স্বাধীনতা (Swadhinata) অনুশীলনী প্রশ্ন উত্তর | Class 8 | WBBSE

স্বাধীনতা (Swadhinata) অনুশীলনী প্রশ্ন উত্তর | Class 8 | WBBSE


স্বাধীনতা


নামকরণ

নামকরণ হয় কখনাে বিষয়কেন্দ্রিক, কখনাে উপমাধর্মী, কখন বা চরিত্রকেন্দ্রিক নামকরণ যখন বিষয়কেন্দ্রিক হয় তখন তার মধ্যে লুকিয়ে থাকে বিষয়ের সারমর্মতা আমেরিকান কবি ল্যাংস্টন হিউজের লেখা ইংরেজি ভাষার কবিতাটি কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় মুকুল গুহ বাংলায় তরজমা করেছেন কবিতাটির নামকরণ হয়েছে স্বাধীনতা অর্থাৎ, সমগ্র কবিতায় মানুষের অন্তসত্ত্বার স্বাধীনতা প্রাপ্তির তীব্র আকাঙ্খ বারবার অনুরণিত হয়েছে কবিতাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, কবি যেমন বলতে চেয়েছেন, স্বাধীনতা মানে নিজের অধীন হওয়া। প্রত্যেকের প্রয়োজনের মূল্যে আপনার জীবনযাপন করুন। এটা মানুষের জন্মগত অধিকার। এই শব্দগুলি এই কবিতার সমস্ত অংশ জুড়ে। কবিতার শুরু, মধ্য ও শেষে স্বাধীনতা এবং সে জন্য কবি স্পষ্ট ও দৃঢ় মতামত ব্যক্ত করেছেন।পরাধীন মানুষের কাছে, জীবনে বেঁচে থাকার জন্য এই অভিমত ভীষণ প্রয়ােজন স্বাধীনতা ছাড়া মানুষের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ, চাহিদা মানসিকতার সমৃদ্ধি ঘটে কবিতায় সে কথাই বারবার উচ্চারিত হয়েছে বিষয়গত তাৎপর্যগতভাবে স্বাধীনতা কথাই বারবার আন্দোলিত হয়েছে তাই কবিতাটির নামকরণ সার্থক

 

১১ ল্যাংস্টন হিউজের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী ?

উত্তর - ল্যাংস্টন হিউজের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম 'The Weavy Blues'.

 

. তিনি কোন দেশের রেনেসাঁসের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত ?

উত্তর - তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্লেম রেনেসাঁসের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত

 

২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখাে :


. স্বাধীনতা' বলতে কী বােঝাে ? কী কী বিষয়ে মানুষের স্বাধীনতা প্রয়ােজন বলে তুমি মনে করাে ?

উত্তর - স্বাধীনতাএকটা ধারণা স্বাধীনতাবলতে বােঝায়, নিজের অধীনে থাকা ব্যক্তির স্বাতন্ত্র্য স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রেখে বেঁচে থাকাই স্বাধীনতা কোনাে দেশের স্বাধীনতা কেবল স্বজাতীয় শাসকের অধীনে বসবাস করাকে বােঝায় না দেশের শাসক শ্রেণি স্বদেশবাসীর বৈশিষ্ট্যকে নিজের ক্ষমতায় দমন করলেও স্বাধীনতা লাভ হয় না

নানা বিষয়ে মানুষের স্বাধীনতা প্রয়ােজন যেমন- বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, লেখাপড়া, ব্যাবসাবাণিজ্য ইত্যাদি বিষয়ের স্বাধীনতা প্রভৃতি ছাড়া অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি মৌলিক চাহিদার ব্যাপারেও মানুষের স্বাধীনতা থাকা প্রয়ােজন

 

. মানুষ পরাধীন হয় কখন ?

উত্তর - মানুষ অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে না-দাঁড়ালে কিংবা মুখ বুজে সব কিছু মেনে নিলে পরাধীন হয় অন্যভাবে বলা যায়, শাসকশ্রেণির অত্যাচার অন্যায়কে প্রতিরােধ না-করে তাদের বশ্যতা স্বীকার করলে মানুষ পরাধীন হয় এককথায়, মানুষের নিজস্বতা বিসর্জনই হল পরাধীন হওয়া

 

. পরাধীন মানুষের স্বাধীনতা পাওয়ার পথগুলি কী কী ?

