হওয়ার গান (Haoyar Gan) অনুশীলনী প্রশ্ন উত্তর | Class 8 | WBBSE
হওয়ারগান
নামকরণ
কবি বুদ্ধদেব বসু কবিতাটির নামকরণকরেছেন ‘ হাওয়ার গান’। কবিতাটিরকাহিনি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কবিতার সমস্ত অংশ জুড়েআছে হাওয়ার কথা। তাদেরকোনাে বাড়ি নেই, তাইতারা বাইরে কেঁদে মরে। তারাবাড়ির সন্ধান করেছে সর্বত্র, কিন্তু কোথাও তার খোঁজমেলেনি। তাদেরচোখে অন্যান্যদের গৃহস্থালির ছবি ধরা পড়েছে, কিন্তু তাদের থাকার কোনােনির্দিষ্ট বাড়ি নেই।তাই তাদের কোনাে বিশ্রামওনেই। তারাচিরকাল উদ্দাম ও উত্তাল। হাওয়াদেরএই দুরবস্থার কথা হাওয়াই নিজেরমুখে শুনিয়ে গিয়েছে। কবিতাটিরপ্রধান চরিত্র এখানে হাওয়া। তারাতাদেরই কথা বলে গিয়েছে। এইহাওয়ার মধ্য দিয়ে ব্যক্তিমানুষের আর্তনাদ পরিস্ফুট হয়েছে। সুতরাং, কবিতাটির নাম ‘হাওয়ার গান’ রাখা যথার্থ ও সার্থকযেহেতু কবির অন্তঃকরণ বাস্তবতাকেপ্রাধান্য দেয় বেশি, তাইআলােচ্য কবিতায় হাওয়াদের অবিরাম ছুটে চলারআর্তনাদের মধ্যে যে প্রকৃপকক্ষে, মানুষের জীবনপথে ছুটে চলা ওব্যর্থতার কথাই প্রকাশিত হয়েছে, তা সহজেই অনুমেয় হয়েছে।
১.১ বুদ্ধদেববসুরচিতদুটিকাব্যগ্রন্থেরনামলেখাে।
উত্তর - বুদ্ধদেববসু রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থেরনাম ‘বন্দীর বন্দনা’ ও‘কঙ্কাবতী।
১.২ তিনিকোনপত্রিকাসম্পাদনাকরতেন?
উত্তর - বুদ্ধদেব বসু কবিতা পত্রিকাসম্পাদনা করতেন।
২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি/দুটি বাক্যে উত্তর দাও :
২.১ দুর্বারইচ্ছায়হাওয়াকীকীছুঁয়েগেছে?
উত্তর - দুর্বার ইচ্ছায় হাওয়া পৃথিবীর সমস্তজল ও তীরকে ছুঁয়েগিয়েছে।
২.২ তারকথাহাওয়াকোথায়শুধায়?
উত্তর - তার কথা হাওয়াজলে, স্থলে, পাহাড়ে, নগরে-বন্দরে, অরণ্যে, প্রান্তরে, পার্কের বেঞ্চে, ঝরাপাতায়, দেয়ালে, শার্সিতে, চিমনির নিস্বনে এবংকাননের ক্রন্দনে শুধায়।
২.৩ মাস্তুলেদীপজ্বলেকেন?
উত্তর - জাহাজ যেহেতু অন্ধকারেরমধ্যে দিয়ে চলাচল করে, তাই অন্যদের কাছে তার উপস্থিতিরকথা জানাতে মাস্তুলে দীপজ্বালিয়ে রাখা হয়।
২.৪ পার্কেরবেঞ্চিতেআরশার্সিতেকাদেরউপস্থিতিরচিহ্নরয়েছে?
উত্তর - পার্কের বেঞ্চিতে ঝরা পাতার এবংশার্সিতে দেয়ালের পঞ্জরের উপস্থিতির চিহ্ন রয়েছে।আসলে এর মধ্যে বাতাসেরউপস্থিতি আছে।
২.৫ নিশ্বাসকেমনকরেবয়েগেছে?
