পথচলতি (Pathchalti) অনুশীলনী প্রশ্ন উত্তর | Class 8 | WBBSE
পথচলতি
নামকরণ
নামকরণ বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন- ১. বিষয়বস্তুকেন্দ্রিকনামকরণ, ২. চরিত্রকেন্দ্রিক নামকরণ, ৩. সাংকেতিক বা ব্যঞ্জনধর্মী নামকরণ।
আলােচ্যগল্পটির নামকরণ করা হয়েছে বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে। পথে বহু মানুষের সঙ্গে আমাদের আলাপ হয়। পারস্পরিক সৌহার্দে সেই আলাপ বেশ কিছুটা আন্তরিক হয়ে ওঠে, খুঁজে পাওয়া যায় মনের রসদ। লেখক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় দেহরাদুন এক্সপ্রেসে চড়ে কলকাতা ফেরার সময় ভিড়ের কারণে ট্রেনের মধ্যম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্থান পাননি। তিনি লক্ষ করেন, তৃতীয় শ্রেণির একটি কামরা কিছু কাবুলিওয়ালা দখল করে রেখেছে। লেখক ফরাসি ভাষা জানার সুবাদে ওই কাবুলিওয়ালাদের সঙ্গে অনায়াসেই বার্তালাপ করতে পারেন এবং এর ফলে তিনি কামরায় অনায়াসে জায়গা করে নেন। তাঁদের সঙ্গে কলকাতায় ফেরার অভিজ্ঞতাই আলােচ্য গল্পটির কেন্দ্রীয় বিষয়। সমগ্র গল্পটাই পথের অভিজ্ঞতাতে পরিপূর্ণ তাই চলার পথের অভিজ্ঞতাই যেহেতু এই গল্পের মূল বিষয়, সেজন্য তাকে কেন্দ্র করে নামকরণটি করা হয়েছে। সুতরাং, বিষয়বস্তুর বিচারে ‘পথচলতি’ নামটি সর্বাঙ্গে সার্থক ও সুন্দর হয়ে উঠেছে।
১.১ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের আত্মজীবনীর নাম কী ?
উত্তর - সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের আত্মজীবনীর নাম হল ‘জীবনকথা।
১.২ ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে কোন গ্রন্থ রচনার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন ?
উত্তর - ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে লেখা ‘The Origin and Development of the Bengali Language 9625 Gall তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন।
২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও :
২.১ লেখকের কোন্ ট্রেন ধরার কথা ছিল ?
উত্তর - লেখকের ‘দেহরাদুন এক্সপ্রেস’ ধরার কথা ছিল।
২.২ একটা তৃতীয় শ্রেণির বগির কাছে একেবারেই লােকের ভিড় নেই কেন ?
উত্তর - একটা তৃতীয় শ্রেণির বগির কাছে একেবারেই লােকের ভিড় না-থাকার কারণ হল- কিছু কাবুলিওয়ালা পুরাে বগিটির দখল নিয়ে অন্য কোনাে যাত্রীদের উঠতে দিচ্ছিল না।
২.৩ পাঠানদের মাতৃভাষা কী ?
উত্তর - পাঠানদের মাতৃভাষা পশতু।
২.৪ বৃদ্ধ পাঠানের ডেরা বাংলাদেশের কোথায় ছিল ?
উত্তর - বৃদ্ধ পাঠানের ডেরা ছিল বাংলাদেশের বরিশাল জেলার বন্দর অঞ্চলে পটুয়াখালিতে ছিল।
২.৫ খুশ-হাল খাঁ খট্টক কে ছিলেন ?
উত্তর - খুশ-হাল খাঁ খট্টক ছিলেন সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সময়কালের পশতু ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি।
২.৬ আদম খাঁ ও দুরখানির কিসসার কাহিনি কেমন ?
উত্তর - আদম খাঁ ও দুরখানির কিসসার কাহিনি দিল-ভাঙার অর্থাৎ, দুঃখের।
২.৭ এই পাঠ্যে কোন্ বাংলা মাসিকপত্রের উল্লেখ আছে ?
উত্তর - এই পাঠ্যে বাংলা মাসিক পত্রিকা প্রবর্তক-এর উল্লেখ আছে।
২.৮ রােজার উপপাসের আগে কাবুলিওয়ালারা ভরপেট কী খেয়েছিলেন ?
উত্তর - রােজার উপবাসের আগে কাবুলিওয়ালারা ভরপেট রােটা ও কাবাব খেয়েছিলেন।
২.৯ তসবিহ’ শব্দের অর্থ কী ?
উত্তর - ‘তসবিহ’ শব্দের অর্থ মালা জপ করা।
২.১০ আরবি ভাষায় ঈশ্বরের নিরানব্বইটি পবিত্র ও সুন্দর নামকে কী বলা হয় ?
