জেলখানার চিঠি (Jelkhanar Chithi) অনুশীলনী প্রশ্ন উত্তর | Class 8 | WBBSE

জেলখানার চিঠি (Jelkhanar Chithi) অনুশীলনী প্রশ্ন উত্তর | Class 8 | WBBSE


জেলখানার চিঠি


নামকরণ

যে পত্রে ব্যক্তিগত কথা, ভাব বিনিময়ের পাশাপাশি সর্বজনীন ভাবাদর্শ প্রাধান্য পায়, কেজো কথার পাশাপাশি সাহিত্যের রস, দার্শনিক বােধ প্রধান হয়ে ওঠে, তখন সেই চিঠি শুধুমাত্র পত্রের মধ্যে আবদ্ধ থাকে না, তা হয়ে ওঠে পত্রসাহিত্যজেলখানার চিঠিএই রচনাটির মধ্যে পত্রসাহিত্যের ছোঁয়া পাওয়া যায়জেল কয়েদীশিরােনামে দুটি চিঠি ছিল ভাষা মূল গ্রন্থে ছিল ইংরেজি, ‘জেলখানার চিঠিনামাঙ্কনে চিঠিটি বাংলায় অনূদিত হয়, পাঠ্যে দেখা যাচ্ছে সুভাষচন্দ্র বসু মান্দালয় জেল থেকে ০২/০৫/২৫ তারিখে একটি চিঠি লিখছেন পত্রপ্রেরক দিলীপ রায়ের পত্রের উত্তরে রচনায় পত্রলেখক সুভাষচন্দ্র বসু ব্যক্তিগত কথা ছাড়িয়ে জেলখানার ভিতরের অভিজ্ঞতার কথা বলে গিয়েছেন ভালােভাবে পড়লে দেখা যায়, প্রতিটি লাইনেই তিনি জেলখানার নানা কথার পাশাপাশি নিজের অনুভব-উপলব্ধির কথা বলেছেন এককথায় কিছু ভালাে, কিছু খারাপ অভিজ্ঞতার কথায় সমৃদ্ধ এই রচনা

অর্থাৎ, এখানে জেলখানায় পত্রপ্রেরক বা পত্রলেখকদের চিঠি পরীক্ষানিরীক্ষা, কারাশাসন প্রণালী, অপরাধীদের প্রতি অনুশাসন, দণ্ডবিধি, শহিদত্ব প্রসঙ্গ, কারবাসের ফলে দৈহিকমানসিক কষ্ট, অশ্রুপাত সমস্ত কথাই লিখেছেন সুভাষচন্দ্র বসু জেলখানার নানা প্রসঙ্গই চিঠির পরিকাঠামােতে বারবার অবতারণা করা হয়েছে অতএব, এই লেখাটির নামকরণজেলখানার চিঠিযথাযথ সার্থক হয়েছে

 

. সুভাষচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন কেন ?

উত্তর - ভারতবিদ্বেষী ইংরেজ-অধ্যাপক ওটেনকে প্রহারের অভিযােগে সুভাষচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন

 

. রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে তিনি কোন দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন ?

উত্তর - রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন

 

২. অনধিক তিনটি বাক্যে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :


. তােমার পাঠ্য পত্রখানি কে, কোথা থেকে, কাকে লিখেছিলেন ?

উত্তর -পাঠ্য পত্রখানি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বর্তমান মায়ানমারের মান্দালয় জেল থেকে বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে লিখেছিলেন

 

. কোন ব্যাপারটিকে পত্ৰলেখক আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে দেখার কথা বলেছেন ?

উত্তর -সুভাষচন্দ্র বসু এবং অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা অকারণে বা সম্পূর্ণ অজ্ঞাত কারণে রাজনৈতিক বন্দি হিসাবে জেলে অন্তরীন থেকে যেসব ঘটনাকে মেনে চলতে বাধ্য হচ্ছেন, সেই অকারণে বন্দি থাকার ব্যাপারটাকেই তিনি আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে দেখার কথা বলেছেন

 

. বন্দিদশায় মানুষের মনে শক্তি সঞ্চারিত হয় কীভাবে?

