পরাজয় (Porajoy) অনুশীলনী প্রশ্ন উত্তর | Class 8 | WBBSE
পরাজয়
নামকরণ
সাহিত্যে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার । এই নামকরণের মাধ্যমেই গল্পের মূল বিষয় পাঠকের কাছে উদ্ভাসিত হয় । সাহিত্যে বিশেষত বাংলা সাহিত্যে বিভিন্ন ধরনের নামকরণ অনুসৃত হয় । আলোচ্য গল্পে দেখি , রঞ্জন সরকার একজন ফুটবল খেলোয়াড় । যে জীবন দিয়ে ভালোবেসেছিল ফুটবল খেলাকে এবং নিজের ক্লাবকে । কিন্তু সেই ক্লাবের লোকেরাই তাদের বারপুজোয় তাকে আমন্ত্রণ না করলে এবং প্রতিবারে মতো গাড়ি না পাঠালে সে অপমানিত বোধ করে । অনেক ভেবেচিন্তে তিনি সিদ্ধান্ত নেন অন্য ক্লাবে যোগ দেবেন। এমনই আরেকটি ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। কিন্তু যখন এটি প্রকাশ্যে আসে, তখন তার ক্লাবের পুরোনো সদস্য এবং পরামর্শদাতারা হতবাক হয়ে যান। কিন্তু রঞ্জন তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে এবং এভাবে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পায়।যুবভারতীতে তার পুরানো দলের সঙ্গে ম্যাচ শুরু হয় এবং রঞ্জন দারুণ খেলে একটি গোলে জয়লাভ করে । কিন্তু এই জয়ে সকলে উল্লসিত হলেও রঞ্জন কিন্তু সাজঘরে বসে দু - হাতে - মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পড়ে । কারণ এটা সে চায়নি , জীবনের যুদ্ধক্ষেত্রে তার জয়লাভ ঘটলেও নিজের মনের কাছে সে পরাজিত হয় । তাই আলোচ্য গল্পটির ব্যঞ্জনাধর্মী ‘ পরাজয় ' নামটি সর্বাংশে সার্থক ও সুপ্রযুক্ত হয়েছে ।
১.১. শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম বইয়ের নাম লেখো ।
উত্তর । শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম বই ‘ দেরারি ’ । এটি একটি উপন্যাস ।
১.২. কলকাতার ফুটবল নিয়ে লেখা তাঁর দুটি বইয়ের নাম লেখো ।
উত্তর । কলকাতার ফুটবল নিয়ে তাঁর দুটি বই হলো। ক্লাবের নাম মোহনবাগান ’ এবং ‘ ক্লাবের নাম ইস্টবেঙ্গল ।
২. নীচের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর একটি বাক্যে লেখো :
২.১ এত দুঃখ এত ব্যথা সে কখনও পায়নি ।'— এখানে কার দুঃখ বেদনার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তর । এখানে গল্পের প্রধান চরিত্র খেলোয়াড় রঞ্জন সরকারের দুঃখ বেদনার কথা বলা হয়েছে ।
২.২ ' রঞ্জনদা তুমি কাল ক্লাবে যাওনি ? ‘— এই প্রশ্নের উত্তরে রঞ্জন কী বলেছিল ?
উত্তর । প্রশ্নটির উত্তরে রঞ্জন বলেছিল যে সে আগের দিন কলকাতার বাইরে গিয়েছিল । তাই সে বারপুজোর দিন মাঠে যেতে পারেনি ।
২.৩ গঙ্গার পাড়ে গিয়ে কোন্ দৃশ্য রঞ্জনের চোখে ভেসে উঠল ?
উত্তর । গঙ্গার বুকে কয়েকটা ছোটো বড়ো জাহাজ নোঙর করে দাঁড়িয়ে আছে ।
২.৪ ' সিদ্ধান্তটা নেওয়ার পর রানের মন অনেকটা শান্ত হলো ' ।— এখানে রানের কোন সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে ?
উত্তর । ফুটবলার রঞ্জন সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুদিনের মধ্যে ক্লাবের কেউ যোগাযোগ না করলে সে ক্লাব ছেড়ে দেবে , কিন্তু খেলা ছাড়বে না — সে প্রমাণ করে দেবে , যে সে ফুরিয়ে যায়নি ।
২.৫ ‘ ঘোষদা একটা বড়ো খবর আছে ' — কী সেই ' বড়ো ' খবর ?