উত্তর - আরবি ভাষায় ঈশ্বরের নিরানব্বইটি পবিত্র ও সুন্দর নামকে বলা হয়—‘নব্বদ-ও নও-অসমা-ই-হাসানা”।
৩. নিম্নলিখিত শব্দগুলির সন্ধি বিচ্ছেদ করাে :
i. হুংকার - হুম + কার
ii. স্বস্তি - সু + অস্তি
iii. বিষয়ান্তর - বিষয় + অন্তর
৪. নিম্নলিখিত শব্দগুলির প্রকৃতি-প্রত্যয় নির্ণয় করাে :
i. ফিরতি - ফির + তি
ii. আভিজাত্য - অভিজাত + স্ন্য(য)
iii. জবরদস্ত - জবর + দস্ত
iv. নিবিষ্ট - নি√বিশ + ক্ত
v. উৎসাহিত - উৎ + সহ + অ + ইত
৫. ব্যাসবাক্য-সহ সমাসের নাম লেখাে :
i. শীতবস্ত্র - শীতকালে পরিধেয় বস্ত্র মধ্যপদলােপী কর্মধারয় সমাস। শীতের বস্ত্র - সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস।
ii. মাতৃভাষা - মায়ের ভাষা - সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস।
iii. শিশুসুলভ - শিশুর ন্যায় সুলভ - উপমান কর্মধারয় সমাস।
iv. ত্রিসীমানা - ত্রি (তিন) সীমানার সমাহার - দ্বিগু সমাস।
৬. নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করাে :
৬.১ গাড়িতে সেদিন অসম্ভব ভিড় দেখা গেল। (না-সূচক বাক্যে)
উত্তর - গাড়িতে সেদিন কম ভিড় দেখা গেল না।
৬.২ কাবুলিওয়ালা পাঠানদের মাতৃভাষা পশতুর সম্মান তখন ছিল না। (প্রশ্নবােধক বাক্যে)
উত্তর - কাবুলিওয়ালা পাঠানদের মাতৃভাষা পশতুর সম্মান তখন ছিল কি?
৬.৩ কলকাতার ভাষা তাঁর আয়ত্ত হয়নি।(জটিল বাক্যে)
উত্তর - কলকাতার যে ভাষা, তা তাঁর আয়ত্ত হয়নি।
৬.৪ দুই-একজন মাঝে-মাঝে এক-আধ লবজ ফারসি বললে বটে, কিন্তু এদের বিদ্যেও বেশিদূর এগােল না। (সরল বাক্যে)
উত্তর - দুই-একজন মাঝে মাঝে এক-আধ লবজ ফারসি বললেও এদের বিদ্যেও বেশিদূর এগােল না।
৬.৫ বাংলাদেশে তােমার ডেরা কোথায় ? (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর - বাংলাদেশে তােমার ডেরা কোথায় জানতে চাইছি।
৭. প্রসঙ্গ উল্লেখ করে টীকা লেখাে :
কাবুলিওয়ালা
উৎস : সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পথচলতি গদ্যাংশ থেকে আলােচ্য কথাটি নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ : গয়া থেকে ফেরার সময় দেহরাদুন এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠবার প্রসঙ্গে কাবুলিওয়ালা কথাটি এসেছে।
তাৎপর্য : টিকিট থাকা সত্ত্বেও অত্যধিক ভিড় ঠেলে ট্রেনটিতে লেখকের প্রবেশের সাধ্য ছিল না। অথচ, তিনি দেখলেন একটি বগিতে কয়েকজন মাত্র কাবুলিওয়ালা দিব্যি আরামে শুয়ে বসে আছে। কেউ সেখানে ঢুকতে পারছে না। কেউ ঢুকতে গেলে তারা তাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে সাহস করছে না কেউ। কাবুল দেশের পাঠান জাতির এই মানুষগুলি ব্যাবসায়ী। তারা সুদের কারবার-সহ এদেশে নানারকম শুকনাে ফল ও মশলার ব্যাবসা করত। এই কাবুলিওয়ালাদের নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি অতি বিখ্যাত গল্প আছে। এদের মধ্যে ব্যাবসায়ী মানসিকতার সঙ্গে বরাবরই একটি শিশুসুলভ লক্ষণ দেখা যায়।
পশতু
উৎস: ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পথচলতি’ গদ্যাংশ থেকে ‘পশতু’ শব্দটি নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ : কাবুলিওয়ালা—পাঠানদের মাতৃভাষা ও তার সম্মান প্রসঙ্গে ‘পশতু’ কথাটির ব্যবহার হয়েছে।