উত্তর - পরাধীন মানুষের স্বাধীনতা পাওয়ার প্রধান পথগুলি হলশিক্ষা, আত্মমর্যাদাবােধ, জগৎ জীবন সম্পর্কে সচেতনতা শিক্ষালাভের দ্বারা মানুষ দেশ দশের স্বরূপ বুঝে নিতে পারে তার মাধ্যমে গড়ে ওঠে প্রকৃত মর্যাদাবােধ আর তার দ্বারা সে পরাধীন মানুষের মনে আত্মশ্রদ্ধা, গৌরববােধ কল্যাণকে জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয় তার শাসক শ্রেণির সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলােচনার মাধ্যমে হারানাে স্বাধীনতাকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে এই প্রচেষ্টা সফল না হলে সুসংগঠিত, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনতে হবে সবাইকে নিজের বিষয়ের প্রতি সচেতন হতে হবে এবং পরস্পর পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে কোনাে প্রলােভনে ভুললে হবে , কোনাে অবস্থাতেই হতাশ হওয়া চলবে না সবশেষে প্রবল জাতীয়তাবােধ, দেশ জাতির প্রতি ভালােবাসাই স্বাধীনতালাভের প্রকৃতি পথ হয়ে ওঠে


.স্বাধীনতা' কবিতাটির মধ্যে দুটি পক্ষ আছে— ‘আমি-পক্ষআরতুমি-পক্ষ এইআমি-পক্ষআরতুমি-পক্ষ’–এর স্বরূপ বিশ্লেষণ করাে এই ক্ষেত্রেসে-পক্ষনেই কেন ?

উত্তর - আমি-পক্ষএখানে পরাধীন মানুষ, যারা অত্যাচারিত, শাসিত-শােষিত, বতি আর 'তুমি-পক্ষঅত্যাচারী, সুখভােগী, শাসক-শােষক-প্রভু সম্প্রদায়

কবির বক্তব্য সরাসরি দুটি পক্ষকে নিয়ে আমিপক্ষে আছে পরাধীন অত্যাচারিতরা আর তুমি-পক্ষে আছে সাম্রাজ্যবাদী, অত্যাচারী অন্যের স্বাধীনতা হরণকারীরা সে-পক্ষ সমাজের মধ্য স্বত্ত্বভােগীর মতাে তারা সরাসরি কাজে যুক্ত হয় না যেহেতু কবিতাটিতে অভিযােগকারী অভিযুক্ত সরাসরি অবতীর্ণ তাই তৃতীয় 'সে পক্ষএখানে অপ্রয়ােজনীয় একারণেই কবিতায় 'সে পক্ষনেই

 

. সময়ে/সবই হবে, কাল একটা নূতন দিন -কবিতার মধ্যে উদ্ধৃতিচিহ্নের ভিতরে থাকা কথাটি কার/কাদের কথা বলে তােমার মনে হয় ? তাঁরা ধরনের কথা বলেন কেন ?

উত্তর - মার্কিন কবি ল্যাংস্টন হিউজেরস্বাধীনতাকবিতা থেকে নেওয়া উদ্ধৃতিচিহ্নের ভিতরে থাকা কথাটি শাসকের বলে আমার মনে হয়

শাসক তার দলের সুবিধাভােগী আপাত বুদ্ধিজীবী, দার্শনিক, সমাজতত্ত্ববিদ, কবি-শিল্পীরা মানুষের সমবেত প্রতিবাদকে বন্ধ করতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন তাঁরা স্বাধীনতাকামী মানুষকে বােঝাবার চেষ্টা করে, সময়ে সবই হবে, একটা নূতন দিন আসছে দীর্ঘসূত্রতার সুযােগ নিয়ে তারা নিপীড়িত অত্যাচারিতদের প্রবােধ দেয় আসলে তারা সময় নিয়ে প্রতিবাদীদের লক্ষ্যকে নিস্তেজ করে দিতে সচেষ্ট হয় প্রতিবাদমুখর আন্দোলনকারী যাতে সােচ্চার কণ্ঠে নিজেদের স্বাধীনতা সুবিধার কথা বলে, শাসক তাঁর অনুবর্তীদের বিব্রত বা অতিষ্ঠ না-করে, তাদের সুখ-সমৃদ্ধি শান্তির ব্যাঘাত না-ঘটায়, সেকারণেই তাঁরা এধরনের কথা বলেন এভাবেই তাঁরা ক্ষমতা দখলে রাখতে চায়