উত্তর -বন্দিদশায় মানুষের মনে শক্তির সার ঘটার অন্যতম কারণ হলদার্শনিক ভাব এই ভাবের কারণেই মানুষের মনে জীবন জগৎ সম্পর্কে একটি তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যাত্ম ধারণা হয়

 

. মান্দালয় জেল কোথায় অবস্থিত ?

উত্তর -মান্দালয় জেল বর্তমান মায়ানমারে অবস্থিত পরাধীন ভারতের ব্রিটিশ সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এই জেলে বন্দি রেখে নানাভাবে শারীরিক মানসিক অত্যাচার চালাত বালগঙ্গাধর তিলকও এই জেলে একসময় বন্দি ছিলেন

 

. ভারতীয় জেল বিষয়ে একটি পুস্তক সুভাষচন্দ্রের লেখা হয়ে ওঠেনি কেন ?

উত্তর -ভারতীয় জেল বিষয়ে সুভাষচন্দ্র বসুর একটি পুস্তক লেখা না-হয়ে ওঠার কারণ, বই লেখার জন্য যে উদ্যম বা শক্তির প্রয়ােজন, সেই সময় তার কাছে সেই উদ্যম বা শক্তির অভাব ছিল তা ছাড়া, তাঁর বিভিন্ন সমস্যা অস্থিরতার কারণে সে-চেষ্টার উপযুক্ত সামর্থ্যও ছিল না

 

. সুভাষচন্দ্র কেন দিলীপ রায় প্রেরিত বইগুলি ফেরত পাঠাতে পারেননি ?

উত্তর -সুভাষচন্দ্র বসু দিলীপ রায় প্রেরিত বইগুলি ফেরত পাঠাতে পারেননি কারণ, দিলীপকুমার রায় প্রেরিত বইগুলির তিনি ছাড়া আরও বহু পাঠক আছেন আসল কথা হললেখকের আরও অনেক রসগ্রাহী পাঠক তৈরি হওয়ায় বক্তা বইগুলি পাঠাতে অপারগ


৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর কয়েকটি বাক্যে লেখাে :

 

. নেতাজি ভবিষ্যতের কোকর্তব্যের কথা এই চিঠিতে বলেছেন ?কেন এই কর্তব্য স্থির করেছেন ?কারাশাসন প্রণালী বিষয়ে কাদের পরিবর্তে কাদের প্রণালীকে তিনি অনুসরণযােগ্য বলে মনে করেছেন ?

 

উত্তর - নেতাজি ভবিষ্যৎ ভারতের কারাগার সংস্কারসাধনের কথা এই চিঠিতে বলেছেন

স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য নেতাজিকে বহুবার কারাবরণ করতে হয় সেই অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর মনে হয়েছে, কোনাে কারণে কাউকে যদি জেলে থাকতে হয়, তবে জেলের পরিবেশের কারণে তার মানসিকতার বিকার ঘটতে বাধ্য জেলের বিকৃত পরিবেশে অধিকাংশ বন্দিদের সামান্যতম নৈতিক উন্নতি হয় না বরং তাদের মনে আরও বেশি ক্ষোভ, হিংসা, ঘৃণা প্রতিহিংসা জেগে ওঠে কারাশাসন প্রণালী সংস্কার করেই এই অবস্থার বদল ঘটানাে সম্ভব হতে পারে বলে তিনি মনে করেন কারণে, এই কাজকে তিনি নিজের ভবিষ্যৎ কর্তব্য বলে স্থির করেছেন

কারাশাসন প্রণালী বিষয়ে ভারতীয় কারাশাসন প্রণালী (আসলে ব্রিটিশ-প্রণালী)- পরিবর্তে আমেরিকার ইউনাইটেড স্টেটস-এর মতাে উন্নত দেশগুলির কারাশাসন প্রণালী অনুসরণযােগ্য বলে তিনি মনে করেছেন

 

. সেজন্য খুবই খুশি হয়েছি -বক্তা কে ? তিনি কীজন্য খুশি হয়েছেন?

