পাড়াগাঁর দু-পহর ভালােবাসি (Paragar Du Pohor Bhalobasi) অনুশীলনী প্রশ্ন উত্তর | Class 8 | WBBSE

পাড়াগাঁর দু-পহর ভালােবাসি (Paragar Du Pohor Bhalobasi) অনুশীলনী প্রশ্ন উত্তর | Class 8 | WBBSE


পাড়াগাঁর দু-পহর ভালােবাসি


নামকরণ

সাহিত্যে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যার হাত ধরেই মূল বিষয়ের আস্বাদন করা যায় কবি জীবনানন্দ দাশ কবিতাটির নামকরণ করেছেন- ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালােবাসি বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কবিতায় পাড়াগাঁয়ের দুপুরবেলার এক বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে পাড়াগাঁয়ের দুপুরের রৌদ্রতপ্ত পরিবেশের বেশ কিছু ছবি যেমন- শুকনাে পাতা; শালিক পাখির কণ্ঠস্বর; জলসিড়ি নদীর পাশে ছন্দহীন বুনাে চালতার ডাল ঝুলে পড়া; মালিকহীন জীর্ণ ফোঁপরা নৌকার জলসিড়ি নদীতে উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ভাসতে থাকা এই সমস্ত চিত্র কবির চোখে ভেসে উঠেছে দুপুরবেলার এই রৌদ্র-তপ্ত পরিবেশ কবির মনে যে স্বপ্নের আবেশ সৃষ্টি করে, তাতে কোন্ গল্প বা কোন্ কাহিনি বা কোন স্বপ্ন বাসা বাঁধে তা কেউই বলতে পারে না ! বলতে পারে শুধু প্রান্তর আর প্রান্তরের শঙ্খচিল যে প্রকৃতিকে কবি ভালােবাসেন তার সব কিছুর মধ্যে দুপুরের প্রকৃতিই সিংহভাগ জুড়ে আছে তাই কবিতাটির নামপাড়াগাঁর দুপহর ভালােবাসিঅবশ্যই সংগতিপূর্ণ সার্থক হয়েছে

 

. জীবনানন্দ দাশের লেখা দুটি কবিতার বইয়ের নাম লেখাে

উত্তর -  জীবনানন্দ দাশের লেখা দুটি কবিতার বইয়ের নাম হল— ‘রূপসী বাংলাবনলতা সেন

 

. তাঁর লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী ?

উত্তর -  তাঁর লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম হলঝরাপালক

 

২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি/দুটি বাক্যে উত্তর দাও :


.দু-পহরশব্দের অর্থ কী ?

উত্তর -  দু-পহরশব্দের অর্থদ্বি-প্রহরঅর্থাৎ, দুপুরবেলা

 

.কেবল প্রান্তর জানে তাহা”—‘প্রান্তরকী জানে ?

উত্তর -  দুপুরের রৌদ্রে কবির মনে কোন গল্প বা কী কাহিনি অথবা কী স্বপ্ন ঘর বেঁধেছে, তা কেবল প্রান্তর জানে

 

.তাহাদের কাছে যেন জনমে নয়যেন ঢের যুগ ধরে কথা শিখিয়াছে হৃদয়”—কাদের কথা এখানে বলা হয়েছে ?

উত্তর -   এখানে প্রান্তর আর প্রান্তরের শঙ্খচিলের কথা বলা হয়েছে

 

.জলসিড়িটির পাশে ঘাসে ...”—কী দেখা যায় ?

উত্তর -  জলসিড়িটির পাশে ঘাসে বুনাে চালতার নুয়ে পড়া ডালগুলি দেখা যায়

 

.জলে তার মুখখানা দেখা যায়...”—জলে কার মুখ দেখা যায় ?

উত্তর -  জলে নুয়ে পড়া বুনাে চালতা গাছের মুখখানা দেখা যায়

 

. ডিঙিও ভাসিছে কার জলে ...”—ডিঙিটি কেমন ?

উত্তর -  ডিঙিটি জীর্ণ এবং ফোঁপরা অর্থাৎ, ভাঙাচোরা

 

. ডিঙিটি কোথায় বাঁধা রয়েছে ?

উত্তর -  ডিঙিটি হিজল গাছে বাঁধা রয়েছে


৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর সংক্ষেপে লেখাে :

 

. পাড়াগাঁয়ের দ্বিপ্রহরকে কবি ভালােবাসেন কেন ?