 

. আগামীকালের রুটি/দিয়ে কি আজ বাঁচা যায়’ -এখানেআগামীকালআরআজবলতে কী বােঝানাে হয়েছে ?

উত্তর -  ল্যাংস্টন হিউজেরস্বাধীনতাকবিতা থেকে নেওয়া উদ্ধৃত পঙক্তিরআগামীকালআজশব্দ দুটি গভীর তাৎপর্যবাহী আগামীকালের অর্থ হল, পরাধীন মানুষের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার স্বপ্ন মাত্র কিন্তু স্বপ্ন নিয়ে কোনাে জাতি বাঁচাতে পারে না আগামীর স্বপ্ন মানুষকে উজ্জীবিত করে তাকে বাঁচিয়ে রাখে স্বাধীনতাকামী মানুষ আগামীকালের তত্ত্বকথায় আস্থা রাখতে পারে না তারা বুঝতে পারে, আজকের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আগামীকালের সমৃদ্ধিকে প্রতিষ্ঠা দেবে

 আজশব্দটির মাধ্যমে কবি বর্তমান সমাজের সমস্যা জর্জরিত পরাধীন মানুষ তাদের চরম দৈন্যদশাকে ব্যক্ত করেছেন পরাধীনতার গ্লানি যে মানুষকে পীড়িত করছে, সে তৎক্ষণাৎ রেহাই পেতে চায় যেখানে মানবিকতা লুণ্ঠিত, তাকে আজই মুক্ত করা প্রয়ােজন অকারণ সময় নষ্ট করা অনুচিত পরাধীন মানুষ তাই স্তোকবাক্য বা আগামীর স্বপ্ন চায় না তারা আজই এই অবৃথার থেকে মুক্তি চায়

 

৩. নিম্নলিখিত পংক্তিগুলির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে :


. "মৃত্যুর পরে তাে আমার প্রয়ােজন হবে না"

উৎস: উদ্ধৃতাংশটি ল্যাংস্টন হিউজেরস্বাধীনতা নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে

তাৎপর্য: এখানে কবি বলতে চেয়েছেন, মানুষের জীবনের সমাপ্তি ঘটে মৃত্যুতে তখন সে দেহ প্রাণহীন এবং তা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার অপেক্ষায় অর্থাৎ, সে দেহ এমনিতেই মুক্ত তাই কবি মৃত্যুর পরে স্বাধীনতার প্রয়ােজন বােধ করেন না

 

. "স্বাধীনতা একটা শক্তিশালী বীজপ্রবাহ"

উৎস: উদ্ধৃতাংশটি ল্যাংস্টন হিউজেরস্বাধীনতা কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে

তাৎপর্য: এখানে কবি ল্যাংস্টন হিউজ বলতে চেয়েছেন, স্বাধীনতা একটি প্রবাহ প্রবাহ বলতে স্রোত বা ধারা বােঝায় যেমন, নদীস্রোত বা নদীর জলের ধারা এই স্রোত বা ধারা বিচ্ছিন্ন হয় না কখনও তা বয়েই চলে স্বাধীনতা তেমনই একটি বীজপ্রবাহ কারণ, বীজের মধ্যে থাকে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অর্থাৎ, আগামীর সম্ভবনা যেহেতু স্বাধীনতার বিষয়টি মানুষের সেই লড়াই বা সংগ্রামের চিরাচরিত ইতিহাসের প্রবহমানতাকেই ইঙ্গিতপূর্ণ করে তুলেছে, তাই কবিশক্তিশালী বীজপ্রবাহকথাটি ব্যবহার করেছেন

 

