পল্লীসমাজ (Pollisomaj) অনুশীলনী প্রশ্ন উত্তর | Class 8 | WBBSE
পল্লীসমাজ
নামকরণ
নামকরণের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে বিষয়ের গভীরতা। বিষয়বস্তুকে পাঠক-সমাজের কাছে স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার জন্য নামকরণকেই অবলম্বন করে থাকেন সাহিত্যিকরা। আলােচ্য পাঠ্যাংশের ‘পল্লীসমাজ’ নামকরণের মাধ্যমে লেখকের সমাজচিত্র পরিস্ফুটনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নানা প্রকার তাত্ত্বিক আলােচনা, বিচ্ছিন্ন কাহিনি, বিচার-বিশ্লেষণ এখানে বিপুল ভূমিকা গ্রহণ করেছে এবং শরৎচন্দ্র পল্লির ঈর্ষা, কলহ ও দলাদলির রূপচিত্রকে মুখ্য না করে পল্লিসমাজকেই যেন নায়ক করে তুলেছেন। লেখক পল্পিসমাজের সমস্যা অপেক্ষা সমস্যাকেন্দ্রিক সচেতনতার পরিচয় প্রদান করেছেন বলেই আলােচ্য উপন্যাসের নামকরণ সার্থকতামণ্ডিত। কোনাে ব্যঞ্জনা নয়, রূপক নয়, একটি অত্যন্ত দৃঢ় প্রত্যয়-নিষ্ঠ বক্তব্য সূচীভেদ্য তিরের ন্যায় ঋজু অথচ স্পষ্ট গতিতে পল্লিসমাজের অভ্যন্তরীণ সংকীর্ণতার আবরণ উন্মােচন করার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিকারের পথটিকেও নির্দেশ করেছে বলে আলােচ্য রচনাটিকে নামকরণের দিক থেকে যথার্থ বলা যেতে পারে ।
১.১ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি উপন্যাসের নাম লেখাে।
উত্তর - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি উপন্যাস হল ‘শ্রীকান্ত এবং ‘পথের দাবী।
১.২, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি ছােটোগল্পের নাম লেখাে।
উত্তর - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি ছােটোগল্প হল— ‘মহেশ’ এবং ‘অভাগীর স্বর্গ'।
২. নীচের প্রশ্নগুলির দু-একটি বাক্যে উত্তর লেখাে :
২.১ গােপাল সরকারের কাছে বসে রমেশ কী করছিল ?
উত্তর - গােপাল সরকারের কাছে বসে রমেশ জমিদারির হিসাব দেখাশােনা করছিল।
২.২ গ্রামের একমাত্র ভরসা কী ছিল ?
উত্তর - একশাে বিঘার মাঠটাই গ্রামের একমাত্র ভরসা ছিল।
২.৩ ‘বােধ করি এই কথাই হইতেছিল’-কোন্ কথার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে ?
উত্তর - একশাে বিঘার মাঠের দক্ষিণ ধারের বাঁধ কেটে জল বার করে দেওয়ার ব্যাপারে প্রজাদের আকুল আবেদনের কথার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ইতিপূর্বে প্রজারা বেণীবাবুর কাছে অনুনয় বিনয় করে হাতে-পায়ে ধরে কান্নাকাটি করেও ফল পায়নি। বেণীবাবু কিছুতেই দুশাে টাকা লােকসান করতে রাজি হয়নি।
২.৪ রমা আকবরকে কোথায় পাহারা দেবার জন্য পাঠিয়েছিল ?
উত্তর - রমা আকবরকে দক্ষিণ ধারের বাঁধ পাহারা দেবার জন্য পাঠিয়েছিল ।
২.৫ পারবি নে কেন ?—উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কোন কাজটি করতে পারবে না ?