উত্তর - নিশ্বাস বুক-চাপা কান্নায়উত্তাল ও অস্থিরভাবে বয়েগিয়েছে।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর সংক্ষেপে লেখাে :
৩.১ হাওয়ারচোখেঘরেরযেছবিপাওয়াযায়, কবিতাঅনুসরণেলেখাে।
উত্তর - বুদ্ধদেব বসুর ‘হাওয়ার গানকবিতায় হাওয়ার চোখে ঘরের একটিসুন্দর মনােরম ছবি পাওয়াযায়। সেখানেদোলনায় একটি সুন্দর শিশুঘুমিয়ে আছে। তারকোনাে ভাবনা নেই।নিস্তব্ধ ঘরে স্বপ্নের মতােমায়াবি আলাে জ্বলছে।আবছা আলােয় দেখা যাচ্ছে। কার্পেটেরওপর একটি কুকুর তন্দ্রাচ্ছন্ন। এযেন স্বপ্নের এক সুখী গৃহকোণ। কিন্তুহাওয়ার শান্তি নেই।নিজে দু-দন্ড বিশ্রামনিতে পারে এমন কোনােঘর নিজের জন্য সেখুঁজে পায়নি।
৩.২ সমুদ্রেরজাহাজেরচলারবর্ণনাদাও।
উত্তর - সমুদ্রের জাহাজ চলে নির্দিষ্টনিয়মনীতি মেনে। নিজেদেরইচ্ছামতাে জাহাজের সারেঙ সাহেবরা জাহাজচালাতে পারে না।তাদের প্রত্যেকের জন্য চলাচলের নির্দিষ্টপথ আছে। সেগুলিকেঅবলম্বন করেই তাদের এগােতেহয়। জাহাজেদিকনির্ণায়ক যন্ত্রও থাকে, যার দ্বারাতারা বুঝতে পারেন কোন্দিকে এগিয়ে চলেছেন।রাত্রিতে জাহাজের মাস্তুলে আলাে জ্বালিয়ে রাখাহয়। অন্যরাযাতে বুঝতে পারে যে, জাহাজ চলাচল করছে।এভাবেই সমুদ্রে জাহাজ চলে।
৩.৩ পৃথিবীরকোন্কোন্অংশেহাওয়াঘুরেবেড়ায়লেখাে।
উত্তর - পৃথিবীর সমস্ত জলাশয়, সমুদ্রতীর, পাহাড়, গম্ভীর বন্দর, শহরেরজনবহুল অঞলবনজঙ্গল, খােলা মাঠ বাতেপান্তর সর্বত্রই হাওয়ারা ঘুড়ে বেড়ায়।কারণ, তাদের থাকবার নির্দিষ্টকোনাে ঘর নেই।তারা সর্বত্র বিরাজমান। তারাপার্কের বেঞ্চিতে কখনাে বা চিমনিরশব্দে অথবা বাগানের ক্রন্দনেসব জায়গাতে ঘুরে বেড়ায়।তাদের ঘুরে বেড়ানাের মধ্যেকোনাে বাছবিচার নেই। তারাচিরকাল উত্তাল ও অস্থির।
৪. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর বিশদে লেখাে :
৪.১ হাওয়াদেরকীনেই? হাওয়ারাকোথায়, কীভাবেতারখোঁজকরে?
উত্তর - বুদ্ধদেব বসুর লেখা ‘হাওয়ারগান কবিতায় হাওয়াদের বাড়ি নেই অর্থাৎ, আশ্রয় নেই। » হাওয়াদেরবাড়ি না-থাকায় তারাপৃথিবীর সর্বত্র জলে-স্থলে, পাহাড়ে, বনজঙ্গলে বাড়ির খোঁজ করেবেড়ায়। কখনওশহরের ঘন ভিড়ে, কখনওবা জনহীন প্রান্তরে সর্বত্রইতারা বাড়ির খোঁজ করে। পার্কেরবেঞ্চিতে পড়ে থাকা ঝরাপাতা, জানলায় কেঁপে ওঠা দেয়ালেরপাঁজরা, চিমনির শব্দে বাকাননের কান্নায় সর্বত্রই হাওয়ারা তাদের বাড়ি কোথায়তা জিজ্ঞাস করেছে, কিন্তু কোনােউত্তর তারা পায়নি।কোথায় গেলে তারা তাদেরবাড়ির সন্ধান পাবে তাওতারা জানে না।তাই তারা চিরকাল বাইরেবাইরে ঘুরে বেড়ায় আরবাড়ির খোঁজ করে।
৪.২. “চিরকালউত্তালতাইরে”-কেচিরকালউত্তাল? কেনসেচিরকালউত্তালহয়েরইল?