উত্তর । ‘ বড়ো ’ খবর হলো রঞ্জন সরকার তাঁর দীর্ঘদিনের ক্লাব ছেড়ে স্বপনবাবুদের ক্লাবে আসতে চাইছে ।
২.৬ রানের দলবদল করার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে টনক নড়েছিল ক্লাব কর্তাদের ’ — কীভাবে ক্লাবকর্তাদের যে টনক নড়েছে তা বোঝা গেল ?
উত্তর । রঞ্জনের ক্লাব বদল করার সংবাদে ক্লাবকর্তারা রঞ্জনের বাড়ি ছোটাছুটি শুরু করলেন ও জনে জনে ফোন করতে আরম্ভ করলেন । রঞ্জন সেসব খেলোয়াড়দের ছোটো ভাইয়ের মতো দেখে তাদের লাগানো হলো তার মত বদল করানোর জন্য ।
২.৭ ' ব্যাপারটা কী হলো বুঝতে একটু সময় লাগল সমর্থকদের ' — এখানে কোন ব্যাপারটির কথা বলা হয়েছে ?
উত্তর । রঞ্জনের চকিতে ব্যাকভলিতে গোল করার ব্যাপারটার কথা বলা হয়েছে ।
২.৮ ' দুহাতে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়ল একটা বেঞ্চিতে ।'— স্ট্রাইকার রঞ্জন সরকারের এভাবে শুয়ে পড়ার কারণ কী ?
উত্তর । সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সত্যি কথা সে বলতে পারবে না তাই রঞ্জন পাশের ঘরে গিয়ে দুহাতে মুখ ঢেকে একটা বেঞ্চিতে শুয়ে পড়ল ।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও :
৩.১ একটু আগে ও সবকটা কাগজে বারপুজোর রিপোর্ট পড়েছে । — এখানে ‘ ও ’ বলতে কার কথা বোঝানো হয়েছে ? সে সবকটা কাগজে একই বিষয়ে রিপোর্ট পড়ল কেন ?
উত্তর । এখানে ‘ ও ’ বলতে খেলোয়াড় রঞ্জন সরকার - এর কথা বোঝানো হয়েছে । কলকাতার একটি বিখ্যাত ক্লাবের দীর্ঘদিনের দক্ষ ফুটবলার ও ক্লাবের একান্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে ক্লাবের বারপুজোয় রঞ্জুনের আমন্ত্রণ পাওয়াটাই স্বাভাবিক । কিন্তু এবছর মহাসমারোহে বারপুজো পালিত হলেও তাকে একটা টেলিফোন করেও নিমন্ত্রণ করা হয়নি । এই কারনে দুঃখ ও অভিমানে তার মন ভরে ছিল । তাই কিঙ্খিত আশা নিয়েই রঞ্জন সবকটি কাগজে বারপুজোর রিপোর্ট পড়ছিল যদি তাকে নিয়ে বা তার এবছর ফুটবল টিমে যোগদান বিষয়ে কোনো লেখা বেরিয়ে থাকে । অপমানের যন্ত্রণা থেকেই সে সবকটা কাগজে একই বিষয়ের রিপোর্ট পড়ছিল ।
৩.২. ওকে নিয়ে মাতামাতি ঠিক আগের মতো নেই ।'— আগে ' ওকে নিয়ে কী ধরনের মাতামাতি হতো ?
উত্তর । আগে প্রতি বছর ফোনের পর ফোন আসত — প্রেসিডেন্ট , সেক্রেটারি , ফুটবল সেক্রেটারি সকলেই বারপুজোয় যাওয়ার জন্য ফোন করতেন । বাড়িতেও নিতে আসতেন কেউ কেউ । তারপর পয়লা বৈশাখে সাতসকালে ক্লাব থেকে মাঠে আসার গাড়ি রঞ্জনের বাড়িতে এসে হাজির হতো । স্নান সেরে রঞ্জন বেরিয়ে পড়ত ক্লাবের উদ্দেশ্যে । আগে রঞ্জন সরকারকে নিয়ে এই ধরনের মাতামাতি হতো ।
৩.৩ ঠিক এক বছর আগের ঘটনা ।'— একবছর আগে কোন্ ঘটনা ঘটেছিল ?
