পরবাসী (Parabasi) অনুশীলনী প্রশ্ন উত্তর | Class 8 | WBBSE

পরবাসী (Parabasi) অনুশীলনী প্রশ্ন উত্তর | Class 8 | WBBSE


পরবাসী


নামকরণ

সাহিত্যে নামকরণ এমন একটি বিষয়, যার মধ্য দিয়ে সাহিত্যিকের অভিপ্রায় চরিতার্থ করার চেষ্টা করা যায় আর সেটি যদি হয় কবিতার নামকরণ, তবে তা বিশেষ ইঙ্গিতবাহী হয়ে ওঠে কবি আলােচ্য কবিতাটির নামকরণপরবাসীরেখেছেন সম্ভবত কয়েকটি ঘটনার দিকে লক্ষ রেখে প্রথমত, একদা আমাদের দেশে ছিল নিবিড় বনজঙ্গল সেই জঙ্গলে বিভিন্ন প্রাণী আনন্দে নিশ্চিন্তে দিন কাটাত কিন্তু মানুষ নিজেদের প্রয়ােজনে সেই বনের গাছ কেটে বনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে ফলে অসহায় হয়ে পড়ছে বন্যপ্রাণীরা বন্যপ্রাণীদের ধরে ধরে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে ফলে তারা পরবাসী হয়ে পড়ছে দ্বিতীয়ত, গাছের সঙ্গে মানুষের যে-একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে তাতেও টান পড়েছে সেই সবুজ, সেই আম-কাঁঠালে পরিবেষ্টিত শান্তির নীড় যেন আর চোখে পড়ে না তা ছাড়া এদেশের বেশিরভাগ মানুষ নাগরিক সভ্যতার তাড়নায় নিজের অতীত ঐতিহ্য বিসর্জন দিয়ে চিরপরিচিত বাসস্থান ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বিশ্বের হতদরিদ্র মানুষ আজও স্থায়ী আবাসভূমি তৈরি করতে পারেনি কবি সেইসব মানুষের সমব্যথী তাই কবির মনে হয়েছে, স্বদেশে বসবাস করেও তিনি পরবাসীপরবাসীনামকরণের মধ্যে এই চিন্তাগুলি কাজ করেছে বলে মনে হয় তাইপরবাসীনামকরণটি সার্থক হয়েছে

 

. কবি বিষ্ণু দে- প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী ?

উত্তর - কবি বিষ্ণু দে- প্রথম কাব্যগ্রন্থের নামউর্বশী আর্টেমিস

 

. তাঁর লেখা দুটি প্রবন্ধের বইয়ের নাম লেখাে

উত্তর - তাঁর লেখা দুটি প্রবন্ধের বইয়ের নাম—“রুচি প্রগতি এবংসাহিত্যের ভবিষ্যৎ

 

২. নিম্নরেখ শব্দগুলির বদলে অন্য শব্দ বসিয়ে অর্থপূর্ণ বাক্য তৈরি করাে

(প্রথমটি করে দেওয়া হল) :

 

. দুই দিকে বন, মাঝে ঝিকিমিকি পথ

উত্তর - দুই দিকে বন, মাঝে আলােছায়া পথ

 

. এঁকে বেঁকে চলে প্রকৃতির তালে তালে

উত্তর -  এঁকে বেঁকে চলে প্রকৃতির আপন খেয়ালে

 

. তাঁবুর ছায়ায় নদীর সােনালি সেতারে

উত্তর - তাঁবুর ছায়ায় নদীর গতির ছন্দে

 

. হঠাৎ পুলকে বনময়ূরের কথক

উত্তর - হঠাৎ পুলকে বনময়ূরের নৃত্যভঙ্গি

 

. বন্য প্রাণের কথাকলি বেগ জাগিয়ে

উত্তর -  বন্য প্রাণের প্রলুদ্ধ বেগ জাগিয়ে

 

৩. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও :


. পথ কীসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে ?