উত্তর - উদ্দিষ্ট ব্যক্তি অর্থাৎ, আকবর সদরে গিয়ে নিজের শরীরের চোট দেখাতে পারবে না। সে কিছুতেই রমেশের লাঠির আঘাতে আহত হওয়ার কথা ও তার জন্য রমেশের বিরুদ্ধে থানায় নালিশ করতে পারবে না।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর লেখাে :
৩.১ কুড়িজন কৃষক রমেশের কাছে এসে কেদে পড়ল কেন ?
উত্তর - গ্রামের একমাত্র ভরসা একশাে বিঘার মাঠ জলে ডুবে গিয়েছে। সমস্ত চাষিদেরই কিছু কিছু জমি সেখানে আছে। ফলে জল বার করে না দিলে সমস্ত ধান নষ্ট হয়ে যাবে। জমিটির পূর্ব দিকে বিশাল বাঁধ, পশ্চিম ও উত্তরদিকে উঁচু গ্রাম। শুধুমাত্র দক্ষিণ ধারের বাঁধটা ঘােষাল ও মুখুজ্জেদের'। এই দিক দিয়ে জল বার করা যায়। কিন্তু বাঁধের গায়ে একটা জলার মতাে আছে, যাতে বছরে দুশাে টাকার মাছ বিক্রি হয় বলে জমিদার বেণীবাবু বাঁধ কাটতে দেবেন না। সকাল থেকে কৃষকরা তাঁর কাছে কান্নাকাটি করেও কোনাে ফল না পেয়ে এ যাত্রায় রক্ষা পাবার আশায় রমেশের কাছে এসে কেঁদে পড়ল।
৩.২ রমেশ বেণীর কাছে জল বার করে দেবার হুকুম দেওয়ার জন্য অনুরােধ করল কেন ?
উত্তর - একশাে বিঘার মাঠের দক্ষিণ পাশে বাঁধের সংলগ্ন যে জলা জায়গাটি ছিল এবং যেদিক দিয়ে জল বের করা সম্ভব, সেটি তিনজনের অধিকারভুক্ত ছিল। রমেশ ভেবেছিল, প্রজার দুরবস্থার কথা ভেবে রমা নিশ্চয়ই আপত্তি করবে না। বাকি রইল কেবল বেণীবাবু, তিনি তাে রমেশের বড়দা, সুতরাং বাঁধ কেটে জল বের করায় তারও আপত্তি থাকবে না। তাই প্রজাদের চরম ক্ষতির কথা চিন্তা করে প্রজাদের রক্ষা করার আশায় রমেশ তাঁর কাছে বাঁধ কেটে জল বার করতে দেওয়ার অনুরােধ করেছিল।
৩.৩ বেণী জল বার করতে চায়নি কেন ?
উত্তর - বেণী জল বার করতে চায়নি প্রধানত দুটি কারণে। প্রথমত, বাঁধ কেটে জলার ওপর দিয়ে জল বের করতে দিলে জলার মাছ সব বেরিয়ে যাবে। জলা থেকে বছরে দুশাে টাকার মাছ বিক্রি হয়। সুতরাং, টাকাটা সে লােকসান করতে চায়নি। দ্বিতীয়ত, জল বার করতে দিলে সমস্ত ধান নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে চাষিরা না খেতে পেয়ে বাধ্য হয়ে জমি বন্ধক রেখে তাদেরই কাছে। টাকা ধার চাইতে আসবে। এভাবেই সে পরের ক্ষতি করে নিজের স্বার্থ গােছাতে চেয়েছিল। বাড়াতে চেয়েছিল নিজের জমিদারী। তাই সে জল বার করতে চায়নি।
৩.৪ ঘৃণায়, লজ্জায়, ক্রোধে, ক্ষোভে রমেশের চোখমুখ উত্তপ্ত হইয়া উঠিল’রমেশের এমন অবস্থা হয়েছিল কেন ?