উত্তর । ঠিক এক বছর আগেও রঞ্জনের পুরোনো ফুটবল সেক্রেটারি ও কোচ এসে রানের সঙ্গে দল গড়া নিয়ে আলোচনা করেছিলেন । কাকে কাকে দলে আনা হবে তাই নিয়ে ওর পরামর্শ চেয়েছিলেন । এঁদের সঙ্গে কথাবলার পর রপ্তনের মনে জমে ওঠা মেঘ কেটে গিয়েছিল ।
৩.৪ ' রপ্তন সারাটাদিন আর বাড়ি থেকে বেরোয়নি ।'— কোনদিনের কথা বলা হয়েছে ?
উত্তর । পয়লা বৈশাখে ক্লাবের বারপুজোর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় রপ্তন দীর্ঘদিনের ক্লাবের ঘনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে এতটাই মানসিক কষ্ট পেয়েছিল , যে রাগে , দুঃখে ও অভিমানে সেইদিন আর বাড়ি থেকে হালখাতা করতেও বেরোয়নি । এখানে সেই দিনটির কথা বলা হয়েছে ।
৩.৫ ' রঞ্জন নামগুলো পড়ার চেষ্টা করে ।'- রসুন কোন নামুগুলি পড়ার চেষ্টা করে ?
উত্তর । রঞ্জন অফিস থেকে বেরিয়ে গঙ্গার ধারে একটি পার্কের বেঞ্চে বসে গঙ্গায় দূরে নোঙর করা কটা ছোটো বড়ো জাহাজ দেখতে পায় । সে সেই জাহাজগুলির নাম পড়ার চেষ্টা করে ।
৩.৬ ' রঞ্জন টেলিফোনটা রেখে দিল ।'— কোন কথা শুনে রঞ্জন টেলিফোনটা রেখে দিলো ?
উত্তর । বারপুজোর দুদিন কেটে যাওয়ার পর তৃতীয় দিন রাত্তিরে রঞ্জন অন্য বড়ো ক্লাবের সেক্রেটারি স্বপনদার সাথে কথোপকথন শুরু করে । টেলিফোনে স্বপনবাবু বুঝে নেন রপ্তনের মনের অবস্থা । তিনি বলেন যে তিনি আধঘণ্টার মধ্যেই আসছেন । এই কথা শুনে রঞ্জন টেলিফোনটা রেখে দিল ।
৩.৭ সত্যি ওরা তোমার সঙ্গে উচিত কাজ করেনি ' — কোন অনুচিত কাজের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে ?
উত্তর । ক্লাবের সুখে - দুঃখে জড়িত দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রখনকে এবছর হঠাৎ করে ক্লাবের বারপুজোতে আমন্ত্রণ না করে তার প্রতি ক্লাব কর্তারা যে অসহিয়ূ আচরণ করেছেন । রঞ্জনের এতদিনের পুরোনো ক্লাবের এই অনুচিত কাজের কথাই এখানে বলা হয়েছে ।
৩.৮ ' মন স্থির করে ফেলেছ তো ? ‘— উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কোন বিষয়ে মন স্থির করে ফেলেছে ?
উত্তর । ক্লাবের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রঞ্জনের সঙ্গে এবছর ক্লাব যে আচরণ করেছে , তার পরিপ্রেক্ষিতে অন্য বড়ো ক্লাবে যোগদান করার বিষয়ে রপ্তন মনস্থির করে ফেলেছে ।
৩.৯ ' আপনি সব ব্যবস্থা করুন ।'- কোন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে ?
উত্তর । দীর্ঘদিন ক্লাবের অতি ঘনিষ্ঠ অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রঞ্জন সরকার ক্লাবের কাছ থেকে যে অপমানসূচক ব্যবহার পেয়েছে, তার কারণে সে নতুনভাবে অন্য বড়ো ক্লাবে যোগদান করবে — তাঁর সিদ্ধান্ত কেউ বদলাতে পারবে না । তাঁর এই মনোভাব নিশ্চিত বোঝাবার জন্য সে অন্য বড়ো ক্লাবের সেক্রেটারি স্বপনদাকে তাদের ক্লাবের খেলোয়াড় হিসেবে যোগদানের ব্যবস্থা নেওয়ায় অনুরোধ জানিয়েছে ।
৪. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
৪.১ ' রাগে ফুঁসছিল রঞ্জন ’ - তার এই রাগের কারণ কী ?