তাৎপর্য : পশতু (পশতাে ভাষা) আফগানিস্থানের লােকভাষা। এটি মূলত পাঠান জাতির কথ্য ভাষা। গয়া থেকে ফেরার সময় লেখক লক্ষ করেন, ট্রেনের একটি কামরা কয়েকজন কাবুলিওয়ালা দখল করে রেখেছে। তাঁরা পশতু ভাষায় কথােপকথন করছিলেন। লেখক বলেছেন, এই ভাষার তেমন সম্মান না থাকায় । পশতু ভাষায় তেমন সাহিত্যিক নিদর্শন ছিল না। তবে পাঠ্যাংশে পশতু ভাষার বিখ্যাত কবি খুশ-হাল খাঁ খট্টক এবং আদম খান-দুরখানির প্রেমের প্রসঙ্গটি এসেছে।
ফারসি
উৎস: সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পথচতি’ গদ্যাংশে ‘ফারসি শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
প্রসঙ্গ : ট্রেনের কামরা অধিকার করে থাকা কাবুলিওয়ালাদের সঙ্গে আলাপ জমানাের অভিপ্রায়। প্রসঙ্গে ফারসি লেখক ফারসি ভাষার ব্যবহার করেছেন।
তাৎপর্য: আমরা এই প্রসঙ্গে জানতে পারি যে, ফারসি মূলত পারস্য উপসাগরীয় পাঠান জাতির ভাষা। অবশ্য এই ভাষা শিক্ষিত লােকের ভাষা। বিশেষত, আফগানিস্তানের শিক্ষিত, উচ্চ ও ভদ্র সমাজের লােকেরা। এই ভাষা ব্যবহার করে। এটি সেখানকার সরকারি ভাষাও বটে।
আফগানিস্তান
উৎস : সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের পথচলতি’ গদ্যাংশ থেকে ‘আফগানিস্তান’ শব্দটি গৃহীত হয়েছে।
প্রসঙ্গ : ফারসি ভাষা ও কাবুলিওয়ালাদের ভাষা পশতুর সম্পর্কে আলােচনা-প্রসঙ্গে আফগানিস্তান কথাটি এসেছে।
তাৎপর্য : আফগানিস্তান মধ্য এশিয়ার পর্বতসঙ্কুল দেশ এই দেশের তাপমাত্রা ৫° থেকে ৫৫ পর্যন্ত ওঠা-নামা করে। দেশটির আয়তন ৬,৫২,০৯০ বর্গকিলােমিটার। এর রাজধানী কাবুল। এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষি। প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, লবণ, তামা এখানকার প্রধান খনিজ সম্পদ। টাটকা ফল, শুকনাে আখরােট, বাদাম, পেস্তা, কার্পেট আফগানিস্তানের প্রধান রপ্তানি দ্রব্য।
বরিশাল
উৎস : সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পথচলতি’ গদ্যাংশে ‘বরিশাল’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
প্রসঙ্গ : কথাটি জনৈক কাবুলিওয়ালার ব্যাবসাকেন্দ্র ও ডেরা প্রসঙ্গে এসেছে।
তাৎপর্য : বরিশাল জেলা বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশের একটি নদীবহুল অঞ্চল। প্রচলিত ছন্দে স্থানটি সম্পর্কে বলা হত— “ধান নদী খাল/এই তিনে বরিশাল”। স্থানটির নামকরণ প্রসঙ্গে বহু কিংবদন্তি ও লােককথা চালু আছে। বর্তমানে এটি একটি বাংলাদেশের বিভাগও বটে। এই বিভাগে মােট ৬টি জেলা আছে। এক বৃদ্ধ কাবুলিওয়ালা আগা সাহেব বরিশালের বরিশালি ভাষাকে মাতৃভাষার মতাে ব্যবহারে সক্ষম বলে, লেখক তার প্রশংসা করেছেন।
গজল
উৎস : সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পথচলতি নামক গদ্যাংশে ‘গজল’ কথাটি উদ্ধৃত হয়েছে।
প্রসঙ্গ: সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে গয়া থেকে কলকাতায় আসার পথে সহযাত্রী কাবুলিওয়ালাদের এই জিজ্ঞাসা করেন, তাঁদের মধ্যে কেউ পশতু ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি খুশ হাল খাঁ ঘট্টকের গজল জানেন কিনা। লেখকের এই জিজ্ঞাসার সূত্র ধরে ‘গজল’ কথাটি এসেছে।
তাৎপর্য: ‘গজল’ আরবি শব্দ। যার অর্থ প্রেম বিষয়ক কবিতা। পারস্যে এই কবিতার সৃষ্টি হয়েছে। পরে তা গান হিসেবে পরিবেশিত হতে থাকে। পারস্যবিদ্রা বলেন, ভাবের দিক থেকে গজল দ্ব্যর্থক। সাধকেরা এর মধ্যে যেমন পারমার্থিক ব্যঞ্জনা খুঁজে পান, তেমনই প্রণয়ী এর মাঝে নর-নারীর প্রেমের ব্যঞ্জনাও পেতে পারেন। এই গানগুলি সাধারণত উর্দু ভাষায় রচিত। এই গানে রাগের আভাস মিললেও একে ঠিক মার্গসংগীতের পর্যায়ভুক্ত করা হয় না।