উত্তর -প্রশ্নোধৃত উক্তির বক্তা মান্দালয় জেলে বন্দি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু

জেলে বন্দি আসামির কাছে বাইরে থেকে কোনাে চিঠি এলে তা দু-দুবার পরীক্ষা করা হয় এটিই ব্রিটিশ শাসকের রীতি এবার সেই রীতি লজ্জিত হয়েছে বন্ধু দিলীপকুমার রায়ের চিঠি তাঁর কাছে অন্যান্য বারের মতাে এবার double distillation'- ভিতর দিয়ে আসেনি বলে তিনি খুশি হয়েছেন


.আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিনকে, কাকে কথা বলেছেন ? কীসের উত্তর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ?

উত্তর -সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে কথা বলেছেন

নেতাজি দিলীপকুমার রায়ের লেখা পড়ে অভিভূত চিঠিটি সুভাষচন্দ্র বসুর হৃদয়কে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে তাঁর মনকে সেই চিঠি এতটাই স্পর্শ করেছে যে, তিনি যেন নতুন এক চিন্তায় অনুপ্রাণিত হয়েছেন দিলীপকুমারের লেখায় তাঁর মন এমন বিমােহিত হয়ে উঠেছে যে, তাঁর পক্ষে সে চিঠির উত্তর দেওয়া সুকঠিন এমনকি তিনি এও জানেন, যে তাঁর চিঠি censor হয়ে প্রাপকের কাছে যাবে তাতে নেতাজির ব্যক্তিমনের গভীর আবেগ বেদনা অনেকের সামনে চলে আসবে, যা তিনি কোনােদিন চাননি তাই এরকম চিঠি তাঁর পক্ষে লেখা সম্ভব নয় বলেই তিনি বলেছেন- “আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন

 

.পরের বেদনা সেই বুঝে শুধু যে জন ভুক্তভােগী -উদ্ধৃতিটির সমার্থক বাক্য পত্রটি থেকে খুঁজে নিয়ে লেখাে সেই বাক্যটি থেকে লেখকের কোন মানসিকতার পরিচয় পাও ?

উত্তর -পাঠে উল্লিখিত আলােচ্য উদ্ধৃতিটির সমার্থক বাক্য হল— “আমি যদি স্বয়ং কারাবাস না-করতাম তাহলে একজন কারাবাসী বা অপরাধীকে ঠিক সহানুভূতির চোখে দেখতে পারতাম

ওপরের বাক্য থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, নেতাজি কারাবন্দিদের প্রতি সহানুভূতিশীল তিনি মনে করেন, জেলখানা কেবল শাস্তিদানের জায়গা নয়, তা সংশােধনের স্থানও হওয়া উচিত তাই তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের সংশােধনের মধ্যে দিয়ে সমাজজীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার পক্ষপাতী কিন্তু এদেশের কারাগারের যে শাসন-প্রণালী, তাতে বন্দিদের সুকোমল মানসবৃত্তি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় লেখক তার সহানুভূতিশীল মন দিয়ে এগুলি উপলব্ধি করেন সুতরাং, এর থেকে বােঝা যায়, তিনি দরদি অনুভূতিশীল মনের অধিকারী

 

.আমার মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে, অনেকখানি লাভবান হতে পারব -কোন্ প্রসঙ্গে বক্তার এই উক্তি ? জেলজীবনে তিনি আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে কীভাবে লাভবান হওয়ার কথা বলেছেন ?

 

উত্তর -জেলের মধ্যে যে-নির্জনতায় বা দীর্ঘ সময়সীমায় মানুষ বন্দি-জীবনযাপন করতে করতে জীবনের চরম সমস্যাগুলিকে তলিয়ে বােঝার সুযােগ পায়, সেই নির্জনতা প্রসঙ্গে বক্তার এই উক্তি

লােকমান্য তিলক কারাবাসকালে গীতার আলােচনা করে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে লাভবান হয়েছেন সেই আধ্যাত্মিকতার কথাই লেখক বলেছেন

 

.  Martyrdom' শব্দটির অর্থ কী ? এই শব্দটি উল্লেখ করে বক্তা কী বক্তব্য রেখেছেন ?