উত্তর । কলকাতার একটি নামী ফুটবল ক্লাবের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় রঞ্জন সরকার ক্লাবের জন্য অনেক অবদান রেখেছে । পনেরো বছর ধরে সে ক্লাবের সুখে - দুঃখে জড়িয়ে আছে । শত প্রলোভনেও সে ক্লাব ছেড়ে যায়নি । লক্ষ লক্ষ টাকার অফার , বিশাল চাকরির হাতছানি সে হাসতে হাসতে ফিরিয়ে দিয়েছে । কিন্তু এবছর বারপুজোয় তাকে একবারের জন্যও ডাকা হলো না । এমনকি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা পয়লা বৈশাখে ক্লাবের বারপুজো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত খেলোয়াড়দের নিয়ে যে দল তৈরির রিপোর্ট প্রকাশিত হয় সেগুলি ও রপ্তন খুঁটিয়ে পড়েছে । তাতে কোথাও রঞ্জনের সম্বন্ধে কোনো কথা লেখা নেই । ক্লাবের এই দুর্ব্যবহারে রঞ্জন রাগে ফুঁসছিল ।
৪.২ ' এত দুঃখ , এত ব্যথা সে কোথাও পায়নি - এই দুঃখ - যন্ত্রণার দিনে কীভাবে অতীতের সুন্দর দিনগুলির কথা রঞ্জনের মনে এসেছে ?
উত্তর । দীর্ঘ পনেরো বছর ক্লাবের একজন একনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে অবদান রাখার পর এবছর ক্লাবের তার প্রতি উদাসীন ব্যবহারে ব্যথিত রঞ্জনের অতীতের সোনালি দিনগুলির স্মৃতি মানসপটে ভেসে ওঠে । আগে প্রত্যেক বছর পয়লা বৈশাখে বারপুজোর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য ক্লাব প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে ক্লাব সেক্রেটারি , গেম সেক্রেটারি সকলের ফোনের পর ফোন আসতে থাকত । বাড়িতেও আমন্ত্রণ করতে আসতেন কেউ কেউ । এরপর পয়লা বৈশাখের দিনে সকালে মাঠে যাবার গাড়ি এসে হাজির হতো রঞ্জনকে বিশেষ আপ্যায়ন করে নিয়ে যাবার জন্য । আজ খেলোয়াড় জীবনের অন্তিম লগ্নে এসে ক্লাবের এই ব্যবহারে হতাশ হয়ে রঞ্জনের অতীতের সেই সুন্দর দিনগুলির কথা মনে আসে ।
৪.৩ রঞ্জনের ক্লাবের সঙ্গে তার পনেরো বছরের সম্পর্ক কীভাবে ছিন্ন হলো ? এই বিচ্ছেদের জন্য কাকে তোমার দায়ী বলে মনে হয় ?
উত্তর । দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় হিসেবে ক্লাবে থাকার পর এ বছর পয়লা বৈশাখে বারপুজোর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় দুঃখিত মনে রঞ্জনের কলকাতার অন্য একটি বড়ো ক্লাবে যোগদানের মাধ্যমে রঞ্জনের ক্লাবের সঙ্গে তার পনেরো বছরের সম্পর্ক ছিন্ন হলো । যে কোনো বড়ো ক্লাবেই প্রতিবছর দলবদলের পালা আসে । উঠতি নামী খেলোয়াড়দের নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যায় । সেই সুযোগে অনেক উঠতি খেলোয়াড়ও দাম হাঁকিয়ে বসে এবং ক্লাবে সই করে । পরের বছর অন্য ক্লাবে বেশি টাকার অফার পেলে আগের ক্লাব ছেড়ে দেয় । অর্থাৎ ক্লাব নিয়ে তাদের কোনো আবেগ থাকেনা । কিন্তু রঞ্জন সরকার সে ধরনের খেলোয়াড় নয় ।