উর্দু
উৎস : ভাষাবিদ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পথচলতি’ গদ্যাংশ থেকে ‘উর্দু’কথাটি গৃহীত হয়েছে।
প্রসঙ্গ : লেখকের ট্রেনের তৃতীয় শ্রেণিতে কাবুলিওয়ালাদের সঙ্গে চলার প্রসঙ্গে ‘উর্দু বিষয়টি এসেছে।
তাৎপর্য : ‘উর্দু একটি ভাষা। এতে আরবি ও ফারসি শব্দের বাহুল্য রয়েছে। ভাষাটি হিন্দির কাছাকাছি হলেও বর্তমানে সম্পূর্ণ পৃথক রূপ নিয়েছে। বর্তমানে ফারসি অক্ষরে উর্দু ভাষা লেখা হয়। লেখক তাঁর সামনে বসা দুই পাঠানের কথােপকথনের সূত্রে পশতু ভাষার প্রসঙ্গ ধরে উর্দু ভাষার ব্যাপারে কিছু কথা বলেছেন। তাঁর মতে, উর্দুতে আরবি-ফারসি শব্দ আছে বলে তাঁর পক্ষে সহজে তা বােঝা সম্ভব হয়েছে। আর তাতে তিনি বুঝলেন, এরা বলছে। যে, লােকটি (লেখক) বিদ্বান ও বুদ্ধিমান।
নমাজ
উৎস: সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পথচলতি’ গদ্যাংশ থেকে ‘নমাজ’ কথাটি নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ : এখানে পাঠান মুসলমানদের গাড়ির মধ্যে আল্লার উপাসনা প্রসঙ্গে লেখক কথাটি বলেছেন।
তাৎপর্য : ‘নমাজ’ হল মুসলমানদের কোরানবিধিত ঈশ্বরােপাসনা। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মােট পাঁচবার নমাজ পড়েন। পাঁচবেলার এই নমাজকে ফজর, জোহর, আশর, মাগরির ও এষার নমাজ বলে। নমাজের এই বিভাগকে আবার ‘রাকাত’ হিসেবে ভাগ করা হয়। এই সময় অন্তত চারবার রাকাত পড়তে হয়। পাঠ্যাংশে ভােরবেলায় উঠে অনেকে যে নমাজ পড়ছিল, তা হল- ফজরের নমাজ।
৮. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর কয়েকটি বাক্যে লেখাে :
৮.১ স্টেশনে পৌঁছে লেখক কী দেখেছিলেন ?
উত্তর - ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথচলতি’ গদ্যাংশের বর্ণিত ঘটনা অনুসারে স্টেশনে পৌছে লেখক দেখলেন—ট্রেন যথাকালে এলেও গাড়িতে অসম্ভব ভিড়। মধ্যম শ্রেণির কামরায় ওঠা যায়। দ্বিতীয় শ্রেণির গাড়ির মেঝেতে লােক বিছানা নিয়েছে। কোথাও বা বসে ও দাঁড়িয়ে তােক যাচ্ছে। তবে তৃতীয় শ্রেণির বগির কাছে কোনাে ভিড় নেই। সেখানে গুটিকতক কাবুলিওয়ালা বিরাট কামরাখানা দখল করে বসে আছে। কাউকে সেখানে ঢুকতে দিচ্ছে। তাদের হুংকারে সবাই তটস্থ। রেলের কর্মচারী বা পুলিশও তাদের ত্রি-সীমানাতে ঘেঁষছে না।
৮.২ দু-চারটি ফারসি কথা বলতে পারার ক্ষমতা লেখককে কী রকম সাহস দিয়েছিল ?
উত্তর - ‘পথচলতি’ গদ্যাংশ থেকে আমরা জানতে পারি, দু-চারটি ফারসি বলতে পারার ক্ষমতা লেখককে কাবুলিওয়ালাদের দখল নেওয়া কামরায় ওঠবার সাহস দিয়েছিল। তিনি ভেবেছিলেন, ফারসি যেহেতু আফগানিস্তানের শিক্ষিত ভদ্র সমাজের সরকারি ভাষা, সেহেতু কথার মাধ্যমে তিনি তাঁর অবস্থা বােঝাতে সক্ষম হবেন। তা ছাড়া ফারসি বলা শিক্ষা ও আভিজাত্যের লক্ষণ এবং ফারসিতে দু-একটা কথা বলে তিনি সবাইকে অবাক করে দেবেন। তারপর বাঙালির মুখে ফারসি শুনে তারা হয়তাে জায়গাও করে দিতে পারে। ফারসি ভাষা বলতে পারার ক্ষমতা লেখককে এই অসমসাহসিক কাজে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
৮.৩ ‘আলেম’ শব্দের মানে কী ? লেখককে কারা, কেন ‘এক মস্ত আলেম’ ভেবেছিলেন ?