.আমাদেরও তাে অন্য সকলের.... জমির মালিকানার

উৎস: উদ্ধৃতাংশটি ল্যাংস্টন হিউজের লেখাস্বাধীনতাকবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে

তাৎপর্য : এখানে কবি এই পৃথিবীর ওপর সকল মানুষের সমান অধিকারের কথা বলেছেন পৃথিবী হল- মহাশূন্যের একটি গ্রহ এই গ্রহের জল-মাটিতে সকলেই জন্মেছে সুতরাং, তা কারাের নিজস্ব হতে পারে না কিন্তু, মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ শক্তি বুদ্ধিবলে অন্যদের সমানাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায় সেইজন্য কবি সেইসব বিশেষ সুবিধাবাদী, সুখভােগী শাসকদের ইঙ্গিত করে বলেছেন, তাদের মতােই আমাদেরও সমস্ত কিছুতে অধিকার আছে আর আছে দু-পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার কিংবা দু-কাঠা জমির মালিকানার অধিকার

 

. "স্বাধীনতা আমার প্রয়ােজন / তােমার যেমন"

উৎস: ল্যাংস্টন হিউজ-এরস্বাধীনতাকবিতা থেকে পঙক্তিটি উদ্ধৃত হয়েছে

তাৎপর্য: এই পঙক্তির মধ্য দিয়ে কবি বলতে চেয়েছেন, পৃথিবীতে সকলেরই সমস্ত কিছুতে সমান অধিকার রয়েছে বিশেষ এক শ্রেণির মানুষ সুখভােগ করবে, অন্যের ওপর প্রভুত্ব বিস্তার করবে, তা হতে পারে না সেজন্য সেইসব মানুষের সব কিছুতে স্বাধীনতা বা অধিকারের প্রয়ােজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়ে কবি নিজেদের স্বাধীনতার প্রয়ােজনকে সমানভাবে তাৎপর্যমন্ডিত করে তুলেছে


৪. নীচের প্রতিটি শব্দের ব্যাসবাক্য-সহ সমাস নির্ণয়  করাে :

স্বাধীনতা - স্ব-এর অধীনতাসম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস

দু-কাঠা - দুই কাঠার সমাহারদ্বিগু সমাস

আগামীকাল - আগামী যে কালসাধারণ কর্মধারয় সমাস

বীজপ্রবাহ - বীজ রূপ প্রবাহরূপক কর্মধারয় সমাস

 

৫. স্বাধীনতা নিয়ে লেখা আরও দুটো কবিতার উল্লেখ করাে এবং এই কবিতার সঙ্গে তাদের তুলনামূলক আলােচনা করাে:

উত্তর - স্বাধীনতা নিয়ে লেখা আরও দুটি কবিতা হলকবি মুকুন্দদাসেরকরমের যুগ এসেছে এবং রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়েরস্বাধীনতা

স্বাধীনতাকবিতার সঙ্গে বাকি দুটি স্বাধীনতা-বিষয়ক কবিতার মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকলেও সাদৃশ্যই বেশি আছেকরমের যুগ এসেছে-তে আছে-কেউ বসে নেই, সকলেই স্বাধীনতার জন্য জেগে উঠেছে সকলের কণ্ঠে একই উচ্চারণ ধ্বনি, মানী, দুঃখী, দীন সকলেই সমান কেউই ছােটো নয়

 রঙ্গলালবন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাধীনতা কবিতায় আছে স্বাধীনতা ছাড়া কেউ বাঁচতে চায় না দাসত্বের শিকল কেউ পায়ে পরতে চায় না দীর্ঘকাল দাসত্ব মানে নরকযন্ত্রণা ভােগ করা একদিনের জন্যও যদি স্বাধীনতা পাওয়া যায়, তবে তা স্বর্গসুখের সমান সবশেষে বলা যায়, ল্যাংস্টন হিউজের কবিতা বিদেশের, আর মুকুন্দ দাস রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা এই ভারতের এই পার্থক্য ছাড়া মূল বক্তব্য সকলেরই প্রায় একপরাধীনতা থেকে মুক্তিলাভ


<< Read More >>

 

Class 8 All Subject Solution >>

Click Here

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post