উত্তর - অসহায় প্রজাদের স্বার্থে রমেশ একশাে বিঘার মাঠ থেকে জল সরানাের বন্দোবস্ত করতে বেণী ঘােষালের কাছে এসে অনুরােধ জানায়। কিন্তু নিজের স্বার্থের 5ৰ খাতিরে বেণী রাজি হয় না। বরং, জমিদারের সর্বগ্রাসী # স্বার্থের কথা ভেবে রমেশকেও চুপ থাকতে বলে এবং উত্তেজিত রমেশকে জমিদারি বাড়ানাের কৌশল সম্পর্কে জানায়। বলে নিরুপায় চাষীরা প্রাণ বাঁচাতে তাদের কাছেই জমি বন্ধক রাখতে ছুটে আসবে। এর ফলে তাদেরই বেশি লাভ হবে। এই কথায় রমেশ জমিদার বেণী ঘােষালের এক চরম স্বার্থপর, লােভী ও নীচ মানসিকতার পরিচয় পায়। রক্ষক জমিদারের এই ভক্ষকের ভূমিকা দেখে প্রজাদরদী, সহানুভূতিশীল রমেশের চোখ-মুখ তাঁর দাদা বেণী ঘােষালের প্রতি ঘৃণায়, লজ্জায়, ক্রোধে, ক্ষোভে, উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল।
৩.৫ 'রমেশ বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হইয়া গেল’- রমেশের বিস্ময়ের কারণ কী ছিল ?
উত্তর - রমেশ প্রজাদের ধান জমি রক্ষার জন্য বাঁধ কেটে জল বের করার ব্যাপারে বেণী ঘােষালের কাছে অনুরােধ করেও ব্যর্থ হয়। রমেশের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, রমা তার সঙ্গে সহমত পােষণ করবেই। তাই সে জলার তৃতীয় শরিক রমার কাছে যাওয়া স্থির করে। সে ভাবে, রমা রাজি হলে একা বেণীর আপত্তিতে কোনাে কাজ হবে না। কিন্তু রমাকে বিষয়টি জানাতেই সে প্রথমে মাছের বন্দোবস্তের কথা জিজ্ঞাসা করে। রমেশ তখন অত জলে মাছের বন্দোবস্ত করা সম্ভব নয় এবং এই সামান্য ক্ষতিটুকুকে মেনে নিতে অনুরােধ জানালে রমা সােজাসুজি জানিয়ে দেয়, অতগুলাে টাকা সে লােকসান করতে পারবে না। রমার এই অপ্রত্যাশিত উত্তরে আর সেই সঙ্গে রমার অমানবিক, স্বার্থপর মনােভাবের পরিচয় পেয়ে সেইসঙ্গে নিজের ভাবনার চরম বৈপরীত্য উপলদ্ধি করে রমেশ বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হয়ে গেল।
৩.৬ রমা রমেশের অনুরােধে রাজি হয়নি কেন ?
উত্তর - রমেশের অনুরােধে রমা রাজি হয়নি কারণ, জলার জায়গাটি ছিল তাদের তিনজনের অধিকারভুক্ত। বেণী ঘােষাল এ-ব্যাপারে অনুমতি দেননি। তা ছাড়া জল বের করতে দিলে জলাশয়ের মাছ সমস্ত বেরিয়ে যাবে, যার ক্ষতির পরিমাণ বছরে দুশাে টাকা। শুধুমাত্র প্রজাদের উপকারের জন্য এই ক্ষতি সে করতে চায়নি। সর্বোপরি, সম্পত্তি তার নয়, সম্পত্তি তার ভাইয়ের। সে শুধু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে। সুতরাং, অনুমতি দেওয়ার সে কেউনয়। এই জন্য সে রমেশের অনুরােধে রাজি হয়নি।
৩.৭ মানুষ খাঁটি কি না, চেনা যায় শুধু টাকার সম্পর্কে’-কে, কার সম্পর্কে একথা বলেছিল ? সে কেন একথা বলেছিল ?