উত্তর - ‘আলেম' কথার অর্থ— সর্বজ্ঞ অর্থাৎ, সব বিষয়ে পারদর্শী। এককথায় সর্বজ্ঞ পণ্ডিত ব্যক্তি।
গাড়িরমধ্যে থাকা কাবুলিওয়ালাদের অনেকে লেখককে ‘আলেম’ ভেবেছিলেন। জোরপূর্বক কামরায় ঢুকে লেখক যেভাবে তাদের সঙ্গে ফরাসি ভাষায় কথা বলেছিলেন, তাতে সবাই বিস্মিত হয়। কথাবার্তার মাধ্যমে লােকগুলির যে ফারসি বলার ক্ষমতা নেই, তা বুঝে লেখক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় খানিকটা তাচ্ছিল্য করে ব্যঙ্গধ্বনিতে বলেন তারা আফগানিস্তানের কোথা থেকে আসছে যে, ফারসি জানে না। তাতেই তারা বােঝে যে, লেখক বাঙালি হলেও অনেক জানে। ফলে তারা সমীহ করে তাঁকে ভিতরে ঢুকতে দেয় এবং তাঁকে ‘আলেম’ মনে করে।
৮.৪ আগা-সাহেব সম্বন্ধে যা জানা গেল, সংক্ষেপে লেখাে।
উত্তর - প্রখ্যাত ভাষাতাত্ত্বিক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পথচলতি’ শীর্ষক রচনাংশে আগা সাহেবের কথা জানা যায়। শ্বশুরবাড়ি থেকে ফেরার পথে তিনি দেহরাদুন এক্সপ্রেসের তৃতীয় শ্রেণির কামরায় অন্যান্য কাবুলিওয়ালাদের সঙ্গে আগা সাহেবের সাক্ষাৎ পান। আগা সাহেব লেখকের থেকে একটু দূরে বাংকের ওপর শুয়েছিলেন। লেখককে দেখে তিনি জানতে চাইলেন যে, তিনি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন কি না। লেখক তাঁর কাছে জানতে পারলেন—বৃদ্ধ পাঠান আগা সাহেব বাংলাদেশের লােক, সাহেব পূর্ববঙ্গের পটুয়াখালি অঞ্চলে ব্যাবসা করেন। সেখানে শীতবস্ত্র আর হিং বিক্রি করেন আর চাষিদের টাকা ধার দেন। তিনি বরিশালের ভাষা তাঁর মাতৃভাষার মতােই বলতে পারেন। কিন্তু কলকাতার ভাষা তাঁর আয়ত্ত হয়নি।
৮.৫ লেখকের সামনের বেঞ্চির দুই পাঠান সহযাত্রী নিজেদের মধ্যে যে আলােচনা করছিলেন তা নিজের ভাষায় লেখাে। লেখক কীভাবে সেই কথার অর্থ বুঝতে পারলেন ?
উত্তর - লেখকের সামনের বেঞ্চিতে বসা দুই পাঠান সহযাত্রী নিজেদের মধ্যে তাঁর সম্পর্কে পশতু ভাষায় আলােচনা করছিলেন। তাঁদের বক্তব্যের বিষয় ছিল, লেখকের পাণ্ডিত্য ও জ্ঞান। তাঁরা বলছিলেন, এই বাবু তাদের অনেক খবর জানে। আর শুধু তাই নয়, ইংরেজের লেখা সব বই পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইনি ফারসিও পড়েন। লােকটি ভারি বিদ্বান ও বুদ্ধিমান।
লেখক উর্দু জানতেন। সেই সঙ্গে এটাও তাঁর জানা ছিল যে, পশতু ভাষায় প্রচুর ফারসি ও আরবি শব্দ আছে। উর্দু জানা থাকলে পশতু, তা সে দেহাতি পশতু হলেও বােঝা যায়। কিছু শব্দ জেনে ও বাকিটা বুদ্ধি দিয়ে পাঠান সহযাত্রীর কথার অর্থ লেখক বুঝতে পেরেছিলেন।
৯. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখাে :
৯.১ পাঠ্য গদ্যটির ভাবের সঙ্গে ‘পথচতি’-নামটি কতখানি সংগতিপূর্ণ হয়েছে, বিচার করা।
উত্তর - নামকরণ বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন- ১. বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক নামকরণ, ২. চরিত্রকেন্দ্রিক নামকরণ, ৩. সাংকেতিক বা ব্যঞ্জনধর্মী নামকরণ।