উত্তর -  পথ প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে

 

. চিতার চলে যাওয়ার ছন্দটি কেমন ?

উত্তর -  চিতার চলে যাওয়ার ছন্দটি লুদ্ধ হিংস্র

 

. ময়ূর কীভাবে মারা গেছে ?

উত্তর - ব্যবসায়িক নগর পত্তনের কারণে বনজঙ্গল কেটে পরিষ্কার করার ফলে এবং চোরা শিকার হওয়ার কারণেই ময়ূর মারা গেছে

 

. প্রান্তরে কার হাহাকার শােনা যাচ্ছে ?

উত্তর -  প্রান্তরে শুকনাে হাওয়ার হাহাকার শােনা যাচ্ছে

 

. পলাশের ঝােপে কবি কী দেখেছেন ?

উত্তর - কবি পলাশের ঝােপে হঠাৎ পুলকে উল্লসিত ময়ূরের কত্থক নাচ দেখেছেন

 

৪. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর কয়েকটি বাক্যে লেখাে :

 

. জঙ্গলের কোন্ কোন্ প্রাণীর কথা কবি এই কবিতায় বলেছেন?

উত্তর -পরবাসীকবিতায় কবি আমাদের দেশের নানান প্রাণীর উল্লেখ করছেন প্রাণীদের মধ্যে প্রথমেই আছে ছােটো খরগােশের কথা ছাড়াও আছে বনময়ূর, হরিণ চিতার কথা

 

. সেতারের বিশেষণ হিসেবে কবিসােনালিশব্দের ব্যবহার করেছেন কেন ?

উত্তর -  সেতারহলতিন  তারের সুরেলা বাদ্যযন্ত্র দীর্ঘ তারে যন্ত্রটি বাঁধা, যা নদীর স্রোতের বহমানতার প্রতি ইঙ্গিত করে আবার সেতার যে ধ্বনি তােলে, তাও নদীর কলধ্বনির সঙ্গে তুল্য সােনালি আলােক যেমন মনের অবসাদ দূর করে সুন্দরভাবে ব্যক্তিকে শান্ত প্রশমিত করে, তেমনই সেতারের সুরও তাকে মােহিত-বিমুগ্ধ করে রাখে একারণেই সেতারের বিশেষণে কবিসােনালিশব্দের ব্যবহার করেছেন


. কথক কথাকলি- কথা কবিতার মধ্যে কোন্ প্রসঙ্গে এসেছে ?

উত্তর -পরবাসীকবিতায় কখক কথাকলির প্রসঙ্গ আলাদা আলাদা প্রাণীর প্রসঙ্গে এসেছে ময়ূরের হঠাৎ পুলক জাগার কারণে কথকের মতাে নৃত্যশৈলীর কথা এসেছে আর কথাকলি প্রসঙ্গ এসেছে চিতার লুদ্ধ হিংস্র ছন্দ বােঝাতে একদিকে মনের সহজ- স্বাভাবিক আনন্দের প্রকাশ আর অন্যদিকে দুরন্ত গতিধর্মের আবেগ বর্ণনা প্রসঙ্গে কথাকলির কথা এসেছে

 

8.8 ‘ সিমুনির হরিণ-আহ্বানকবি কীভাবে শুনেছেন ?

উত্তর - পরবাসী কবি-মন বন-জঙ্গল, প্রান্তর, টিলাসর্বত্রই ছুটে চলেছে চলার আবেগে কবি নদীর কলনাদ শুনতে নদীর পাড়েও গিয়েছেন জঙ্গলাকীর্ণ, নদীর কাছে গিয়ে কবি চিতার দুর্বার আবেগে লুদ্ধ হিংস্র ছন্দ লক্ষ করেছেন আর সেখানেই বন্যপ্রাণীর প্রাণের বেগে কথাকলির নৃত্যের তালে সিধুমুনির আহ্বান শুনেছেন

 

.ময়ূর মরেছে পণ্যে’ —এই কথার অন্তর্নিহিত অর্থ কী ?