উত্তর - আলােচ্য উক্তিটি রমেশ, রমার সম্পর্কে করেছিল।
প্রজাদের সমূহ ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য রমেশ প্রথমে বেণী ঘােষালের কাছে যায়। সেখান থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে হাজির হয় রমার কাছে। তার বিশ্বাস ছিল, রমা অবশ্যই তার সঙ্গে সহমত হয়ে বাঁধ কাটার অনুমতি দেবে। এই ত্যাগ স্বীকারে তাদের হয়তাে কিছুটা ক্ষতি হবে, কিন্তু দরিদ্র প্রজাদের কথা ভেবে এটুকু ক্ষতি রমা নিশ্চয়ই মেনে নেবে। কিন্তু রমাকে অনুরােধ করতে এসে রমার মনের বৈপরীত্যের পরিচয় পায় রমেশ রমেশের কাছে টাকার দাবি করে রমা বলে, প্রজাদের হয়ে সে-ই তাে ক্ষতিপূরণ দিতে পারে। রমার এমন হীন মনের পরিচয় পেয়ে রমেশ বিহ্বল হয়ে পড়ে। রমার সম্পর্কে এতকাল পােষণ করা ধারণা ভেঙে যাওয়ায় রমেশ আলােচ্য উক্তিটি করেছে।
৩.৮ ‘রমা বিহ্বল হতবুদ্ধির ন্যায় ফ্যালফ্যাল করিয়া চাহিয়া রহিল’রমার এমন অবস্থা হয়েছিল কেন ?
উত্তর - রমেশ বাল্যপরিচিত রমাকে উদার মনের বলেই ভাবত। তাই গ্রামবাসীদের দুরবস্থার কথা বলে বাঁধ কাটার অনুমতি চাইতে গিয়েছিল। কিন্তু রমেশের মতাে রমা সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ প্রজাদরদি হয়ে বাঁধ কাটতে রাজি হয়নি। নিজের ক্ষতি মেনে না নিয়ে রমা রমেশকেই প্রজাদের হয়ে দু'শাে টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলে। আর তাতে চরম অপমানিত বােধ করে রমেশ অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়। ক্ষিপ্ত রমেশ রমাকে নিষ্ঠুর, নীচ ও ছােটো বলে অপমান করে। রমেশ আরও বলে মানুষের দয়ার ওপর জুলুম করার মতাে ঘৃণ্য পাপে সে দোষী। নিজের সম্পর্কে রমেশের মুখে এই মূল্যায়ন শুনে রমার এমন অবস্থা হয়েছিল।
৩.৯ রমা আকবরকে ডেকে এনেছিল কেন ?
উত্তর - বাঁধ কেটে জল বের করার ব্যাপার নিয়ে রমার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত রমেশ রমাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, সে একাই বাঁধ কেটে জল বের করে দেবে। পারলে তারা আটকানাের চেষ্টা করতে পারে। রমা এতে খুব অপমানিত বােধ করে। সে বুঝেছিল, রমেশ এরপর সাংঘাতিক আশ্চর্য ঘটাতে পারে। তাই সে দেখতে চেয়েছিল, একটা হিন্দুস্থানি চাকরের জোরে রমেশ কীভাবে বাঁধ কেটে জল বের করে। তাই বাধ পাহারা দেবার জন্য সে তাদের পিরপুরের প্রজা লাঠিয়াল আকবরকে ডেকে এনেছিল।
৩.১০ মােরা নালিশ করতি পারব না’-কে এ কথা বলেছে ? সে নালিশ করতে পারবে না কেন ?