উত্তর -  পাড়াগাঁয়ের দ্বি-প্রহরকে কবি ভালােবাসেন কারণ, সেখানকার দুপুরবেলার রৌদ্রে যেন স্বপ্নের গন্ধ লেগে থাকে সেই স্বপ্নের আবেশে কবির মনে কোন্ গল্প, কোন কাহিনি যে বাসা বাঁধে, তা কেউ বলতে পারে না কথা বলতে পারে শুধু মাঠ এবং মাঠের শঙ্খচিল কারণ, কবির হৃদয় তাদের কাছে বহু যুগ থেকে কথা শিখেছে দুপুরে জলসিড়ি নদীর পাশে বুনাে চালতার শাখাগুলি নুয়ে পড়ে, জলে তাদের মুখ দেখা যায় জলে মালিকহীন ডিঙি নৌকাকে ভাসতে দেখা যায় পাড়াগাঁর দুপুরবেলা অপরূপ রূপে বিষন্নতায় কবিমনে মাধুর্যময় স্বপ্নাবেশ দিয়ে যায় কবির চোখে মায়া-কাজল এঁকে দেয় তাই সব মিলিয়ে পাড়াগাঁয়ের দুপুরবেলার প্রকৃতিকে কবি খুব ভালােবাসেন

 

.স্বপ্নে যে-বেদনা আছে”—কবির স্বপ্নে কেন বেদনার অনুভূতি ?

উত্তর -   উদ্ধৃতাংশটি জীবনানন্দ দাশের লেখারূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থেরপাড়াগাঁর দু-পহর ভালােবাসিকবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে

কবির স্বপ্নে বেদনার উজ্জ্বল উপস্থিতি লক্ষ করা যায় দ্বি-প্রহরে পাড়াগাঁর প্রখর রৌদ্র কবির মনে এক স্বপ্নের আবেশ সৃষ্টি করে কবির স্বপ্নে ভেসে ওঠে গ্রামের এক করুণ রূপচিত্র রৌদ্রের তাপে শুকিয়ে যাওয়া পাতা, রৌদ্রে ক্লান্ত শালিক পাখির করুণ কণ্ঠস্বর এবং নকশা আঁকা পাড়যুক্ত শাড়ি পরিহিত মেয়েটি প্রখর রৌদ্রে গাছের পাতার হলুদ হয়ে যাওয়ার মতাে ক্লান্তভাবে ধীরে ধীরে সরে যায় জলসিড়ি নদীতে বুনাে চালতা গাছের ডাল যেন নুয়ে পড়ে ধরনের প্রতিটি চিত্রের মধ্যে একটা বিষণ্ণতা এবং বেদনাবােধ লক্ষ করা যায় কিন্তু, বর্তমানে নাগরিক পরিবেশে পল্লিগ্রামের বাস্তব ছবি আর দেখা যায় না কিন্তু, কবির স্মৃতিতে সেই দৃশ্যাবলি আজও অমলিন আর সেগুলিকেই তিনি পরম আনন্দে বেদনা-সহ রােমন্থন করছেন বলেই কবির স্বপ্নে তাই বেদনার অনুভূতি লক্ষ করা যায়

 

. প্রকৃতির কেমন ছবি কবিতাটিতে ফুটে উঠেছে তা আলােচনা করাে

উত্তর -  আলােচ্য কবিতাটিতে বিষন্ন তথা বেদনাময় প্রকৃতির ছবি ফুটে উঠেছে রৌদ্রের প্রভাবে গাছের শুকনাে পাতা, শালিক পাখির ক্লান্ত স্বর, ভাঙা মঠ এবং জলসিড়ি নদীর পাশে ছন্দহীন বুনাে চালতা গাছের নুয়ে পড়াসবই এক বিষন্ন প্রকৃতির ছবিকে তুলে ধরে মালিকহীন নৌকা ভাসছে জলে, তার মালিক হয়ত বা আর কোনােদিন আসবে না সে তার জীর্ণ, শীর্ণ, ফোঁপরা নৌকাটিকে হিজল গাছে বেঁধে রেখে গিয়েছে দুপুরের এই বিষ প্রকৃতির ছবিই কবিতাটিতে ফুটে উঠেছে

 

.কেঁদে কেঁদে ভাসিতেছে আকাশের তলে”—কবির এমন মনে হওয়ার কারণ কী বলে তােমার মনে হয় ?

