, রাত্রির অন্ধকার দূর হবে। কবি অদৃষ্টের খোলসমুক্ত হয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন। তাই দুর্জয় সাহস, প্রবল আত্মশক্তি ও অদম্য মনোবল নিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে আত্মস্থ হয়ে তিনি ভাগ্যলিখনকে জয় করার শপথ গ্রহণ করেছেন।
(৯) 'পোহায় রজনী' - অন্ধকার রাত শেষে যে নতুন আশার আলোকোজ্জ্বল দিন আসবে তার চিত্রটি কীভাবে 'ভারততীর্থ' কবিতায় রূপায়িত হয়েছে?
উত্তর - কবি জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে আর্য-অনার্য, হিন্দু-মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান সবাইকে আহ্বান করেছেন। সবার হাত ধরে পতিত-অবহেলিতদের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি চান, ভারতমায়ের নব আভিষেকে, সবার স্পর্শে ধৌত ধরণির ধূলি ধন্য হোক। সম্মিলিত শক্তির ওপর আস্থা রেখে দেশের এই অন্ধকারময় সময়কে অতিক্রম করতে পারলেই ভারত মায়ের অভিষেক ঘটানো সম্ভব হবে। এই আলোকোজ্জ্বল নতুন দিনের জন্যই কবি প্রতীক্ষারত।
(১০) 'মার অভিষেকে এসো এসো ত্বরা' - কবি কাদের ব্যাকুল আহ্বান জানিয়েছেন? কোন্ মায়ের কথা এখানে বলা হয়েছে? একোন্ অভিষেক? সে-অভিষেক কীভাবে সম্পন্ন ও সার্থক হবে?
উত্তর - কবি দেশের সব মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন। আর্য-অনার্য, হিন্দু-মুসলমান, ইংরেজ, শিখ-খ্রিস্টান, ব্রাহ্মণ, শুচি-অশুচি সকলকে একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে মায়ের অভিষেকে অংশ নিতে বলেছেন।
কবি মা বলতে এখানে ভারতমায়ের কথা বলেছেন।
এখানে সমস্তরকম পরাধীনতা, শাসন-শোষণ-অপমান মুছে ফেলে নতুন দিনের অভিষেকের কথা বলা হয়েছে।
জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সমস্ত মানুষের মিলনের মধ্য দিয়ে এই অভিষেক সম্পন্ন হবে। এদেশের মানুষ যখন তাদের সমস্ত বিভেদ ভুলে গিয়ে এক মহামিলনের ক্ষেত্র রচনা করবে, তখনই এই অভিষেক সার্থক হবে।
(১১) টীকা লেখোঃ
ওংকারধ্বনিঃ 'ওঁ' শব্দটি এসেছে সংস্কৃত 'অব' ধাতু থেকে। এর ভিন্ন ভিন্ন উনিশটি অর্থ আছে। শুধুমাত্র হিন্দুধর্মেই নয়; বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ ধর্মের ক্ষেত্রেও 'ওঁ' বা ওংকার ধ্বনি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাই, 'ওংকার' ধ্বনি হল মহামন্ত্র ধ্বনি; যা আমাদের সকল মন্ত্রের মূল মন্ত্র। 'ওংকার' হল সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নাম জপ করার মন্ত্র।
শকঃ প্রাচীনকালে যেসমস্ত বহিরাগত জাতি ভারতবর্ষকে আক্রমণ করেছিল, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল - শক। এরা ছিল মধ্য এশিয়ার প্রাচীন জাতি। চিন সীমান্ত অতিক্রম করে এরা ভারতে প্রবেশ করে। এরা ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে সাম্রাজ্য স্থাপন করে মূলত দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকে। গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত এই শকদের দমন করেন। এরা 'শালিবাহন' নামেই পরিচিত ছিল।
হুনঃ হুনদেরবাসস্থান মধ্য এশিয়ায়। এরা মঙ্গল জাতির একটি শাখা। পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যভাগে এরা ভারত আম্রমণ করে, কিন্তু স্কন্দগুপ্ত এদের প্রতিহত করে। পরবর্তীকালে হুনরা পুনরায় ভারত আক্রমণ করে এবং পাঞ্জাব ও মধ্যপ্রদেশের কিছু অংশ দখল করে। হুনরা ছিল সাংঘাতিক অত্যাচারপ্রবণ, অসভ্য জাতি। মালবের রাজা যশোবর্মন এই দুর্ধর্ষ হুন জাতিদের ধ্বংসসাধন করেন।
মোঘলঃ পাঠান সুলতান কুতুবউদ্দিনের পর ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে কাবুলের বাদশা বাবর পানিপথের যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করে ভারতে মোঘল সাম্রাজ্যের পত্তন করেন। বাবর যে মোঘল সাম্রাজ্য স্থাপন করেছিলেন, তা ঔরঙ্গজেব পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। মোঘলরা ছিল মঙ্গোলিয়ার অধিবাসী তাতার জাতির শাখাবিশেষ। মোঘল নেতা তৈমুর লঙ বহুবার ভারত আক্রমণ করে দিলি দখল ও লুন্ঠন করেচিলেন। বাবর ছিলেন তৈমুর লঙ-এর বংশধর।
দ্রাবিড়ঃ আনুমানিক ৩৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পশ্চিম এশিয়া থেকে দ্রাবিড় জাতির মানুষ ভারতবর্ষে আসেন। সম্ভবত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর আদি বাসস্থান ছিল। দ্রাবিড় ভাষাভাষীর মানুষ মূলত দক্ষিণ ভারত, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কেরল ও কর্ণাটকে বসবাস করেন। সিংহলের তামিলরা দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
ইংরেজঃ ভারতবর্ষে১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়কে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগ বলা হয়। অবশ্য এর আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতকে শাসন করত। ওই সময়ের পর রানি ভিক্টোরিয়া নিজহস্তে ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন। মূলত, ভারতবর্ষে বাণিজ্য করতে এসে, তারা গোটা দেশের শাসন হয়ে ওঠে। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত স্বাধীন হওয়ার আগে পর্যন্ত ভারতসম্রাজ্ঞী ভিক্টোরিয়ার নেতৃত্বে ইংরেজরা এদেশে শাসন চালাত।
(১২) ভারতবর্ষের অতীত ইতিহাসের কথা কবিতায় কীভাবে বিবৃত হয়েছে?