উত্তর - ময়ূর হল সৌন্দর্যের আধার সে কলাপ বা পেখম মেলে যখন নৃত্য করে, তখন তা সবাইকে আকৃষ্ট করে আবার এই ময়ূরকে বেসাতি করে লােভী মানুষ তাদের ধন-ঐশ্বর্য-সম্পদ বাড়িয়ে চলে আজ বনজঙ্গল সাফ করে মানুষ নগর পত্তন করেছে ময়ূর মেরে তার পালক দিয়ে ঘর সাজিয়েছে বিক্রি করতেও দ্বিধাবােধ করেনি ময়ূরের মাংসও মানুষ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করছে অর্থাৎ, ময়ূর আজ মানুষের ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত হওয়ায় তার বিলুপ্তিও ঘটছে একারণে কবি ময়ূরের অবলুপ্তি প্রসঙ্গে কথাটি বলেছেন

 

৫. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখাে :


. বিরামচিহ্ন ব্যবহারের দিক থেকে কবিতাটির শেষ স্তবকের বিশিষ্টতা কোথায় ? এর থেকে কবিমানসিকতার কী পরিচয় পাওয়া যায় ?

উত্তর -  বিষ্ণু দে-পরবাসীকবিতাটির শেষ স্তবকের চারটি বাক্যে কবি চারটি জিজ্ঞাসা চিহ্ন ব্যবহার করেছেন, যা কবিতাটিকে বিশেষ মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে

 

বিরামচিহ্নের ব্যবহার ভাষার একক বাক্যের স্বরূপকে নির্দেশ করে আবার এর মাধ্যমে কবি কাব্যালংকার, বিশেষ করে, শ্লেষ অলংকারের প্রয়ােগ করেনপরবাসীকবিতার শেষ স্তবকে সেই কাব্যালংকারের বিশিষ্ট প্রয়ােগ লক্ষ করা যায় কবি যেন তির্যক, তীক্ষ্ণ প্রশ্নের কশাঘাতে মানুষের, বিশেষত ব্যাবসাজীবী, মানুষের বিবেককে জাগিয়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছেন সভ্যতার আগ্রাসনে পৃথিবীর নদী, পাহাড়, গাছ লুপ্ত হচ্ছে বনবাসী প্রাণীরা হারিয়ে যেতে বসেছে নিজের দেশেই মানুষ উদ্বাস্তুর মতাে ঘুরে বেড়াতে বাধ্য হয়েছে তারা স্থায়ী স্বাভাবিক, চিরপ্রত্যাশিত নিজস্ব বাসস্থান গড়ে তুলতে পারে না কবি এখানেই প্রকৃতির স্বাভাবিকতাকে পেতে আগ্রহী শেষ স্তবকে কবির একাধিক প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে আমরা তাঁর বন্যপ্রাণ, বণ্যপ্রাণী তথা প্রকৃতি প্রেমের পরিচয় পাই

 

. কবি নিজেকে পরবাসী বলেছেন কেন ?