উত্তর - রমাদের পিরপুরের প্রজা আকবর এ কথা বলেছে।
আকবর একজন প্রকৃত লাঠিয়াল। তার আত্মসম্মানবােধ প্রবল। সে জানে লাঠিতে জয়-পরাজয় আছেই। রমেশের লাঠির আঘাতে সে আহত হয়, তার মাথা দিয়ে রক্ত ঝরে, কিন্তু পাঁচখানা গাঁয়ের লােক তাকে সর্দার বলে মানে। তাই পরাজিত হলেও সে আত্মমর্যাদা হারাতে রাজি নয়। নালিশ করলে তার সম্মানহানি ঘটবে সে সর্দার হিসেবে অপমানিত হবে। তাছাড়া সর্দারের এই কথায় ছােটোবাবু রমেশের প্রতি শ্রদ্ধাও পরিস্ফুট হয় কারণ রমেশ নিজের স্বার্থে নয়, গ্রামবাসীদের স্বার্থে একশাে বিঘা জমি বাঁচাতে বাঁধ কাটার কাজে তাদের বিরুদ্ধে লাঠি ধরেছে তাই কোনােভাবে সে সদরে গিয়ে তার চোট দেখাতে পারবে না বা থানায় গিয়ে মিথ্যা অভিযােগও জানাতে পারবে না ।
৪. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখাে :
৪.১ 'নইলে আর ব্যাটাদের ছােটোলােক বলেছে কেন ?' বক্তা কে ? এই উক্তির মধ্যে দিয়ে বক্তার চরিত্রের কী পরিচয় পাও?
উত্তর - আলােচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন বেণী ঘােষাল।
প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মধ্য দিয়ে বক্তার চরিত্রের কয়েকটি বিশেষ দিক ফুটে উঠেছে। বক্তা অর্থাৎ, বেণী ঘােষাল মূলত প্রজাপীড়ক জমিদার। তিনি একাধারে জমিদার ও মহাজন। মহাজনী করে তিনি জমিদারির সীমানা বাড়িয়েছেন এবং পরের প্রজন্মের জন্যে কৌশল করে আরও বেশি সম্পদ বাড়ানাের পরিকল্পনা করেছেন। মূলত প্রশ্নোক্ত কথাটির মধ্য দিয়ে বক্তার চরিত্রের লােভী, পরশ্রীকাতর ও নিন্দুক জাতীয় বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়েছে।
৪.২, বেণী, রমা ও রমেশচরিত্র তিনটির তুলনামূলক আলােচনা করাে। সেইসঙ্গে এই তিনটি চরিত্রের মধ্যে কোন চরিত্রটি তােমার সবথেকে ভালাে লেগেছে এবং কেন তা জানাও।
উত্তর - অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘পল্লীসমাজ’ উপন্যাসে অনেকগুলি চরিত্রের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। প্রত্যেকটি চরিত্রই নিজ নিজ মহিমায় উজ্জ্বল। প্রশ্নে উল্লিখিত তিনটি চরিত্র বেণী, রমা ও রমেশ হল ‘পল্লীসমাজ’ উপন্যাসে কুয়াপুর ও পিরপুরের জমিদারির তিনজন মালক। এদের মধ্যে বেণী ঘােষাল মূলত প্রজাপীড়ক জমিদার। তবুও তিনি একাধারে জমিদার ও মহাজন। সর্বোপরি তিনি সামন্ততান্ত্রিক সমাজের যােগ্য প্রতিনিধি। অন্যদিকে রমা চরিত্রে শরৎচন্দ্র বুদ্ধিমতী ও ব্যক্তিত্বময়ী নারী চরিত্রের রূপায়ন ঘটিয়েছেন। রমার জীবনের সর্বাপেক্ষা বড়াে ট্র্যাজেডি হল প্রতিকূল অবস্থার তাড়নায় রমা তার একান্ত প্রেমাষ্পদের শত্রুতা সাধন করেছে। তার চরিত্রে রয়েছে দ্বৈতরূপ। একদিকে জমিদার কন্যার বৈষয়িক সত্তা আর একদিকে চিরন্তনী নারী সত্তা। এদের বিপরীতে আছে রমেশ চরিত্র। রমেশ মহৎ আদর্শ। চরিত্র সুদৃঢ় সত্যনিষ্ঠা ও বিরাট মানবিকতার আশ্চর্য সমন্বয়ে সে গঠিত। সে যথার্থই প্রজাহিতৈষী।