উত্তর - বুদ্ধদেব বসুর ‘হাওয়ার গানকবিতায় প্রশ্নোক্ত উক্তি অনুসারে হাওয়ারাচিরকাল উত্তাল।
হাওয়াদেরকোনাে বাড়ি নেই।ফলে তাদের কোনােখানে স্থিতিনেই। তারাসর্বত্র ঘুরে বেড়ায়।তারা পৃথিবীর জল-স্থল, পাহাড়, বনজঙ্গল, নগরের কোলাহলময় পরিবেশ, শূন্য মাঠ সব জায়গাতেতাদের বাড়ির খোঁজ করেছে। কিন্তু, কোথাও তারা তাদের বাড়িরসন্ধান পায়নি। তাদেরবিশ্রাম নেওয়ার মতাে কোনাে জায়গানেই। তারাচিমনির নিস্বনে এবং কাননের ক্রন্দনেতাদের বাড়ির খোঁজ করেছে, কিন্তু সন্ধান তারা পায়নি। তাইতারা অবিরাম উন্মাদের মতােউত্তাল হয়ে ছুটে বেড়ায়। তাদেরজীবনে কোনাে স্থিতি, বিশ্রামনা-থাকায় তারা চিরকালউত্তাল।
৪.৩ কবিতাটিরনাম‘হাওয়ারগান’ দেওয়ারক্ষেত্রেকীকীযুক্তিকবিরমনেএসেছিলবলেতােমারমনেহয়?
উত্তর - কবিবুদ্ধদেব বসু কবিতাটির নামরেখেছেন ‘হাওয়ার গান’। এইনামকরণ করার পিছনে যে-সমস্ত যুক্তিকে তিনিমনে স্থান দিয়েছিলেন সেগুলিহল—
প্রথমত : কবিতাটিতেহাওয়ারা তাদের নিজেদের কথানিজের মুখেই বলেছে।
দ্বিতীয়ত : সমস্তকবিতাটিতে হাওয়াদের কথাই বলা আছে। তাদেরবাড়ি নেই। তারাতাদের বাড়ির খোঁজ করতেবিভিন্ন জায়গাতে বৃথাই ঘুরে বেড়িয়েছে। কোথায়কোথায় গেছে বা কীদৃশ্য তাদের চোখে পড়েছেসমস্তটাই তারা নিজেরাই বলেগিয়েছে।
তৃতীয়ত : হাওয়াদেরযে বাড়ি নেই, সেইকথাটিকে তারা কবিতার মধ্যেদু-বার বলেছে, ঠিকযেন গানের মতাে করে। গানেযেমন কলির পুনরাবৃত্তি করাহয়, তেমনিভাবে এখানেও ‘বাড়ি নেই’ শব্দদ্বয়েরপুনরাবৃত্তি। করাহয়েছে। তাইকবি কবিতাটির নাম ‘হাওয়ার গানরেখেছেন বলে আমার মনেহয়।
৫. নীচের পঙক্তিগুলির মধ্যে ক্রিয়াকে চিহ্নিত করাে এবং অন্যান্য শব্দগুলির সঙ্গে তার সম্পর্ক দেখাও :
৫.১ ঘরে ঘরেজ্বলে যায় স্বপ্নের মৃদুমােম।
উত্তর - জ্বলে যায় = ক্রিয়াপদ। ‘ঘরেঘরে’ শব্দদ্বয়ের সঙ্গে তার ‘অধিকরণকারকগত’ সম্পর্ক এবং মৃদু মােম’ শব্দদ্বয়ের সঙ্গে তার ‘কর্মকারকগতসম্পর্ক।
৫.২ আঁধারে জাহাজচলে।
উত্তর - চলে = ক্রিয়াপদ।‘আঁধারে’ শব্দটির সঙ্গে ‘অধিকরণ কারকগতসম্পর্ক এবং ‘জাহাজ’ শব্দটিরসঙ্গে ‘কর্তৃকারকগত সম্পর্ক।