উত্তর - প্রকৃতি মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে দিয়েই সভ্যতা টিকে আছে কিন্তু পরবাসীকবিতায় কবি সৌন্দর্যময় বিশ্বপ্রকৃতির শ্বাশ্বত রূপের সঙ্গে স্বার্থপর মানুষের নির্লজ্জ অমানবিকতার ছবি তুলে ধরেছেন এই বৈপরীত্য, এক অর্থে বিপর্যয় প্রথম স্তবকে কবি দেখেছেন, প্রকৃতির স্বচ্ছন্দ্য বৈচিত্র্য বাঁকা পথ, দুধারে বন, কচিকচি খরগােশ, পলাশের ঝােপ, উৎফুলিত বনময়ূরের কথক ভঙ্গি, নদীর জল, চুপিসারে হরিণের জল খাওয়া, কিংবা হিংস্রছন্দে বন্য চিতার যাতায়াত সব কিছুই যেন প্রকৃতির ক্যানভাসে এক একটি জীবন্ত ছবি এটাই তাে কবির প্রিয় দেশ কিন্তু চতুর্থ স্তবক থেকে কবির কণ্ঠে শােনা গিয়েছে, আশাহীণতার বাণী গ্রামের অপমৃত্যু, ময়ূরের পণ্যে পরিণত হওয়া, হাওয়াও যেন হাহাকার রবে বয়ে যায় কবির কাছে তাঁর প্রিয় দেশের এই পরিণতি সহ্য করা ছিল অসহ্য আবেগহীন, ভালােবাসাহীন এই দেশকে কবি নিজের দেশ বলে আর ভাবতে পারছিলেন আর এই মানসিক তথা সামাজিক বিপর্যয়গ্রস্ত সমাজে কবি সৌন্দর্যময় বিশ্ব প্রকৃতির চিরকালীন রূপের সন্ধান পান না বলেই নিজভূমে নিজেকেপরবাসী বলেছেন

 

.জঙ্গল সাফ, গ্রাম মরে গেছে, শহরের/পত্তন নেই...”-প্রকৃতি মানুষের সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে এই পঙক্তিটির প্রাসঙ্গিকতা বিচার করাে

উত্তর - আলােচ্য উদ্ধৃতাংশটি বিষ্ণু দে- লেখাপরবাসী কবিতার থেকে গৃহীত হয়েছে

প্রকৃতি মানুষ একে অপরের অভিন্ন অংশ পারস্পরিক সহচার্যে তারা প্রকৃতিকে সুন্দর করে তুলেছে কিন্তু কবি বিষ্ণু দে প্রতিদিন প্রকৃতিকে একটু একটু করে ধ্বংস হতে দেখছেন মানুষের অতিরিক্ত লােভই এর জন্য দায়ী অরণ্য ধ্বংস হয়েছে গ্রাম নষ্ট করে নগর তৈরি হলেও আদর্শ শহর গড়ে ওঠেনি, যেখানে সকলের স্থান হয় পৃথিবীর আবহাওয়া ক্রমাগত বিষাক্ত হয়ে উঠছে সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে মানুষ বন্যপ্রাণীদের পণ্যে পরিণত করেছে সভ্যতার আগ্রাসনে নদী, পাহাড়, গাছ লুপ্ত হয়ে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, যা কবির হৃদয়কে ক্ষুদ্ধ করে তুলেছে এইভাবে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক বােঝাতে কবি আলােচ্য পঙক্তিটির অবতারণা করেছেন এই পঙক্তিটির উপজীব্যই হলপ্রকৃতিও মানুষ একে অপরের পরিপূরক

 

.পরবাসীকবিতার প্রথম তিনটি স্তবক শেষ দুটি স্তবকের মধ্যে বক্তব্য বিষয়ের কোনাে পার্থক্য থাকলে তা নিজের ভাষায় লেখাে 