এই তিনটি চরিত্রের মধ্যে রমেশ চরিত্রটি আমার সবচেয়ে ভালাে লেগেছে। কারণ, তাঁর চরিত্রের মধ্যে মহৎ আদর্শ, সুদৃঢ়তা, সত্যনিষ্ঠা ও বিরাট মানবিকতার আশ্চর্য সমাবেশ লক্ষ করা যায়। তার বলিষ্ঠ বাহু এবং প্রশস্ত বক্ষ বাংলাদেশের জীর্ণ দুর্বল সংস্কারা পল্লিসমাজের সেবায় উৎসর্গীকৃত ছিল। তাই তার চরিত্রটি আমার ভালাে লাগে।
৪.৩ উপন্যাসের নামে পাঠ্যাংশটির নামকরণও ‘পল্লীসমাজ’ ই করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে নামকরণটি সুপ্রযুক্ত হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে মতামত জানাও।
উত্তর - নামকরণের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে বিষয়ের গভীরতা। বিষয়বস্তুকে পাঠক-সমাজের কাছে স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার জন্য নামকরণকেই অবলম্বন করে থাকেন সাহিত্যিকরা। আলােচ্য পাঠ্যাংশের ‘পল্লীসমাজ’ নামকরণের মাধ্যমে লেখকের সমাজচিত্র পরিস্ফুটনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নানা প্রকার তাত্ত্বিক আলােচনা, বিচ্ছিন্ন কাহিনি, বিচার-বিশ্লেষণ এখানে বিপুল ভূমিকা গ্রহণ করেছে এবং শরৎচন্দ্র পল্লির ঈর্ষা, কলহ ও দলাদলির রূপচিত্রকে মুখ্য না করে পল্লিসমাজকেই যেন নায়ক করে তুলেছেন। লেখক পল্পিসমাজের সমস্যা অপেক্ষা সমস্যাকেন্দ্রিক সচেতনতার পরিচয় প্রদান করেছেন বলেই আলােচ্য উপন্যাসের নামকরণ সার্থকতামণ্ডিত। কোনাে ব্যঞ্জনা নয়, রূপক নয়, একটি অত্যন্ত দৃঢ় প্রত্যয়-নিষ্ঠ বক্তব্য সূচীভেদ্য তিরের ন্যায় ঋজু অথচ স্পষ্ট গতিতে পল্লিসমাজের অভ্যন্তরীণ সংকীর্ণতার আবরণ উন্মােচন করার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিকারের পথটিকেও নির্দেশ করেছে বলে আলােচ্য রচনাটিকে নামকরণের দিক থেকে যথার্থ বলা যেতে পারে ।
৪.৪ পল্লীসমাজ’ পাঠ্যাংশে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার কোনাে নিদর্শন পেয়ে থাকলে সে সম্পর্কে আলােচনা করাে। এ ধরনের ব্যবস্থার সুফল ও কুফল সম্পর্কে আলােচনা করাে।