উত্তর - কবি রবীন্দ্রনাথ ছিলেন সত্যদ্রষ্টা কবি। তিনি ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে যা কিছু দেখেছেন তা তাঁর এই ‘ভারততীর্থ' কবিতায় বিবরণ দিয়েছেন। কবি দেখেছেন, দুর্বার স্রোতে পৃথিবীর অসংখ্য দেশের মানুষ ভারতবর্ষের মাটির আকর্ষণে এখানে এসেছে। এখানে আর্য, অনার্য, শক, হুন, পাঠান, মোগল, ইংরাজ ইত্যাদি জাতির মানুষেরা এসে তাদের প্রভুত্ব করে গেছে। আবার, তাদের বংশধরদের এদেশে চিরস্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করে গেছে তারা। এখানে যারা এসেছে তারা ভারতবর্ষের পশ্চিমাঞ্চলের মরুভূমি এবং দুর্গম পার্বত্য পথ অতিক্রম করে রণহুংকার দিয়ে এখানে এসেছে। অনেকে ফিরে গেছে, অনেকে আবার এই দেশের মানুষের ভালোবাসার টান অগ্রাহ্য করতে না পেরে চিরস্থায়ী থেকে গেছে। তাদের সকলের মহামিলনে এ দেশের বুকে জেগে উঠেছে মহামানবের অপার বিস্ময়। অর্থাৎ, অতীতের মুনি-ঋষিদের দেশ ভারতবর্ষ আজ তার রূপ পরিত্যাগ করে নব রূপে সেজে উঠেছে। ভারতবর্ষ হয়ে উঠেছে আজ হাজার জাতি ও উপজাতির মহামিলনের এক মহা বিস্ময়কর তীর্থভূমি।
(১৩) কবির দৃষ্টিতে ভবিষ্যৎ ভারতের যে-স্বপ্নিল ছবি ধরা পড়েছে, তার পরিচয় দাও।
উত্তর - ভারতবর্ষ ছিল একসময় মুনি-ঋষিদের দেশ। অর্থাৎ, এসময় এখানে ছিল আর্যদের বসবাস। তারপর ক্রমে ক্রমে পৃথিবীর অসংখ্য স্বার্থান্বেষী দুর্ধর্ষ জাতি এসে ভারতের মাটি দখল করে। ভারতবর্ষের আদিরূপ হারিয়ে যায়। কবি অতীতের আলোকে তাই ভারতবর্ষের ভবিষ্যৎ দর্শন করেছেন। কবি রবীন্দ্রনাথ দেখেছেন আগামী ভারতবর্ষ এক স্বপ্নময় ভারতবর্ষে পরিণত হবে। তিনি যথার্থই অনুভব করেছেন যে, পৃথিবী যেহেতু নিত্যই পরিবর্তনশীল সেহেতু আগামী দিনে ভারতবর্ষেও সেই পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে বাধ্য। কবি তাঁর জীবিত অবস্থায় ভারতবর্ষের মাটিতে শতশত লাঞ্ছনা ও নিপীড়ন প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি সেই সকল যন্ত্রণা নীরবে সহ্য করে স্পষ্ট বুঝেছেন শীঘ্রই ভারতবর্ষের শত সহস্র জাতি পরস্পর হাত ধরাধরি করে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ধ্বনি তুলবে এবং ইংরেজ শাসকদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করে প্রতিষ্ঠা করবে নতুন এক স্বপ্নময় ভারতবর্ষ।
কবি রবীন্দ্রনাথ ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভের প্রায় সাত বছর আগেই দেহত্যাগ করেছেন। কিন্তু তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়েছে। ভারতের মাটিতে নব জীবনের উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতবর্ষ আজ পৃথিবীর এক মহা শক্তিশালী দেশ।
১৪. বাক্যে প্রয়োগ করো :
উত্তর –
উদার | বিদ্যাসাগর মহাশয় ছিলেন অত্যন্ত উদার চরিত্রের মানুষ। |