উত্তর -পরবাসীকবিতার প্রথম তিনটি স্তবক শেষ দুটি স্তবকের মধ্যে বক্তব্য বিষয়ের পার্থক্য রয়েছে প্রথম দিকের তিনটি স্তবকে কবি সৌন্দর্যময় বিশ্বপ্রকৃতির শাশ্বত অবস্থানকে ফুটিয়ে তুলেছেন এখানে বন্য প্রাণীরা নিজেদের সহজ-স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেঁচে থাকে সেখানে কোনােরকম বিরূপতা দেখা যায় না কিন্তু শেষ দুই স্তবকে কবি কিছু লােভী মানুষের ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থকে স্পষ্ট করেছেন চতুর্থ স্তবকে কবি বলেছেন—“জঙ্গল সাফ, গ্রাম মরে গেছে, শহরের/ পত্তন নেই, ময়ূর মরেছে পণ্যেঅর্থাৎ প্রকৃতি, সভ্যতা, সংস্কৃতি, সৌন্দর্যবােধসবই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে তবুও মানুষ সমস্ত কিছু মুখ বুজে সহ্য করে, জীবনের আনন্দ, সৌন্দর্যকে অগ্রাহ্য করে নিজভূমে পরবাসীতে পরিণত হচ্ছে অর্থাৎ, বর্তমান সভ্যতা সংস্কৃতির যে জীবনধারা অভিরুচি, তা আমাদের চিরাচরিত সংস্কৃতি ঐতিহ্য বিরােধী বলেই তা আমাদেরকে নিজের দেশে পরবাসী করে রেখেছে আর আমরাও আমাদের চিন্তা-চেতনা-বিবেক-বােধবুদ্ধিকে বিসর্জন দিয়ে সভ্যতার অন্ধ অনুসরণ করে চলেছি


.পরবাসীকবিতাতে কবির ভাবনা কেমন করে এগিয়েছে তা কবিতার গঠন আলােচনা করে বােঝাও

উত্তর -পরবাসীকবিতায় কবি কোনাে স্থানিক পরবাসের কথা বলেননি এই পরবাস সম্পূর্ণরূপে মানসিক চিন্তা-চেতনা-বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে ব্যক্তি-সমাজ-জাতি কীভাবে নিজভূমে পরবাসী হয়ে উঠেছে, সেই বিষয়টিকেই কবি বিষ্ণু দেপরবাসীকবিতায় প্রকাশ করেছেন

পরবাসীকবিতার গঠনের দিকে লক্ষ করলে আমরা দেখতে পাই, কবিতাটি পাঁচটি স্তবক নিয়ে গঠিত এবং প্রতি স্তবক চার পঙক্তিবিশিষ্ট কবিতাটির পাঁচটি স্তবকের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন বর্তমান প্রথম তিনটি স্তবকে লক্ষ করা যায়, সৌন্দর্যময় বিশ্বপ্রকৃতির শাশ্বত অবস্থা আর শেষের দুটি স্তবকে ফুটে ওঠে ধ্বংস বিপর্যয়ের চিত্র এই ধ্বংস বা বিপর্যয় যতখানি প্রাকৃতিক, ঠিক ততখানিক মানসিক এবং সাংস্কৃতিক তাই কবিতায় ব্যবহৃত স্তবকেরপাঁচ সংখ্যাটিও যেন আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের নিষ্ক্রিয়তা তথা বিপর্যয়কেই ব্যঞ্জিত করে তােলে সমগ্র কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত মাত্রাবৃত্ত ছন্দের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলএর লয় মধ্যম মধ্যম লয়ের এই ভাবটিই যেন ব্যক্তি-সমাজ-জাতির মাধ্যমে শ্রেণিসত্তা বা মানসিকতাকে ইঙ্গিতপূর্ণ করে তােলে তাই পঞম স্তবক জুড়ে শুধুই প্রশ্নবাণ ধেয়ে আসে শ্লেষের ধাঁচে—“কেন এই দেশে মানুষ মৌন অসহায় ? কেন নদী গাছ পাহাড় এমন গৌণ ?/সারাদেশময় তাঁবু বয়ে কত ঘুরব ?/পরবাসী কবে নিজ বাসভূমি গড়বে?”