উত্তর - ‘পল্লীসমাজ’ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সমাজসমালােচনামূলক উপন্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম। এই রচনায় সমকালীন বাংলাদেশের ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার নিদর্শন পাওয়া যায়। হিন্দু সমাজের প্রকৃত আদর্শ ও মনােভাব এবং সমগ্র জীবনযাত্রার একটি নিখুঁত চিত্র এই উপন্যাসে প্রতিফলিত হয়েছে। ‘পল্লীসমাজ’ গদ্যাংশে বেণী ঘােষাল চরিত্রের মধ্যে দিয়ে লেখক দেখিয়েছ, জমিদাররা কীভাবে প্রজাদের সর্বস্বান্ত করতেন এবং কীভাবে তাঁরা তাঁদের জমির পরিধি বাড়াতেন। জমিদার বেণী ঘােষাল চরিত্রের মধ্যেই সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার নিদর্শন পাওয়া যায়।
সামন্ততান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার আপত কোনাে সুফল আছে বলে মনে হয় না। একথা ঠিক, প্রজাপীড়ক জমিদারের পাশাপাশি অনেক সময় প্রজাদরদি সামন্তও থাকতেন। তাঁরা প্রজাদের মঙ্গলার্থে নানান হিতকর পরিকল্পনা নিতেন। একই সঙ্গে প্রজাদের সার্বিক স্বার্থরক্ষাই ছিল তাঁর প্রধান কাজ। এমন জমিদারের অধীনে প্রজারা সুখে-শান্তিতে জীবন কাটত।
সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় কৃষক-সহ সমস্ত প্রজাদের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল। তারা ফসল উৎপন্ন করেও একবেলা পেটপুরে খেতে পারত না। জমিদারের সীমাহীন লােভ, লালসা, বিলাসিতার শিকার হয়ে তাদের সর্বস্ব হারাতে হত। নিজেদের স্বার্থ বজায় রাখতে যে কোনাে প্রজার চরম সর্বনাশ দ্বিধা করত না।
৫. সন্ধি করাে :
i. বৃষ + তি - বৃষ্টি
ii. সম্ + বরণ - সংবরণ
iii. কাঁদ + না-কান্না
iv. অতি + অন্ত - অত্যন্ত
v. এক + অন্ত - একান্ত
vi. অন্ + আত্মীয়- অনাত্মীয়
৬. নীচের শব্দগুলির সন্ধি বিচ্ছেদ করাে :
i. নিরুত্তর - নিঃ + উত্তর
ii. নমস্কার - নমঃ + কার
iii. তারকেশ্বর - তারক + ঈশ্বর
iv. যথার্থ - যথা + অর্থ
v. প্রত্যাখ্যান -প্রতি + আখ্যান
vi. আশ্চর্য - আঃ + চর্য
vii. তদবস্থা -তৎ + অবস্থা
৭. নীচে দেওয়া শব্দগুলির দলবিশ্লেষণ করাে :
1. অপরাহ্ন - অ– প – রান্ - হ,
উত্তর - মুকদল—অ, প, হ (৩টি), রুদ্ধদল—রান্ (১টি)
2. অকস্মাৎ - অ-কস্ - মাৎ,
উত্তর - মুকদল—অ (১টি), রুদ্ধদল—কস, মাৎ (২ টি)
3. আহ্বান - আ- হ - বান্
উত্তর - মুকদল—আ, হ (২ টি),রুদ্ধদল-বান্ (১টি)
4. দক্ষিণ - দক্ – ক্ষিণ,
উত্তর - মুকদলশূন্য (০), রুদ্ধদল দক, ক্ষিণ (২ টি)
5. উচ্ছিষ্ট - উচ- ছিষ - ট,
উত্তর - মুক্তদল—ট ১টি, রুদ্ধদল—উচ, ছিষ (২ টি)
6. উত্তপ্ত - উৎ- তপ্ -ত,
উত্তর - মুকদল—ত (১টি), রুদ্ধদল-উৎ, তপ (২ টি)
7. বিস্ফারিত - বিস্ – ফা – রি – ত,
উত্তর - মুক্তদল-ফা, রি, ত (৩টি), রুদ্ধদল—বি (১টি)
8. দীর্ঘশ্বাস - দীর – ঘ-স্বাস,