উত্তর -  উদ্ধৃতাংশটি জীবনানন্দ দাশের লেখারূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থেরপাড়াগাঁর দু-পহর ভালােবাসিকবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে

পাড়াগাঁয়ের দ্বিপ্রহরে প্রকৃতির যে রূপচিত্র কবির স্বপ্নের চোখে ধরা পড়েছে, তা এক বেদনাময় বিষন্ন প্রকৃতির চিত্র যদিও সেই বিষন্ন প্রকৃতির চিত্রকে কবি ভালােবাসেন রৌদ্রের তাপে প্রাণহীন শুকনাে পাতা, নুয়ে পড়া ছন্দহীন বুনাে চালতা গাছের ডাল এই সব কিছুর মধ্যে যেন একটা বেদনা প্রকাশ পায় জলসিড়ি নদীতে জীর্ণ-ফোঁপরা একটি নৌকাকে হিজল গাছে বেঁধে রেখেছে কেউ কোথাও সেই নৌকার মালিকের দেখা নেই মালিকহীন নৌকাটি ভাসছে নদীর জলে দুপুরের রৌদ্রে যেন বেদনার রকমই গন্ধ মিশে আছে তাই, আকাশের নীচে সেই বিষন্ন প্রকৃতি যেন কেঁদে কেঁদে বেড়াচ্ছে


৪. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখাে :

 

. পাড়াগাঁর দু-পহর ভালােবাসি... শীর্ষক কবিতাটিরূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থের কত সংখ্যক কবিতা ? ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালােবাসিকবিতায় কবি  জীবনানন্দের কবি-মানসিকতার পরিচয় কীভাবে ধরা দিয়েছে, তা বুঝিয়ে দাও 

উত্তর -  পাড়াগাঁর দু-পহর ভালােবাসি’-শীর্ষক কবিতাটিরূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থের ২৫ সংখ্যক কবিতা

নাগরিক জীবনের প্রতি ক্লান্তি বিষন্নতা এবং গ্রাম জীবনের প্রতি আন্তরিকতা আবেগময়তারূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতায় বারবার ফুটে উঠেছে রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থের অন্যান্য কবিতার মতােই পাড়াগাঁর দু-প্রহর ভালােবাসি' কবিতাটিতেও কবি জীবনানন্দের সহানুভূতিশীল প্রকৃতিপ্রীতিসুলভ মানসিকতা, বিস্ময় এবং প্রকৃতির প্রতি রূপমুগ্ধতার পরিচয় ধরা পড়েছে পাড়াগাঁয়ের রৌদ্রতপ্ত পরিবেশ কবির মনে স্বপ্নের আবেশ সৃষ্টি করে কবি বিষন্ন প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করেন স্বপ্নের আবেশে কবির মনে কোন্ গল্প বা কোন্ কাহিনি বাসা বেঁধেছে, তা কেউ জানে না জানে শুধু প্রান্তর আর প্রান্তরের শঙ্খচিল কারণ, তারা অনেক যুগ ধরে কবিকে কথা শিখিয়েছে প্রকৃতির এই বিষন্ন পরিবেশ কবির স্বপ্নের চোখে আসাযাওয়া করে কবি তাদের দুঃখে সমব্যথী হন কবির সেই সহানুভূতিই কবিতাটিতে প্রকাশিত হয়েছে

 

. কবিতাটির গঠন-প্রকৌশল আলােচনা করাে

উত্তর -   জীবনানন্দ দাশের কবিতার গঠন কৌশলের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলগদ্যধর্মী শব্দের ব্যবহার অতি পরিচিত গ্রাম্য, দেশজ শব্দ নিয়ে তিনি কবিতার চরণ সাজিয়েছেন কবিতাটির শব্দবিন্যাস কখনও বক্তব্য-বিষয়কে চমক সৃষ্টির জন্য অতিক্রম করে যায়নি জীবনানন্দ প্রধানত তানপ্রধান ছন্দের কবি তাই এই কবিতাটিকেও তিনি + + মাত্রা সংকেতে তানপ্রধান ছন্দে নির্মাণ করেছেন কবিতাটি চিত্রকল্পেও অনবদ্য যেমন— “নকশাপেড়ে শাড়িখানা মেয়েটির রৌদ্রের ভিতর/হলুদ পাতার মতাে সরে যায়কিংবাজলসিড়িটির পাশে আসে/শাখাগুলাে নুয়ে আছে বহুদিন ছন্দহীন বুনাে চালতার কবিতা-পাঠকালে জলসিড়ি নদীর ছবি-সহ বিষন্ন প্রকৃতির অন্যান্য ছবিও মনের মধ্যে স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে এছাড়াও কবিতাটির গঠন-কৌশলের আরও একটি দিক হল, কবিতার মধ্যে সিনেখিসিয়া বা ইন্দ্রিয় বিপর্যয় অর্থাৎ, এক ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি অপর ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুভূত হওয়া যেমন- “রৌদ্রে যে গন্ধ লেগে আছে স্বপনেরকিংবারৌদ্রে যেন ভিজে বেদনার গন্ধ লেগে আছে