আলােচ্য গল্পটির নামকরণ করা হয়েছে বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে। পথে বহু মানুষের সঙ্গে আমাদের আলাপ হয়। পারস্পরিক সৌহার্দে সেই আলাপ বেশ কিছুটা আন্তরিক হয়ে ওঠে, খুঁজে পাওয়া যায় মনের রসদ। লেখক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় দেহরাদুন এক্সপ্রেসে চড়ে কলকাতা ফেরার সময় ভিড়ের কারণে ট্রেনের মধ্যম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্থান পাননি। তিনি লক্ষ করেন, তৃতীয় শ্রেণির একটি কামরা কিছু কাবুলিওয়ালা দখল করে রেখেছে। লেখক ফরাসি ভাষা জানার সুবাদে ওই কাবুলিওয়ালাদের সঙ্গে অনায়াসেই বার্তালাপ করতে পারেন এবং এর ফলে তিনি কামরায় অনায়াসে জায়গা করে নেন। তাঁদের সঙ্গে কলকাতায় ফেরার অভিজ্ঞতাই আলােচ্য গল্পটির কেন্দ্রীয় বিষয়। সমগ্র গল্পটাই পথের অভিজ্ঞতাতে পরিপূর্ণ তাই চলার পথের অভিজ্ঞতাই যেহেতু এই গল্পের মূল বিষয়, সেজন্য তাকে কেন্দ্র করে নামকরণটি করা হয়েছে। সুতরাং, বিষয়বস্তুর বিচারে ‘পথচলতি’ নামটি সর্বাঙ্গে সার্থক ও সুন্দর হয়ে উঠেছে।
৯.২ পাঠ্য গদ্যাংশটি থেকে কথকের চরিত্রের কোন বৈশিষ্ট্যগুলি তােমার চোখে ধরা পড়েছে বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে লেখাে।
উত্তর - ‘পথচতি’ রচনাটি লেখকের একটি চলার পথের অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতাটির মাধ্যমে লেখকের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্যের পরিচয় আমরা পাই। সমগ্র রচনাটি যেহেতু আত্মকথনের ভঙ্গিতে লেখা, সেহেতু কথক চরিত্র বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে আমরা লেখক চরিত্রও বিশ্লেষণ করব। পথচলতি’ পাঠ্যাংশে আমরা লক্ষ করি, কথক তথা লেখক সাহসী, বিচক্ষণ, ভাষাবিদ, আলাপী, সংগীত রসিক, বিদ্বান, সাহিত্যপ্রেমী ইত্যাদি গুণের অধিকারী। যে কামরায় রেলের কর্মচারী বা পুলিশ পর্যন্ত যেতে পারেনি, যেখানে সাহস করে কেউ ঢােকেনি, সেখানে তিনি অবলীলায়, নির্দ্বিধায় ঢুকতে সচেষ্ট হন। ভাষাবিদ বলেই তিনি জানেন, আফগানিস্তানের লােকেরা ফারসি জানবে। তারপর ফারসি বলার পর যখন এঁরা সে ভাষাও বুঝল না, তখন বিচক্ষণতার গুণে তিনি উপলব্ধি করলেন, এরা ওখানকারই কোনাে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। যে কারণে ফারসি আভিজাত্যের লক্ষণ এদের মধ্যে নেই। বিচক্ষণ বলেই লেখক ব্যাপারটি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। লেখক সংগীত রসিক বলেই তাঁদের কাছে ঔরঙ্গজেবের সমকালীন মানুষ খুশ-হাল খাঁ খট্টক-এর গজল শােনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাঁর মাধ্যমেই জানা যায়, তিনি পশতু ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি। তারপর আদম খান ও দুরখানির কিত্সার প্রসঙ্গ আসে। এভাবে গান ও সাহিত্যের সমন্বয়ে গাড়িতে যেন একটি পশতু-সাহিত্য-গােষ্ঠী বা সম্মেলন শুরু হল। এভাবে আমরা লেখকের নানান বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবহিত হতে পারি। সেইসঙ্গে উপলদ্ধি করা যায়, লেখক বাস্তববােধসম্পন্ন। কারণ, তিনি জানেন গাড়ির এই সঙ্গসুখ লাভ কেবল ওই একটি মাত্র রাত্রির জন্যই। পরে কখনও তাদের মধ্যে আবার সাক্ষাৎ নাও হতে পারে। তাই লেখক সমগ্র অভিজ্ঞতাটি সহজ, সরল, কৌতুহলােদ্দীপক ভাষায় নাটকীয় ভঙ্গিতে অগণিত পাঠকদের জন্য রচনা করে গিয়েছেন। অবশ্য এই রচনায় লেখকের অন্যান্য গুণের সঙ্গে তিনি যে একজন সার্থক রসগ্রাহী গদ্যকার, সেই সত্তাটিও প্রকাশিত হয়েছে।