উত্তর -Martyrdom' শব্দেরঅর্থ হলআত্মবলিদান অন্যভাবে বলা যায় রাজনৈতিক বিশ্বাসের জন্য বা মহৎ আদর্শের খাতিরে স্ব-ইচ্ছায় প্রবল কষ্টভােগ করা

এই শব্দটির উল্লেখ করে বক্তা বলেছেন, দিলীপকুমার রায় তাঁর কারাবাসকে বলিদানের সঙ্গে তুলনা করলেও, নিজে তিনি সেটিকে সেভাবে মনে করার স্পর্ধাও রাখেন না এটি তার কাছে বড়ােজোর একটা আদর্শ হতে পারে


. যখন আমাদিগকে জোর করে বন্দি করে রাখা হয় তখনই তাদের মূল্য বুঝতে পারা যায় ?'—কোন প্রসঙ্গে কথা বলা হয়েছে ? তাদের মূল্যবিষয়ে লেখকের বক্তব্য আলােচনা করাে

উত্তর -জেলের ভিতরে অনুষ্ঠিত পিকনিক বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা চর্চার ফলে বন্দি মানুষের জীবনে সরসতা সমৃদ্ধিলাভ প্রসঙ্গে কথা বলা হয়েছে

তাদের মূল্য বলতে, জেলের ভিতর অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক আনুষঙ্গিক নানা অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে লেখক বলেছেন, এর ফলে, বন্দিদের শারীরিক মানসিক পরিবর্তন সাধিত হয় খাদ্যপানীয় বা শরীরচর্চার অভাবে কিংবা সমাজ-বিচ্ছিন্ন অবস্থানের বন্দিজীবন অসহনীয় হয়ে ওঠে কিন্তু, সুস্থ মানসিক পরিবর্তন হলেই বন্দি মানুষ জেলের বাইরের মানুষের মতাে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে তাদের মধ্যে কোনাে অমানুষিক বিকৃতি আসে না বরং সুস্থ-কল্যাণকর আচরণে সবাই একসঙ্গে অবস্থান করে সেক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি জীবনে উৎকর্ষতা দান করে

 

. মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা কী কঠোর নিরানন্দময়যে ঘটনায় লেখকের মনে এই উপলদ্ধি ঘটে তার পরিচয় দাও

উত্তর -নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু মে ১৯২৫ তারিখে বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে লেখা পত্রটিতে তার কারারুদ্ধ জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতিটি করেছেন তিনি মনে করেন, জেলের ভিতরে বন্দিদের দৈহিক অপেক্ষা মানসিক কষ্ট সহ্য করতে হয় বেশি এই মানসিক আঘাতে আঘাতকারীর প্রতি বন্দির মন বিরূপ হয় তাতে হয়তাে ওপরওয়ালার উদ্দেশ্য সফল হয় না কিন্তু বন্দিদের মনের মধ্যে কোনাে আনন্দধাম গড়ে ওঠে না এটিই লেখক উপলব্ধি করেছেন

 

. এই চিঠিতে কারাবন্দি অবস্থাতেও দুঃখকাতর, হতাশাগ্রস্ত নয়, বরং আত্মবিশ্বাসী আশাবাদী নেতাজির পরিচয়ই ফুটে উঠেছেপত্রটি অবলম্বনে নিজের ভাষায় মন্তব্যটির যাথার্থ্য পরিস্ফুট করাে

উত্তর -সুভাষচন্দ্র বসু মান্দালয় জেলে বন্দি জীবনযাপন করলেও চিঠির মধ্যে তাঁর মানসিক অবস্থার অবনতির কথা কোথাও নেই তিনি এখানে দুঃখে কাতর বা হতাশায় মগ্ন নন বরং দেখা যায়, খুব সহজ স্পষ্টভাষায় তিনি লিখছেন, কারাশাসনের সংস্কার প্রয়ােজন এছাড়া জেলের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বই লিখতে চান তিনি মনে করেন, দীর্ঘ কারাবাসে বা নির্জনতায় আধ্যাত্মিক উন্নতি হতে পারে তিনি আশা করেন, জেলের ভিতরের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি বন্দিদের জীবনে উৎকর্ষসাধন করতে পারে সর্বোপরি ভাবেন, অশুপাতের ভিতর অনেক মহত্তর কর্ম লুকিয়ে আছে অর্থাৎ, বিনা দুঃখ-কষ্টে মহৎ কিছু লাভ করা সম্ভব নয় সুতরাং, সুভাষচন্দ্র বসু রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে কারাবাসের সময় প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার দ্বারা কারাশাসনের অব্যবস্থা বন্দিদের চরম দুর্ভোগ উপলব্ধি করলেও তিনি দুঃখকাতর বা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েননি বরং, আত্মবিশ্বাসী হয়ে দুঃখ জয়ের আহ্বান জানিয়েছেন


.১০ কারাগারে বসে নেতাজির যে ভাবনা, যে অনুভব, তার অনেকখানি কেন অকথিত রাখতে হবে ?