একজন সুদক্ষ খেলোয়াড় হিসেবে সে অতীতে বহু বড়ো ক্লাবের ডাক পেয়েছে । কিন্তু সে তার ক্লাবকে দীর্ঘ পনেরো বছরে শত প্রলোভনেও ছেড়ে যায়নি । কিন্তু তাঁর এই ভালোবাসার কোনো দামই এবছর ক্লাবকর্তারা দিলেন না , তাঁরা ভাবলেন রঞ্জন সরকার ফুরিয়ে গেছে । ফলে তাঁদের দিক থেকে উদাসীনভাব দেখা গিয়েছিল । তাঁদের বোঝা উচিত ছিল , যে খেলোয়াড় দীর্ঘদিন ক্লাবের সুখে - দুঃখে জড়িয়ে গেছে বারপুজোর অনুষ্ঠানে তাঁকে সমাদরে আমন্ত্রণ করা দরকার । কিন্তু তাঁরা তা করেন নি । তাই রঞ্জনের সঙ্গে ক্লাবের বিচ্ছেদের জন্য প্রথমেই আমার ক্লাবের কর্মকর্তাদের দায়ী মনে হয় । এছাড়া কিছুটা হলেও অন্য বড়ো ক্লাবের সেক্রেটারি স্বপনবাবুও দায়ী বলে আমি মনে করি । কারণ তাঁরা মনে মনে চাইতেন রঞ্জন দল ছেড়ে তাদের ক্লাবে আসুক । তাই রঞ্জনকে সান্ত্বনা দেওয়ার আছিলায় তাঁরা তাঁর অভিমানকে উসকে দিয়েছিলেন ।
8.8 ' কী করবে ও ঠিক করে ফেলেছে ।'— এখানে কার কথা বলা হয়েছে ? সে কী ঠিক করে ফেলেছে ? তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সে পরবর্তী সময়ে চলতে পারল কি ?
উত্তর । এখানে খেলোয়াড় রঞ্জন সরকারের কথা বলা হয়েছে । রঞ্জন ঠিক করে ফেলেছে যে দুটো দিন সে অপেক্ষা করবে । এর মধ্যে ওর সঙ্গে যদি ক্লাবের কেউ যোগাযোগ করে ভালো , না হলে ও ক্লাব ছেড়ে দেবে । কিন্তু খেলা সে ছাড়বে না , প্রমাণ করে দেবে যে সে ফুরিয়ে যায়নি । সিদ্ধান্তটি নেওয়ার পর টানা দুদিন রঞ্জন পূর্ণসময় অফিস করল । এরপর ক্লাবের সাড়া না পেয়ে তৃতীয়দিন রাত্রে অন্য বড়ো ক্লাবের সেক্রেটারি স্বপনদাকে ফোন করে তাঁর প্রতি ক্লাবের এই দুর্ব্যবহারের কথা জানায় ও অন্য বড়ো ক্লাবের ডাকে সেই ক্লাবের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । মরশুমের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলতে শুরু করল রঞ্জন । অবশেষে একদিন এল তার পুরোনো ক্লাবের সঙ্গে নতুন ক্লাবের ম্যাচ । সেই ম্যাচে একাই সে দলকে জিতিয়ে প্রমাণ করে দিল যে সে ফুরিয়ে যায়নি । কিন্তু সে তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতে পারেনি । ক্লাবকে জিতিয়েও সে অনুভব করে তার দুচোখ বেয়ে অঝোরে জল ঝরছে । পনেরো বছরের সম্পর্ক ছেড়ে নতুন ক্লাবে এসে সব অপমানের বদলা নেবার মুহূর্তে সে নিজের কাছে হেরে গেল । তার মনে জমে থাকা কষ্ট চোখের জল হয়ে রঞ্জনকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল ।
৪.৫ ‘ তৃতীয় দিনে টেলিফোন করল অন্য বড়ো ক্লাবের সেক্রেটারিকে — কোনদিন থেকে তৃতীয় দিনের কথা বলা হয়েছে ? এই তিনদিন সময় তার কীভাবে কেটেছে ? টেলিফোনটি করায় কোন পরিস্থিতি তৈরি হলো ?