 

আবার তৃতীয় স্তবকে দেখি, পৌরাণিক প্রসঙ্গের ব্যবহার—“শুনেছি সিন্ধুমুনির হরিণ আহ্বানকিন্তু পরের পঙক্তিতেই সেই সৌন্দর্য বদলে যায়চিতা চলে গেল লুদ্ধ হিংস্র ছন্দে”—এই চিত্রকল্প যেন হিংস্র নাগরিক মানসিকতাকেই তুলে ধরে অর্থাৎ, কবি এই বিপর্যস্ত, ধ্বংসপ্রাপ্ত সমাজে সৌন্দর্যময় বিশ্বপ্রকৃতির শাশ্বত রূপ উপলদ্ধি করতে পারেন না বলেই নিজভূমে নিজেকেপরবাসী বলেছেন, যে ভাবনা কবিতাটির গঠনের মধ্যে দিয়ে সার্থকভাবে প্রকাশিত হয়েছে

 

. কবিতাটির নামপরবাসীদেওয়ার ক্ষেত্রে কবির কী কী চিন্তা কাজ করেছে বলে তােমার মনে হয় ? তুমি কবিতাটির বিকল্প নাম দাও এবং সে- নামকরণের সপক্ষে তােমার যুক্তি সাজাও

উত্তর -  কবিতাটির নামপরবাসীদেওয়ার ক্ষেত্রে কবি দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা ভেবেছেন এই সৌন্দর্য কেবলমাত্র আকাশ, নদী, পাহাড়, বন, মাঠ নিয়ে নয়জীবজন্তু নিয়েও একই সঙ্গে ব্যক্তি মানুষের ভিতরকার ধ্বংসাত্মক, লােভী, পীড়নকারী মানসিকতার কথাও আছে দেশের সাধারণ মানুষ, যারা গ্রামাঞ্চলে বাস করে, তারা এই সহজ নৃত্যছন্দময় খরগােশ কিংবা বন-ময়ূরের মতাে

অন্যদিকে নাগরিক শহুরে জীবনে অভ্যস্ত ব্যবসায়ী মানুষ গ্রাম-বন-জঙ্গল সাফ করে যে-নগর গড়ে তােলে, সেখানে আদি মানুষগুলি স্থান পায় না তারা আবার নতুন গ্রাম গড়ে তােলে লােভীরা আবার সেখানে থাবা বসায় এভাবে মানুষগুলি চিরকাল নিজদেশে পরবাসী হয়েই থেকে যায় কবি দেশের এই বনভূমি, বন্যপ্রাণী গ্রাম্য পরিবেশ ধ্বংস করা তার পরিবর্তে নগর সভ্যতা গড়ে তােলার কারণে সাধারণ মানুষের বারবার গৃহহীন হওয়ার কথাই চিন্তা করেছেন বলে আমার মনে হয়

আমি কবিতাটির বিকল্প নাম হিসেবেঅনধিকারশিরােনামটি দিতে পারি কবিতার মূল বিষয় হলবন্যপ্রাণীরা বনের অধিকার পাচ্ছে না মানুষের লােভী ইচ্ছা সেখানে থাবা বসাচ্ছে মানুষেরই ঘৃণ্য চক্রান্তে, চরম নিষ্ঠুরতায় গাছপালা হারিয়ে যাচ্ছে কিছু মানুষের সর্বগ্রাসী থাবায় গ্রাম গ্রামের মানুষজন আর পাঁচটা জিনিসের মতাে পণ্য হিসেবে বিক্রি হচ্ছে দেশের সিংহভাগ মানুষই তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত দেশের কোনাে সম্পদের ওপরই তাদের যেন কোনাে অধিকার নেই এই কারণে আমিঅনধিকারনামটিকেও কবিতার উপযুক্ত বলে মনে করি

 

৬. টীকা লেখাে :

 কথক, সেতার, কথাকলি, সিন্ধুমুনি, পণ্য

 