উত্তর - নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রাজনৈতিক বন্দি হিসাবে মান্দালয়ের কারাগারে অবস্থানকালে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২মে বন্ধু দিলীপকুমার রায়-কে চিঠি লিখেছিলেন চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, কারাগারে অবস্থানকালে তার যে ভাবনা বা উপলব্ধি, তার অনেকখানিই অকথিত রাখতে হবে কারণ, এটি তাঁর পুরােপুরি অন্তরের গভীরতম প্রবাহ, যা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত এটি দিনের উন্মুক্ত আলােয় প্রকাশিত হলে তার মাধুর্য নষ্ট হতে পারে এমনকি ‘Censor- এর হাতে সেটির লাঞ্ছিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কিংবা জনগণের বহু আলােচনায় সেটি তাঁর বিপদের কারণও হতে পারে

 

৪. নীচের বাক্যগুলির তথ্যগত অশুদ্ধি সংশােধন করাে :

 

. নেতাজি মনে করতেন না যে, আমাদের সমস্ত দুঃখকষ্টের অন্তরে একটা মহত্তর উদ্দেশ্য কাজ করছে

উত্তর - নেতাজি মনে করতেন যে, আমাদের সমস্ত দুঃখকষ্টের ভিতর মহত্তর উদ্দেশ্য কাজ করে

 

. কারাগারে বন্দি অবস্থায় নেতাজি সুভাষ গীতার আলােচনা লিখেছিলেন

উত্তর - কারাগারে বন্দি অবস্থায় লােকমান্য তিলক গীতার আলােচনা লিখেছিলেন

 

8. জেল জীবনের কষ্ট মানসিক অপেক্ষা দৈহিক বলে নেতাজি মনে করতেন

উত্তর - জেল জীবনের কষ্ট দৈহিক অপেক্ষা মানসিক বলে নেতাজি মনে করতেন

 

৫. নীচের বাক্যগুলি থেকে সমাসবদ্ধ পদ বেছে নিয়ে ব্যাববাক্য-সহ সমাসের নাম লেখাে :


. তােমার চিঠি হৃদয়তন্ত্রীকে কোমলভাবে স্পর্শ করেছে

উত্তর - হৃদয়তন্ত্রী - হৃদয় রূপ তন্ত্রীরূপক কর্মধারয় সমাস

 

. সম্পূর্ণ অজ্ঞাত কারণে জেলে আছি

উত্তর - অজ্ঞাত - নয় জ্ঞাতনঞ তৎপুরুষ সমাস

 

. তখন আমার নিঃসংশয় ধারণা জন্মে

উত্তর - নিঃসংশয় - নিঃ (নেই) সংশয় যার/যাতেবহুব্রীহি সমাস

 

. নূতন দণ্ডবিধির জন্যে পথ ছেড়ে দিতে হবে

উত্তর -দণ্ডবিধি - দণ্ডের নিমিত্ত বিধিনিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস

 

. লােকমান্য তিলক কারাবাস-কালে গীতার আলােচনা লেখেন

উত্তর -লােকমান্য - লােক দ্বারা মান্যকরণ তৎপুরুষ সমাস

 

৬. শব্দগুলির ব্যুৎপত্তি নির্ণয় করাে :

i. পাঠক - পঠ্+ অক্

ii. দর্শন - দৃশ্ + অন্

iii. দৈহিক - দেহ + ষ্নিক্

iv. আধ্যাত্মিক - অধ্যাত্ম + ইক্ (য়িক)

v. ভণ্ডামি - ভণ্ড + আমি

vi. সমৃদ্ধ - সম্ + ঋদ্ধ

vii. মহত্ত্ব - মহৎ + ত্ব

viii. অভিজ্ঞতা - অভিজ্ঞ + তা

 

৭. নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করাে :


. আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন (না-সূচক বাক্যে)

উত্তর - আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া মােটেই সহজ নয়

 

. সেই জন্যই সাধারণের কাছে মুখ দেখাতে সে লজ্জা পায় (প্রশ্নবােধক বাক্যে)

উত্তর - সেই জন্যই সাধারণের কাছে মুখ দেখাতে সে লজ্জা পায় না কি?