৯.৩ কথকের সঙ্গে কাবুলিওয়ালাদের প্রারম্ভিক কথােপকথনটি সংক্ষেপে বিবৃত করাে।
উত্তর - ‘পথচলতি’ গদ্যাংশে লেখক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় দেহরাদুন এক্সপ্রেসে গয়া থেকে কলকাতা ফেরার কাহিনি বর্ণনা করেছেন। ভিড় কামরায় ওঠা অসম্ভব বিবেচনা করে লেখক, কাবুলিওয়ালাদের সম্পূর্ণ দখলে থাকা ভিড়হীন কামরার হাতল ধরলেন। ভিতর থেকে পাঁচ-ছয়জন হুংকার দিয়ে বলল—সে কোথায় আসছে। এই গাড়ি কেবলমাত্র পাঠানদের জন্য। তােমার জন্য নয়। লেখক ফারসিতে বললেন— খালি একজন লােকের জায়গা দাও। ফারসি বুঝতে না-পেরে হতভম্ব হয়ে একজন জানতে চাইল সে কী চাইছে, তিনি আবার ফারসিতে বললেন—তারা কি ফারসি জানে ? ফারসি বলতে পারে না? ওদের মধ্যে ফারসি জানা কেউ না-থাকায় লেখক তখন গলা চড়িয়ে তাচ্ছিল্যভরে বললেন যে, তারা আফগানিস্তানের কোন এলাকা থেকে আসছে যে, ফারসিতে কথা বলার ক্ষমতা তাদের নেই। তারা নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে নেওয়ার পর একজন বলল, সে ফারসি জানে। তখন লেখক তাদেরকে গাড়িতে জায়গা দেওয়ার অনুরােধ করলেন। তখন সেই ছােকরা ছেলেটি জানতে চাইল, তিনি কোথায় যাবেন। জবাবে তিনি বললেন, কলকাতায় যাবেন। তারপর সে ইশারায় লেখককে ভিতরে আসতে বললেন। লেখক ভিতরে ঢুকলেন এবং তাঁকে জ্ঞানী ব্যক্তি মনে করে, যথেষ্ট সমীহ দেখিয়ে তারা একটি পুরাে বেঞ খালি করে দিল। ইতিমধ্যে গাড়ি ছেড়ে দিল।
৯.৪ কথক কেন বলেছেন যেন এক পশতু-সাহিত্য গােষ্ঠী বা সম্মেলন লাগিয়ে দিলুম। সেই সাহিত্য সম্মেলনের বর্ণনা দাও।
উত্তর - ‘পথচলতি’ গদ্যাংশে লেখক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় দেহরাদুন এক্সপ্রেসে গয়া থেকে কলকাতা ফেরার কাহিনি বর্ণনা করেছেন। আসলে অনেক সময় চলতি পথে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে পারস্পরিক আলাপ আলােচনার মাধ্যমে অকৃত্রিম আন্তরিকতা যেমন ফুটে ওঠে, তেমনই মনের রসদ, সাহিত্যের রসের স্বাদ মেলে। তেমনই গল্পে দেখা গিয়েছে, দেহরাদুন এক্সপ্রেসের পশতু-সাহিত্য-গােষ্ঠী বা সম্মেলন শুরু হয় খুশ-হাল খাঁ খট্টকের গজল বিষয়ে প্রশ্নের মাধ্যমে। ঔরঙ্গজেবের সমকালীন এই কবি পশতু ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি। লেখকের আগ্রহে জনৈক যাত্রী গজল শােনালেন। এরপর হল, আদম খান আর দুরখানির মহব্বতের কিসার কথা। আর শুধু লেখককেই বা কেন—গাড়ির সমস্ত যাত্রীরা অবধারিতভাবে মন দিয়ে সেই কাহিনি শুনল। পাঠানের গলা যদিও কর্কশ, তবে সে গুরুগম্ভীরভাবে কাহিনিটি কিছুটা গান করে আবার কিছুটা পাঠ করে সবাইকে মােহিত করে রাখল। এভাবে সেই তৃতীয় শ্রেণির গাড়িতে গানে, আবৃত্তিতে ও পাঠে যেন এক পশতু-সাহিত্য-গােষ্ঠী বা সম্মেলন হল।
৯.৫। পথচতি’ রচনায় ভাষা ও সংস্কৃতির বিভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও যে সহজ বন্ধুত্ব ও উদার সমানুভূতির ছবিটি পাওয়া যায় তার স্বরূপ বিশ্লেষণ করাে। বর্তমান সময়ে এই বন্ধুত্ব ও সমানুভূতির প্রাসঙ্গিকতা বুঝিয়ে দাও।