৫.৩ শার্সিতে কেঁপে-ওঠা দেয়ালের পঞ্জর।
উত্তর - কেঁপে ওঠা = ক্রিয়াপদ। ‘শার্সিতে’ শব্দটির সঙ্গে ‘অধিকরণ কারকগত’ সম্পর্ক। ‘পঞ্জর' শব্দটির সঙ্গে কর্তৃকারকগত সম্পর্ক।
৫.৪ অকূল অন্ধকারেফেটে পড়ে গর্জন।
উত্তর - ফেটে পড়ে = ক্রিয়াপদ। ‘অকূলঅন্ধকারে’ শব্দদ্বয়ের সঙ্গে ক্রিয়ার ‘অধিকরণকারকগত সম্পর্ক। ‘গর্জন’ শব্দটির সঙ্গে ক্রিয়ার ‘কর্তৃকারকগতসম্পর্ক।
৬ 'বন্দর, বন্দরনগরেরঘনভিড়'—পঙক্তিটিরপ্রথমেএকইশব্দদুবারব্যবহারকরাহয়েছে।এইরকমআরওচারটিপঙক্তিউদ্ধৃতকরাে।কবিতারক্ষেত্রেএইধরনেরশব্দব্যবহারেরকৌশলঅবলম্বনেরকারণকী?
উত্তর - কবিতারমধ্যে একই শব্দ দুবারব্যবহৃত হয়েছে এমন চারটিপঙক্তি হল-----
১. ছুঁয়ে গেছি বার-বার দুর্বার ইচ্ছায়।
২. ঘরে ঘরে জ্বলে যায় স্বপ্নের মৃদু মােম।
৩. কেঁদে কেঁদে মরি শুধু ভাইরে।
৪. খুঁজে খুঁজে ঘুরে ফিরি বাইরে।
কবিতারক্ষেত্রে এই ধরনের শব্দব্যবহারের কৌশল অবলম্বনের কারণহল—একই শব্দ পরপর দু-বার ব্যবহারকরে অর্থগত বৈচিত্র্য সম্পাদনকরা যায়। এছাড়া কবিতার পঙক্তিকে শ্রুতিমধুরকরা যায়। অনেকসময় একই শব্দ দুবারবসিয়ে অলংকার সৃষ্টির মাধ্যমেকবিতায় গতি-সৌন্দর্য বৃদ্ধিএবং শুতিমধুর ধ্বনির ঝংকার সৃষ্টিকরা হয়।
৭. ধ্বনি পরিবর্তনের দিক থেকে শূন্য অংশগুলি পূর্ণ করাে :
উত্তর - চন্দ্র > চন্ন> চাঁদ
উত্তর - রাত্রি > রাত্তির
উত্তর - পঞ্জর > পাঁজর
৮. “হাওয়ার গান কবিতায় ব্যবহৃত পাঁচটি ইংরেজি শব্দ লেখাে। এই শব্দগুলির বদলে দেশি/বাংলা শব্দ ব্যবহার করে পঙক্তিগুলি আবার লেখাে।
উত্তর - ‘হাওয়ার গান কবিতায় ব্যবহৃতপাঁচটি ইংরেজি শব্দ হলপার্ক; চিমনি; কার্পেট; সিনেমা; ডেক।
i. পার্ক= (উদ্যান)—উদ্যানের বেঞ্চিতে ঝরা পাতা ঝঝর।
ii. চিমনি= (ধু নালি)—ধূম্র নালিরনিস্বনে, কাননের ক্রন্দনে।
iii. কার্পেট= (গালিচা)-আবছায়া গালিচা কুকুরের তন্দ্রায়।
iv. সিনেমা= (চলচ্চিত্র)—যাত্রীরা চলচ্চিত্রে কেউ নাচে, গানগায়।
v. ডেক= (জাহাজের পাটাতন)—অবশেষে থামে সব, জাহাজের পাটাতন হয় নির্জন।
<< Read More >>
Class 8 All Subject Solution >>