উত্তর - মুকদল—ঘ (১টি), রুদ্ধদল—দীর, শ্বাস (২ টি)
9. অশ্রুপ্লাবিত - অশ – রু – প্লা – বি ত
উত্তর - মুকদল—রু, বি, ত (৩টি), রুদ্ধদল-অশ, প্লা (২টি)
10. হিন্দুস্থানি - হিন – দুস্ – থা – নি
উত্তর - মুকদল —থা, নি (২ টি), রুদ্ধদল-হিন, দুস (২ টি)
11. অস্বচ্ছ - অ-স্বচ্- ছ
উত্তর - মুকদল—অ, ছ (২ টি), রুদ্ধদল—স্বচ (১টি)
৮. নীচে দেওয়া ব্যাসবাক্যগুলিকে সমাসবদ্ধ পদে পরিণত করাে
৮.১ জল ও কাদা - জলকাদা (দ্বন্দ্ব সমাস)
৮.২ নয় আহত - অনাহত (নঞ-তৎপুরুষ সমাস)
৮.৩ ত্রি অধিক দশ - ত্রয়ােদশ (মধ্যপদলােপী কর্মধারয় সমাস)
৮.৪ বেগের সহিত বর্তমান - সবেগে (সহার্থক বহুব্রীহি সমাস)
৮.৫ মড়ার জন্য কান্না - মড়াকান্না (নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস)
৮.৬ চণ্ডী পুজোর জন্য তৈরি যে মণ্ডপ - চণ্ডীমণ্ডপ (মধ্যপদলােপী কর্মধারয় সমাস)
৯. নীচের বাক্যগুলিকে নির্দেশ অনুযায়ী পরিবর্তন করাে :
৯.১ কথাটা রমেশ বুঝিতে পারিল না। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর - কথাটা রমেশ শুনিল কিন্তু বুঝিতে পারিল না।
৯.২ এ বাড়িতে আসিয়া যখন প্রবেশ করিল তখন সন্ধ্যা হয় হয়। (সরল বাক্যে)
উত্তর - সন্ধ্যা হতে না হতেই এ বাড়িতে আসিয়া প্রবেশ করিল।
৯.৩ ওরা যাবে কি ? (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর - ওরা যাবে কিনা সেটাই জিজ্ঞাস্য।
৯.৪ বেণীর এই অত্যন্ত অপমানকর প্রশ্নের উত্তর দিবারও তাহার প্রবৃত্তি হইল না। (হা-বাচক বাক্যে)
উত্তর - বেণীর এই অত্যন্ত অপমানকর প্রশ্নের উত্তর দেওয়া থেকে সে বিরত রইল।
৯.৫ তুমি নীচ, অতি ছােটো। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর - তুমি নীচ এবং অতি ছােটো।
৯.৬ পথে আর এতটুকু কাদা পাবার জো নেই দিদিমা। (প্রশ্নবােধক বাক্যে)
উত্তর - পথে কি আর এতটুকু কাদা পাবার জো আছে দিদিমা?
৯.৭ মাসি উপরে ঠাকুরঘরে আবদ্ধ থাকায় এ সকলের কিছুই জানিতে পারেন নাই। (জটিল বাক্যে)
উত্তর - যেহেতু মাসি উপরে ঠাকুরঘরে আবদ্ধ ছিলেন সেহেতু এ সকলের কিছুই জানিতে পারেন নাই।
১০. নীচে দেওয়া শব্দদুটিকে দুটি আলাদা আলাদা অর্থে ব্যবহার করে বাক্যরচনা করাে :
i. যাত্রা (পালাগান শােনা): গুপ্তিপাড়ায় আজ রাতে যাত্রা আছে।
ii. যাত্রা (এবারের মতাে) : অপমানের হাত থেকে এ যাত্রায় রক্ষা পেয়ে গেলাম।
iii. বাঁধ (বন্ধন যুক্ত) : মালপত্রগুলিকে দড়ি দিয়ে ভালাে করে বাঁধ কি ?
iv. বাঁধ (পাড়) : নদীর বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢুকছে।
<< Read More >>
Class 8 All Subject Solution >>