 

. লজ্জায় তারা বাড়িতে কোনাে সংবাদ দেয়নি (যৌগিক বাক্যে)

উত্তর - তারা লজ্জা পেয়েছে এবং বাড়িতে কোনাে সংবাদ দেয়নি

 

. কতকগুলি অভাব আছে যা মানুষ ভিতর থেকে পূর্ণ করে তুলতে পারে (সরল বাক্যে)

উত্তর - কতকগুলি অভাবকে মানুষ ভিতর থেকে পূর্ণ করে তুলতে পারে

 

. বিনা দুঃখ কষ্টে যা লাভ করা যায় তার কোন মূল্য আছে ? (নির্দেশক বাক্যে)

উত্তর - দুঃখ কষ্টেই লভ্যবস্তুর মূল্য নিরূপিত হয়

 

৮. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখাে :

 

. শুধু শাস্তি দেওয়া নয়, সংশােধনই হওয়া উচিত জেলের প্রকৃত উদ্দেশ্যতুমি কি এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত ? তােমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও

উত্তর -হ্যা, আমি এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত কারণ, জেলবন্দি মানুষ শুধু শাস্তি পেলে দণ্ডদাতার প্রতি বিরূপ হতে পারে এবং সেইসঙ্গে সমাজের প্রতিও তার ঘৃণা জন্মায় এমনকি, মানবসভ্যতাও তার কাছে অর্থহীন মনে হতে পারে মানুষ মনুষ্যত্বহীন হয়ে পড়ে তা ছাড়া জেলের ভিতরের অবস্থা সম্পর্কে নেতাজি বলেছেনসেখানকার সমস্ত আবহাওয়া মানুষকে বিকৃত, অমানুষ করার উপযােগী সেখানে অপরাধীদের নৈতিক উন্নতি হয় না বরং, তারা আরও হীন হয়ে পড়ে তা ছাড়া, দীর্ঘ বন্দিত্বের জীবনে মানুষ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং একপ্রকার হতাশ হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলে লােকমান্য তিলকের অকাল-মৃত্যুর উদাহরণ টেনে তিনি স্পষ্ট করেছেন, দৃঢ়চেতা কিছু মানুষ শত দুরবস্থায় ভেঙে না-পড়লেও বেশিরভাগ মানুষই মানসিক দিক দিয়ে চরম বিপর্যস্ত হয় এজন্য শাস্তির পাশাপাশি কারা-শাসনবিধি পালটানাে উচিত

 

.আমাদের দেশের আর্টিস্ট বা সাহিত্যিকগণের যদি কিছু কিছু কারাজীবনের অভিজ্ঞতা থাকত তাহলে আমাদের শিল্প সাহিত্য অনেকাংশে সমৃদ্ধ হতাে’- প্রসঙ্গে কারাজীবন যাপন করা কয়েকজন সাহিত্যিকের নাম এবং তাঁদের রচিত গ্রন্থের নাম উল্লেখ করাে

উত্তর -কারাজীবন যাপন করেছেন, এমন কয়েকজন সাহিত্যিক হলেনমুকুন্দদাস, কাজী নজরুল ইসলাম, সুভাষ মুখােপাধ্যায়, সতীনাথ ভাদুড়ি প্রমুখ তাঁদের লেখা গ্রন্থগুলির নাম যথাক্রমে—“কর্মক্ষেত্র’, ‘প্রলয় শিখা’, ‘পদাতিক


. পত্রটি পড়ে কারাজীবন বিষয়ে তােমার যে ধারণা অনুভূতি জন্মেছে তা জানিয়ে বন্ধুকে একটি পত্র লেখাে