উত্তর । এবছর পয়লা বৈশাখের বারপুজোয় আমন্ত্রণ না পাওয়ায় তারপর দিন থেকে দুদিন অপেক্ষা করে তৃতীয়দিন রাত্রে রঞ্জনের অন্য বড়ো ক্লাবের সেক্রেটারিকে ফোনের কথা বলা হয়েছে । পয়লা বৈশাখের ঘটনার পরদিন অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গঙ্গার ধারে একটি পার্কের বেঞ্চে বসে রঞ্জন দুদিন অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিল । যদি ক্লাবের থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া আসে এই আশায় । তাই পরের দুটো দিন রঞ্জন ছটফট করে বেড়াল । অফিস ছাড়া কোথাও গেলনা । সম্পূর্ণ সময় অফিসে কাটিয়ে বাড়িতে এসে সারাক্ষণ টেলিফোনের সামনে বসে থাকত ।
এরপর ক্লাবের কোনো ফোন না পেয়ে তৃতীয়দিন রাত্রে কলকাতার অন্য বড়ো ফুটবল ক্লাবের সেক্রেটারিকে ফোন করল রঞ্জন । দীর্ঘ পনেরো বছর একটি ক্লাবেই খেলে যাওয়ার কারণে রঞ্জনের পারফরম্যান্স ভালো থাকলেও তাঁর প্রতি ক্লাবকর্তারা এবছর দল তৈরির প্রাক্মুহূর্তে একটু উদাসীন হয়ে পড়েন । যার প্রমান বারপুজোয় রঞ্জনের আমন্ত্রণ না পাওয়া । পাশাপাশি অন্য বড়ো ক্লাবগুলোও তাকেচাইত । তাই রঞ্জনের ফোন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কলকাতার অন্য বড়ো ক্লাবের সেক্রেটারি স্বপনদা যেন হাতে চাঁদ পেলেন । তিনি তাঁকে আন্তরিক সমবেদনা জানিয়ে তাঁর ক্লাব প্রেসিডেন্টকে ঘটনাটি জানিয়ে রঞ্জনকে স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের ক্লাবে সসম্মানে যোগদান করার আমন্ত্রণ জানালেন । এরপর রঞ্জন সরকার স্বপনদাদের ক্লাবে যোগদান করল ।
৪.৬ দুই প্রধানের লড়াইকে কেন্দ্র করে অনেক বছর পরে কলকাতা আবার মেতে উঠেছে’ গল্প অনুসরণে সেই লড়াইয়ের উত্তেজনাপূর্ণ ফুটবল ম্যাচের বিবরণ দাও।
উত্তর ‘পরাজয়’গল্পের উদ্ধৃত উক্তি অনুযায়ী সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে দুই বড়াে দলের প্রথম লড়াইকে কেন্দ্র করে শহরে এক টানটান উত্তেজনা ও উৎসাহ তৈরি হয়েছে। অনেকদিন পর সত্যিকারের একটি ভালাে খেলা দেখার জন্য টিকিটের হাহাকার পড়ে গিয়েছে। রেডিয়াে, টিভি, সংবাদপত্রের সাংবাদিকরাও ভীষণ ব্যস্ত। রঞ্জন যে ফুরিয়ে যায়নি, তা প্রমাণ করার জন্য প্রচণ্ড উত্তেজনায় সে খেলার মাঠে পৌঁছেছে। যুবভারতীর লক্ষাধিক দর্শকের সামনে দুই প্রধানের খেলা শুরু হয়। রঞ্জনকে সামলাতে তার পুরােনাে দলের খেলােয়াড়দের হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাত্র একজনকে সামনে রেখে বাকি দশ জনকেই ওরা নীচে নামিয়ে এনেছে। রঞ্জন একা লড়াই করলেও ওর সহ-খেলােয়াড়দের কাছ থেকে প্রয়ােজনীয় সাহায্য পায় না। এইভাবে গােলহীনভাবে শেষ হয় প্রথম পর্বের খেলা। দ্বিতীয়ার্ধে রঞ্জনের পুরােনাে ক্লাবের খেলােয়াড়রা রক্ষণাত্মক মনােভাব ছেড়ে আক্রমণে ঝাঁপিড়ে পড়ে। এতে রঞ্জনের কিছুটা লাভ হয়। পায়ে পায়ে ঘােরা খেলােয়াড়েরা খানিকটা সরে যায়। আক্রমণে ও প্রতি-আক্রমণে খেলাটি রীতিমতাে জমে ওঠে। রঞ্জন যেভাবে জ্বলে উঠতে চাইছে, তা সে পারছে না, অথচ এই সুযােগ নষ্ট করলে চলবে না। সে নিজেদের হাফলাইনের নীচে নেমে এলে ওদের গােলরক্ষক একটি বল পেয়ে ওর দিকে ছুড়ে দেয়। বলটি এগিয়ে নিয়ে যেতে যেতে সমরকে বলটা দিয়ে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গায় দাঁড়ালে সমর ওকে বলটি কোনাকুনি বাড়িয়ে দেয়। রঞ্জন বলটি ধরে দুজনকে কাটিয়ে পেনাল্টি সীমানার কাছাকাছি এসেই সমরের মাথা লক্ষ করে লক্ করে। সমর হেড দিয়ে বলটি গােলের দিকে ভাসিয়ে দিতেই রঞ্জন চকিতে ঘুরে ব্যাক ভলি করে এবং বল বিপক্ষের জালে আটকে যায়। সমর্থকেরা উল্লাসে ফেটে পড়ে এবং দলের খেলােয়াড়রা রঞ্জনকে নিয়ে মেতে ওঠে। এইভাবে রঞ্জনের গােলে তার প্রতিপক্ষ পুরনাে দলের পরাজয় ঘটে।
৪.৭ "বলটা বুলেটের মতাে ছুটে গিয়ে ঢুকে গেল গােলে’' –এরপর সমর্থক আর সহ-খেলােয়াড়দের উল্লাসের বিপ্রতীপে রঞ্জনের বিষণ্ণতার কোন রূপ ফুটে উঠেছে ?