উত্তর - ভারতবর্ষ বহু ভাষা ও সংস্কৃতির দেশ। কিন্তু এই ভিন্নতা মানববন্ধনের প্রতিবন্ধকতা নয়। আলােচ্য কাহিনিতে আমরা সেই প্রতিবন্ধকতাহীন বন্ধুত্ব ও উদারতার পরিচয় পাই। কাহিনির সূচনা আপাত বিরােধিতা দিয়ে হলেও, তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। পারস্পরিক আচরণ ও একে অন্যকে নিজের মনােভাব বােঝানাের মধ্য দিয়ে সবাই একাত্ম হয়েছে। দুর্ধর্ষ পাঠানরা লেখককে ‘মস্ত আলেম’ অর্থাৎ, বিদ্বান ও বুদ্ধিমান ভেবে সমীহ করেছে। তারপর সবাই পরস্পরের বিষয়ে জ্ঞাত হয়েছে। সারারাত ধরে একসঙ্গে ঘুমিয়েছে। আবার সকাল হলে পটুয়াখালির বৃদ্ধ আগা-সাহেব স্বাভাবিক ভদ্রতা প্রণােদিত হয়ে লেখককে জিজ্ঞাসা করেছে তার ঘুম হয়েছিল কি না। অর্থাৎ, সবাই ভদ্রতা দেখিয়েছে। এভাবেই পথচতি’ রচনায় আমরা ভাষা ও সংস্কৃতির বিভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও মানুষের মধ্যেকার বন্ধুত্ব ও উদার সহানুভূতির পরিচয় পাই।
বর্তমান সময়ে এই বন্ধুত্ব ও সহানুভূতি একান্ত আবশ্যক। কারণ, বর্তমানে আমাদের দেশে বিচ্ছিন্নতাবাদ বেশি করে মাথা চাড়া দিয়েছে। ভাষাকেন্দ্রিক স্বাতন্ত্রের দাবি উঠেছে। ধর্ম ও সংস্কৃতির ভিন্নতা মানুষকে মানবিক বােধে উদ্বুদ্ধ করছে না—বরং সংকীর্ণতাকে উগ্র করে তুলছে। এই সংকীর্ণতা ও বিচ্ছিন্নতা থেকে মানুষকে মুক্ত করতে পারে কেবল উদারতা, বন্ধুত্ব ও সহানুভূতি। তাহলেই, সমাজে ও দেশে শান্তি ও প্রতিভাব বজায় রাখা সম্ভব হবে। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বিচ্ছিন্নতাবাদী অশুভ শক্তির অমানবিক চেষ্টা মানুষের উদারতা, বন্ধুত্ব ও সহানুভূতির জাগরণে পিছু হটতে বাধ্য হবে।
৯.৬ রেলভ্রমণের সময় অচেনা মানুষের সঙ্গে তােমার বন্ধুত্বের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি রম্যরচনা লেখাে। তােমার লেখাটির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ছবি আঁকো।
উত্তর - এবছরের পুজোর ছুটিতে বাবার সঙ্গে মালদা যাচ্ছি। কোনাে জরুরি কাজে নয়—এমনিই একটু ঘুরে আসা। টিকিট কেটে নিজেদের রিজার্ভ করা সিটে বসে আছি। হঠাৎ কোথা থেকে দুজন লােক কামরায় উঠে এদিক ওদিক ঘােরা ফেরা করতে লাগল। সবাই হতচকিয়ে গেলাম। অবশেষে তারা নিশ্চিন্তে কামরার বাথরুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। গায়ের পােশাকে কোনাে সাহেবিয়ানা নেই। ব্যাপারটি বােঝা গেল না। সাজগােজ সাধারণ, তবে চোখ দুটি সদাসতর্ক। একটু পরে ট্রেন ছাড়ল। তারা ভিতরে এল—মুখে রবীন্দ্রনাথের কবিতা। বীরপুরুষ’ বলছে। নিজের ইচ্ছামতাে শব্দ জুড়ে ছন্দ রাখছে বােঝা গেল। একস্থানে এমন ভুল করল—আমিই মুখে উচ্চারণ করে ফেললাম। তারা শুনে আমার দিকে কটমটিয়ে তাকাল। আমি তাে ভয় পেয়ে গেলাম। একজন চলে এল আমার কাছে। আমি বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম কাছে এসে বলল—আমি জানি, তুমি আবৃত্তি করাে। সুন্দর গলা তােমার। তােমার থেকে শুধরে নিতে ইচ্ছে করছিল বলেই না ভুল বলে যাচ্ছিলাম । আচ্ছা তুমি অন্য একটা কবিতা শােনাও না? আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘লুকোচুরি’ শােনালাম। তারপর আরও তিন-চারটি আবৃত্তি করলাম। অন্য লােকটিও কাছে এসে দাঁড়াল। আরও যাত্রীরাও শুনল। সবাই তখন আমার দিকে তাকিয়ে।
<< Read More >>
Class 8 All Subject Solution >>