উত্তর -

প্রিয়রাজীব,

 তোর চিঠি পেয়েছি, বর্তমানেতুই আন্দামান ভ্রমণ করছিস, শুনেভারি আনন্দ হলোওখানে সেলুলার জেল অবশ্যই ভালোকরে ঘুরে দেখার চেষ্টাকরিস এটিএখন আমাদের জাতীয় সংশোধনাগার এইপ্রসঙ্গে বলি আমি (Your Name) লেখা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুরপত্রসাহিত্য পাঠ করেছিতার থেকে কয়েদিদের জীবনযাপনতাদের অবস্থা সম্পর্কে বেশধারণা জন্মেছে এবারেরচিঠিতে সে সম্পর্কে তোকেজানাচ্ছি

জেলখানারবিকৃত আবহাওয়া কয়েদিদের মনকে আরো বিকৃতকরে তোলে, কারাবাসে মানষেরনৈতিক উন্নতি তা না বরং

খেলাধুলারপ্রয়োজন যা আমাদের দেশেরকারাগারগুলিতে নেই বললেই চলে তবেমনে রাখতে হবে, কারাবাসেআমাদের শারীরিক কষ্টের চেয়ে মানসিককষ্ট হয় সবচেয়ে বেশি তাইনিজের লোকের, বন্ধু-বান্ধবেরএবং সর্বসাধারণের সহানুভূতি শুভেচ্ছা মানুষকেজেলের মধ্যেও অনেকখানি স্বস্তিদিতে পারে

জেল জীবন সম্বন্ধে আমারপাঠ করা অনেক কথালিখলাম, তোর ভ্রমণকালীন সময়ভালো কাটুক এই প্রার্থনাকরি আমিভালো আছি তুইকবে ফিরছিস জানাবি

 

. নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সম্পর্কে আরও জেনেসুভাষচন্দ্রের স্বদেশপ্রেমবিষয়ে একটি প্রবন্ধ রচনা করাে


সুভাষচন্দ্রের স্বদেশপ্রেম

 

ওড়িশার কটক শহরে ২৩ জানুয়ারি ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জন্মগ্রহণ করেন তাঁর বাবা ছিলেন জানকীনাথ বসু তিনি পড়াশােনা করেন র্যাভেন কলেজিয়েট স্কুলে, পরে ভরতি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে এই কলেজ থেকেই সুভাষচন্দ্রের স্বদেশপ্রেমের পরিচয় পাওয়া যায় সেখানে ইংরেজির অধ্যাপক ওটেন সাহেব ভারতবিদ্বেষী মনােভাবের পরিচয় দিলে, সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর সংঘাত বাধে এবং এই কারণে তিনি কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন

তখনকার দিনে আইসিএস ছিল খুব নামকরা চাকরি কিন্তু সুভাষচন্দ্র বসু ইংরেজদের গােলামি করবেন না-বলে স্বদেশপ্রেম বা স্বাধীনতার জন্য সে চাকরি ছেড়ে দেন বিলেত থেকে ফিরে আসেন দেশসেবার জন্য গান্ধিজি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সহায়তায় যােগ দেন ভারতের দেশসেবার কাজে তাঁর বিরােধ বাধল অহিংসবাদীদের সঙ্গে কারণ, এতদিনে তিনি বাংলার সহিংসবাদীদের কাছে বিশেষ প্রিয় হয়ে উঠেছেন

ব্রিটিশ সরকার তাকে গৃহবন্দী করে রাখে কিন্তু তিনি ব্রিটিশদের চোখে তার এলগিন রোডের বাড়ি থেকে আফগানিস্তানে পালিয়ে যান, যেখান থেকে জার্মানরা হিটলারের সাথে দেখা করে। কিন্তু তার উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়ায় তিনি সাবমেরিনে করে জাপানে যান। সেখানে তিনি রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব পান। তারপর তিনি মুক্তিবাহিনী তৈরি করেন। তাদের সাথে তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেন এবং ইম্ফল ও কোহিমায় স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলন করেন। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ স্বাধীন। 'জয় হিন্দ' এবং 'দিল্লি চলো' ছিল তাঁর বিখ্যাত স্লোগান।১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান পরাজিত হলে নেতাজি আত্মগােপন করেন কেউ কেউ বলেন, তিনি বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন কিন্তু আজ পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু নিয়ে রহস্যই থেকে গিয়েছে তবে তিনি যেখানে যেভাবেই থাকুন, ভারতবাসীর মনে তিনি চিরজাগরুক


<< Read More >>

 

Class 8 All Subject Solution >>

Click Here

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post