উত্তর শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরাজয়’ গল্পে খেলােয়াড় রঞ্জন সরকার তার আগের ক্লাবের সব অপমান, অবহেলার মধুর প্রতিশােধ নিয়েছে খেলার মাঠে তাদেরকে পরাজিত করে। সে গােল করার সঙ্গে সঙ্গে সমর্থক আর সহ-খেলােয়াড়রা উল্লাসে মেতে উঠল। যুবভারতীর গ্যালারি বাজি আর পটকার শব্দে মুখরিত হলেও রঞ্জন যেন মন থেকে খুশি হতে পারেনি। একটা চাপা বেদনা ওকে ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করে ফেলল। সাজঘরে তাকে নিয়ে হইচই, উল্লাস, বিভিন্ন ব্যক্তির অভিনন্দন—কিছুই ওর ভালাে লাগছিল না। আসলে যে-ক্লাবের হাসি-কান্না-সুখ-দুঃখের সঙ্গে সে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিল, আজ সে নিজেই তার (ক্লাবের) পরাজয়ের কারণ হয়েছে। এই যন্ত্রণাটাকেই উপলদ্ধি করে রঞ্জন ম্যাচের পরে মাথা নীচু করে সাজঘরে ঢুকে একটি চেয়ারে বসে পড়ল। সাংবাদিকরা রঞ্জনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও রঞ্জন কথা বলতে চায়নি, কারণ সে তাদেরকে প্রকৃত সত্য কথা বলতে পারবে না। তাই সেক্রেটারি স্বপনদাকে বলে পাশের ঘরের একটি বেঞ্চিতে দু-হাতে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়ল। রঞ্জন অবাক হয়ে অনুভব করল, ওর দু-চোখ। দিয়ে জল ঝরছে। যে-ক্লাব তাকে সম্মান, খ্যাতি, অর্থ সব দিয়েছে, সেই ক্লাবের সঙ্গে তার বিচ্ছেদে সে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। রাগে-দুঃখে-অভিমানে সে ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে এলেও সব i অপমান, সব অবহেলার বদলা নেওয়ার মুহূর্তে রঞ্জন নিজের কাছেই নিজে হেরে গেল। আসলে সে তার ক্লাবের প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ও নিবেদিতপ্রাণ। তাই পয়লা বৈশাখের বারপুজোয় তাকে না-ডাকার অপমান ও কষ্টটা আজ কান্না হয়ে বেরিয়ে পড়ল। এ যেন চেনা মানুষের মধ্যে দেখা এক অন্য রঞ্জন। গল্পের ঘটনা বিশ্লেষণ করে ‘পরাজয়’ গল্পের নামকরণের সার্থকতা প্রতিপন্ন করাে।
৫ নীচের শব্দগুলির ধ্বনিতাত্ত্বিক বিচার করাে :
চরকি, সক্কাল, নেমন্তন্ন, নম্বর, ছুটোছুটি
চরকি = চক্র > চক্কোর > চরকি (বর্ণবিপর্যয়)
সক্কাল = সকাল > সক্কাল (ব্যঞ্জনাগম)
নেমন্তন্ন = নিমন্ত্রণ > নেমন্তন্ন (সমীভবন )
নম্বর = নাম্বার > নম্বর (স্বরলােপ)
ছুটোছুটি = ছােটাছুটি > ছুটোছুটি (স্বরসংগতি)