ধৃত | ধৃত চোর কিভাবে পালিয়েছে কেউ জানে না। |
পবিত্র | পবিত্র এই ভারতভূমিতে যুগে যুগে অসংখ্য মনীষী জন্মগ্রহণ করেছেন। |
লীন | মৃত ভালো মানুষের আত্মা পরমাত্মায় লীন হয়ে গেছে। |
মন্ত্র | ভারতের প্রতিটি মন্দিরে মন্ত্র উচ্চস্বরে উচ্চারিত হয়। |
অনল | দুঃখের অনল যাকে গ্রাস করে সে সহজে সুখ পায় কি? |
বিপুল | বিপুল এই ভারতবর্ষের অধীশ্বর ছিলেন সম্রাট অশোক। |
বিচিত্ৰ | মহা বিচিত্র আমাদের এই ভারতভূমি। |
সাধনা | শিক্ষা হল শিক্ষার্থীদের জন্য চূড়ান্ত সাধনা। |
জয়গান | আমরা সর্বদা আমাদের ভারত মাতার জয়গান গাইব। |
১৫. প্রতিশব্দ লেখো :
উত্তর :
সাগর | সিন্ধু | পারাবার | জলধি | রত্নাকর | বারীশ | বারিধি। |
ধরিত্রী | পৃথিবী | বসুমতী | ধরণি | ক্ষেত্র | বসুন্ধরা | ভূমণ্ডল। |
ভূধর | হিমাচল | পাহাড় | অচল | নগ। | | |
হিয়া | চিত্ত | মন | অন্তঃকরণ | মর্ম | হৃপিণ্ড। | |
রজনী | ত্রিযামা | নিশা | নিশি | রাত। | | |
নীর | অশ্রু | চোখের জল | | | | |
১৬. ‘শালা’ শব্দের অর্থ গৃহ, আগার। ‘যজ্ঞশালা'র অনুরূপ ‘শালা’ পদযুক্ত আরও পাঁচটি শব্দ লেখো।
উত্তর : পাঠশালা, রন্ধনশালা, ধর্মশালা, পাকশালা, গোশালা।
১৭. ‘নীচের পক্তিগুলি গদ্যবাক্যে লেখো :
১৭.১ দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে, সমুদ্রে হলো হারা।
উত্তর - দুর্বার স্রোতে কোথা থেকে এলো, সমুদ্রে হারিয়ে গেল।
১৭.২ উদার ছন্দে পরমানন্দে বন্দন করি তাঁরে।
উত্তর - উদার ছন্দে পরম আনন্দে তাঁর বন্দনা করি।
১৭.৩ হৃদয়তন্ত্রে উঠেছিল রণরণি।
উত্তর - হৃদয়ের মাঝে যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠেছিল।
১৭.৪ হেথায় নিত্য হেরো পবিত্র ধরিত্রীরে।
উত্তর - এখানে প্রতিদিন পবিত্র এই পৃথিবীকে দর্শন করো।
১৭.৫ হেথায় সবারে হবে মিলিবারে আনত শিরে।
উত্তর - এখানে সকলকে নত মস্তকে মিলিত হতে হবে।
১৮. বিশেষ্যগুলিকে বিশেষণে ও বিশেষণগুলিকে বিশেষ্যে পরিবর্তিত করো :
চিত্ত, পুণ্য, পবিত্র, এক, দ্বার, বিচিত্র, তপস্যা, দুঃখ, জয়, জন্ম, শুচি, লাজ
বিশেষ্য | বিশেষণ |
চিত্ত | চিত্তগ্রাহী |
তপস্যা | তপস্যারত |
পুণ্য | পুণ্যবান |
দুঃখ | দুঃখিত |
পবিত্রতা | পবিত্র |
জয় | জয়ী |
এক | ঐক্য |
জন্ম | জন্মগত |
দ্বার | দ্বারস্থ |
শুচিতা | শুচি |
বিচিত্রতা | বিচিত্র |
লাজ | লাজুক |
১৯. সন্ধি বিচ্ছেদ করো :
উত্তর :
পরমানন্দ = পরম + আনন্দ।
দুর্বার = দুঃ + বার।
ওংকার = ওম্ + কার।
হোমানল = হোম + অনল।
দুঃসহ = দুঃ + সহ ।
২০. বিপরীতার্থক শব্দ লেখো :
পুণ্য | পাপ |
ধীর | অধীর |
ধৃত | পলাতক |
আহ্বান | বিসর্জন |
বহু | এক |
অপমান | অভিনন্দন |
বিপুল | সামান্য, অল্প, ক্ষুদ্র। |
ত্বরা | বিলম্ব |
দুর্বার | দমনীয় |
বিচিত্র | বৈচিত্র্যহীন,একঘেয়ে |
<< Read More >>
Class 7 All Subject Solution >>