 

.রৌদ্রে যেন ভিজে বেদনার গন্ধ লেগে আছেকবিতায় কীভাবে এই অপরূপ বিষণ্ণতার স্পর্শ এসে লেগেছে, তা যথাযথ পঙক্তি উদ্ধৃত করে আলােচনা করাে  

উত্তর -  পাড়াগাঁর দু-পহর ভালােবাসিকবিতায় প্রকৃতির অপরূপ বিষন্নতার স্পর্শ এসে লেগেছেশুষ্ক পাতা-শালিকের স্বর,/ভাঙা মঠ-নকশাপেড়ে শাড়িখানা মেয়েটির রৌদ্রের ভিতর/হলুদ পাতার মতাে সরে যায়,”—এই ধরনের পঙক্তিগুলিতে বিষন্ন প্রকৃতির স্পর্শ ভীষণভাবে লেগেছে রৌদ্রের তাপে গাছের পাতা শুকিয়ে গিয়েছে এবং শালিক পাখির কণ্ঠস্বর ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ছাড়া, রৌদ্রের প্রখরতায় গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাওয়ার মতাে নকশা পাড়যুক্ত শাড়ি পরিহিত মেয়েটিও হলুদ বর্ণ ধারণ করেছেডিঙিও ভাসিছে কার জলে,/ মালিক কোথাও নাই, কোনােদিন এই দিকে আসিবে না আর,/ঝাঁঝরা-ফোঁপরা, আহা, ডিঙিটিরে বেঁধে রেখে গিয়েছে হিজলে:” উপরােক্ত পঙক্তিগুলির মধ্যে প্রকৃতির বিষন্নতার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে


. নীচের শব্দগুলির ধ্বনিতাত্ত্বিক বিচার করাে :

i. পাড়াগ্রাম > পাড়াগাঁ (নাসিক্যীভবন)

ii. দ্বি-প্রহর> দু-পহর (ব্যঞ্জনলােপ)

iii. স্বপ্ন > স্বপন (স্বরভক্তি)

iv. জন্ম > জনম (স্বরভক্তি)

v. ভিজিয়া > ভিইজ্যা > ভিজে (অভিশ্রুতি বা স্বরসংগতি)

 

৬. নীচের শব্দগুলির ব্যাসবাক্য-সহ সমাসের নাম লেখাে :

i. শঙ্খচিল = শঙ্খ (সাদা) রঙের চিল (মধ্যপদলােপী কর্মধারয় সমাস)

ii. নকশাপেড়ে = নকশা আঁকা পাড় বিশিষ্ট (মধ্যপদলােপী কর্মধারয় সমাস)

iii. ছন্দহীন = ছন্দ দ্বারা হীন (করণ তৎপুরুষ সমাস)

 

৭. নীচের বাক্যগুলিতে ক্রিয়ার কাল নির্দেশ করাে :

. পাড়াগাঁর দু-পহর ভালােবাসি -

উত্তর -  সাধারণ বর্তমান কাল

 

. রৌদ্রে যেন গন্ধ লেগে আছে স্বপনের-

উত্তর -  সাধারণ বর্তমান কাল

 

. শাখাগুলাে নুয়ে আছে বহুদিন ছন্দহীন বুনাে চালতার-

উত্তর -  সাধারণ বর্তমান কাল

 

. ডিঙিও ভাসিছে কার জলে,-

উত্তর -  ঘটমান বর্তমান কাল

 

. কোনােদিন এইদিকে আসিব না আর,-

উত্তর -  সাধারণ ভবিষ্যৎ কাল


<< Read More >>

 

Class 8 All Subject Solution >>

Click Here

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post