৬. নীচের বাক্যগুলি থেকে সন্ধিবদ্ধপদ খুঁজে নিয়ে সন্ধি বিচ্ছেদ করাে :
৬.১ ওর মনের মধ্যে জমে ওঠা দুঃখ আর অভিমান রূপান্তরিত হয়েছিল রাগে।
উত্তর | রূপান্তরিত = রূপ + অন্তরিত।
৬.২ ক্লাবের কর্তাদের হাবভাব দেখে সে পরিষ্কার বুঝতে পেরেছে।
উত্তর | পরিষ্কার = পরিঃ + কার।
৬.৩ কেউ একটা টেলিফোন পর্যন্ত করল না।
উত্তর | পর্যন্ত = পরি + অন্ত।
৬.৪ তার পুরস্কার এতদিনে পেলাম স্বপনদা।
উত্তর | পুরস্কার = পুরঃ + কার।
৬.৫ ওরা যা দিয়েছে তাতেই সন্তুষ্ট ছিলাম।
উত্তর | সন্তুষ্ট = সম্ + তুষ্ট।
৭. নিম্নরেখাঙ্কিত অংশের কারক বিভক্তি নির্দেশ করাে :
৭.১ রঞ্জন ঘরের মধ্যে চরকির মতাে ঘুরছে।
উত্তর | রঞ্জন = কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি।
৭.২ গাড়ি পাঠানাে তত দূরের কথা।
উত্তর | গাড়ি = কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি।
৭.৩ সারাটা সকাল ও ছটফট করে বেড়িয়েছে।
উত্তর | সকাল = অধিকরণ কারকে শূন্য বিভক্তি।
৭.৪ কানে ভেসে আসে পাখির ডাক।
উত্তর | পাখির = সম্বন্ধপদে ‘র’ বিভক্তি।
৭.৫ রঞ্জন টেলিফোনটা রেখে দিল।
উত্তর | টেলিফোনটা = কর্মকারকে ‘টা’ নির্দেশক।
৮. নীচের বাক্যগুলির ক্রিয়ার কাল নির্দেশ করাে :
৮.১ গুরুত্ব দেয়নি।
উত্তর | সাধারণ অতীত কাল।
৮.২ তুই চলে আয়।
উত্তর | বর্তমান অনুজ্ঞা।
৮.৩ কাল সকালে আমায় কলকাতার বাইরে যেতে হয়েছিল।
উত্তর | পুরাঘটিত অতীত কাল।
৮.৪ আমি রঞ্জন সরকার বলছি
উত্তর | ঘটমান বর্তমান কাল।
৮.৫ রঞ্জনের মুখে খেলে গেল ম্লান হাসি।
উত্তর | পুরাঘটিত অতীত কাল।
৯. নির্দেশ অনুসারে বাক্য পরিবর্তন করাে :
৯.১ এত দুঃখ, এত ব্যথা সে কখনও পায়নি। (হা-সূচক বাক্যে)
উত্তর | এত দুঃখ, এত ব্যথা সে এবারই পেল।
৯.২ সিদ্ধান্তটা নেওয়ার পর রঞ্জনের মন অনেকটা শান্ত হল। (জটিল বাক্যে)
উত্তর | যখন রঞ্জন সিদ্ধান্তটা নিল তখন তার মন অনেকটা শান্ত হল।
৯.৩ সেই মুহূর্তে কলিংবেলটা বেজে উঠল। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর | সেই মুহূর্তটি এল এবং কলিংবেলটা বেজে উঠল।
৯.৪ রঞ্জনের গলাটা একটু কেঁপে উঠল।(না-সূচক বাক্যে)
উত্তর | রঞ্জনের গলাটা একটু না-কেঁপে থাকল না।
৯.৫ যারা এতক্ষণ দেয়ালে পিঠ দিয়ে লড়ছিল তারাই এখন রুখে দাঁড়াল। (সরল বাক্যে)
উত্তর | এতক্ষণ দেয়ালে পিঠ দিয়ে লড়তে থাকা খেলােয়াড়রাই এখন রুখে দাঁড়াল।
<< Read More >>
Class 8 All Subject Solution >>