উত্তর - থক: কথক একটি বিশেষ ধরনের শাস্ত্রীয় নৃত্য পদ্ধতি এই নৃত্যে উত্তর ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীত অনুসৃত হয় এই নৃত্যের জন্য প্রসঙ্গে বলা যায়, কথকতা বৃত্তির সঙ্গে বৈষুব ভক্তিবাদ এবং পরে পারসি নর্তকী সম্প্রদায়ের রীতিনীতি যুক্ত হয়েকথক’-এই শাস্ত্রীয় রূপ নিয়েছে কথক নৃত্যে মুদ্রার ব্যবহার কম শৃঙ্গারপ্রধান এই নৃত্য প্রধানত জয়পুর, লখনউ, বেনারস ঘরানার নৃত্য কৌশল

সেতার : তিন টি তারযুক্ত বাদ্যযন্ত্র-বিশেষ সেতার যন্ত্রটির গােড়ার দিক গােলাকৃতি ফাঁপা একে তুম্বা বলে এর আরও কয়েকটি অঙ্গ আছে সেতারের অঙ্গগুলির নামদণ্ড, পটরি, গুল, তবলি, ব্রিজ, ঘােরী, খুঁটি, পর্দা ইত্যাদি সেতারের কিছু নিজস্ব পরিভাষা আছে সেগুলি হলপ্রহার, ঠাট, গিটকরী, খটকা ইত্যাদি ভারতবর্ষের কয়েকজন বিখ্যাত সেতারবাদক হলেনওস্তাদ বিলায়েৎ খাঁ, পণ্ডিত রবিশংকর প্রমুখ কথাকলি : কথাকলি একটি দক্ষিণ ভারতের শাস্ত্রীয় নৃত্য পদ্ধতি এই নাচে যে-অঙ্গসজ্জার ব্যবহার করা হয়, তা দ্রাবিড় সভ্যতাজাত লােকনৃত্যধর্মিতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই নৃত্যে মুখের সজ্জায় খুব জোর দেওয়া হয় চরিত্র অনুযায়ী নানা রং দিয়ে মুখে প্রায় মুখােশের মতাে মেক-আপ করা হয় ক্রু, চোখ ঠোট গাঢ় করে আঁকা হয় নানা রঙের দাড়িও ব্যবহার করা হয় নারী চরিত্রের মাথায় একখণ্ড কাপড় থাকে এই নাচ মূলত কেরলের ধ্রুপদি নৃত্যশৈলী

সিন্দুমুনি : সিধুমুনি একজন পৌরাণিক ঋষি তাঁর পিতা-মাতা দুজনেই অন্ধ ছিলেন তিনি সবসময় পিতা-মাতার সেবা করতেন একদিন জঙ্গলে গাছের নীচে বাবা-মাকে বসিয়ে তিনি তাদের জন্য নদীতে জল আনতে যান এইসময় অযােধ্যার রাজা দশরথ ওই বনে শিকার করছিলেন সিন্ধুমুনির জল ভরার শব্দকে রাজা হরিণের জলপানের শব্দ মনে করেন এবং তৎক্ষণাৎ শব্দভেদী বাণ নিক্ষেপ করেন এই শব্দভেদী বাণের আঘাতে সিন্ধুমুনির মৃত্যু হয় দশরথ অন্ধমুনিকে খবর দিলে তারাও সঙ্গে সঙ্গে পুত্রশােকে দেহত্যাগ করেন রবীন্দ্র নৃত্যনাট্যকালমৃগয়াতে সিন্ধুমনির কথা বলা আছে

পণ্য:পণ্যশব্দটির অর্থ-বিক্রয়যােগ্য দ্রব্যাদি বর্তমান যুগে পণ্যকথাটি বহুল প্রচারিত ভিন্নার্থে এর তাৎপর্যপূর্ণ প্রয়ােগ দেখা যায় শিল্প-বিপ্লবােত্তর কালে পণ্যদ্রব্যের প্রাচুর্য বেড়েছে বিজ্ঞানের সর্ববিস্তারী প্রসারের ফলে বাজারে দিন দিন পণ্যসামগ্রীর চাহিদা বাড়ছে মানুষের লােভ আজ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখন মানুষকেও মুনাফা অর্জনের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে


৭. নীচের শব্দগুলির ধ্বনিতাত্ত্বিক বিচার করাে :

i. জ্বলে - জ্বলিয়া > জ্বইল্যা > জ্বলেঅভিশ্রুতি

ii. পরবাসী - প্রবাসী > পরবাসী মধ্য স্বরাগম/ স্বরভক্তি/বিপ্রকর্ষ

iii. চলে - চলিয়া> চইল্যা > চলেঅভিশ্রুতি

iv. তাঁবু - তম্বু > তাঁবু নাসিক্যীভবন

 

৮. ব্যাসবাক্য-সহ সমাস নির্ণয় করাে :

i. নিটোল - নেই টোল যারনবহুব্রীহি

ii. বনময়ূর - বনে থাকে যে ময়ূর- মধ্যপদলােপী কর্মধারয়

iii. সিন্ধুমুনি - সিন্ধু নামধারী মুনি- মধ্যপদলােপী কর্মধারয়

iv. নিজবাসভূমি - নিজের বাসভূমি- সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস

v. সেতার - সে(তিন) তার যারসংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাস

 

৯. নীচের শব্দগুলি কীভাবে গঠিত হয়েছে দেখাও :

i. সােনালি - সােনা + আলি

ii. আহ্বান - -ঘে + অন

iii. বন্য - বন +

iv. বসতি - বস + অতি

v. পরবাসী - পরবাস +

 

১০. নির্দেশ অনুসারে বাক্য পরিবর্তন করাে :

 

১০. চুপি চুপি আসে নদীর কিনারে, জল খায় (সরল বাক্যে)

উত্তর - চুপি চুপি নদীর কিনারে এসে জল খায়

 

১০. নিটোল টিলার পলাশের ঝােপে দেখেছি (জটিল বাক্যে)

উত্তর - যেখানে নিটোল টিলার পাশে পলাশের ঝােপ, সেখানে দেখেছি

 

১০. চিতা চলে গেল লুদ্ধ হিংস্র ছন্দে বন্য প্রাণের কথাকলি বেগ জাগিয়ে (যৌগিক বাক্যে)

উত্তর - চিতা চলে গেল লুদ্ধ হিংস্র ছন্দে এবং সেই ছন্দে বন্য প্রাণের কথাকলি বেগ জেগে উঠল

 

১০. কেন এই দেশে মানুষ মৌন অসহায় ? (না-সূচক বাক্যে)

উত্তর - এই দেশে মানুষ কেন সরব সহায় নয় ?

 

১১ যে-কোনাে দুটি স্তবকের মধ্যে বিশেষ্য বিশেষণ-এর ব্যবহার কবি কীভাবে করেছেন, দৃষ্টান্তসহ আলােচনা করাে :

উত্তর - আপাতভাবে আমরা প্রথম স্তবকে পাওয়া বিশেষ্য বিশেষণগুলি খুঁজে নিই প্রথম পঙক্তির বিশেষ্যবনপথ বনের বিস্তার বােঝাতেদুইবিশেষণ এবং পথ’-এর ঔজ্জল্য বােঝাতেঝিকিমিকিবিশেষণ ব্যবহার করা হয়েছে দ্বিতীয় পঙক্তিতে পথের চলার প্রকৃতি বােঝাতে এঁকে বেঁকেবিশেষণ ব্যবহৃত হয়েছে তৃতীয় পঙক্তির বিশেষ্যচোখ’, তা মাঝে মাঝে জ্বলছে বলেথেকে থেকে বিশেষণ ব্যবহৃত হয়েছে আরখরগােশবিশেষ্যের কোমলতা বা পেলবতা বােঝাতেকচি কচিবিশেষণ ব্যবহৃত হয়েছে (বাকি স্তবকের ব্যাখ্যার জন্য ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষক/ শিক্ষিকার সাহায্য নেবে)


<< Read More >>

 

Class 8 All Subject Solution >>

Click Here

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post